ঢাকা ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে ভবন ধসবে ৭২ হাজার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:০৩:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৬
  • ২৭১ বার

সাতটি টেকটনিক বা গঠনমূলক প্লেট দিয়ে তৈরি আমাদের ভূপৃষ্ঠ৷ যেসব স্থানে এসব প্লেটের মিলন ঘটেছে, সেসব স্থান সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত৷ নেপালে ভূমিকম্পের কারণ হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্লেটের সঙ্গে ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষ৷ পৃথিবীর সাতটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার একটি নেপাল৷ এদিকে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে এবং তার কেন্দ্র ঢাকার চারপাশের এলাকা হলে রাজধানীর ৭২ হাজার ভবন পুরোপুরি ধসে পড়বে- এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের৷ তাদের মতে, এমন ঝঁকি থাকলেও ক্ষয়ক্ষতি মেকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই দেশটির৷ শুক্রবার ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ৪ জানুয়ারি ভোর রাতে রিখটার স্কেলে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ৷ এ ঘটনায় শুধুমাত্র আতঙ্কেই মারা যান ছয়জন৷ সাধারণ মানুষের আতঙ্ক এবং চিৎকারে সৃষ্টি হয় এক ভীতিকর অবস্থার৷ তাদের কথা, এবারের ভূমিকম্পের মতো কম্পন তারা আগে কখনো দেখেননি৷ ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে বাইরে বের হতে গিয়ে আহত হন শতাধিক৷ ঢাকায় ছয়টি ভবন হেলে পড়ার খবরও পাওয়া গেছে। এছাড়া সারাদেশে ৫০টিরও বেশি ভবন হেলে পড়ে অথবা ফাটল ধরে বলে জানা যায়৷ ভোর ৫টার দিকে শুরু হয় ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প৷ প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠায় ঘুম থেকে উঠেই ঘর ছাড়ার চেষ্টা করে অনেক মানুষ৷ এ সময় আতঙ্কে ঢাকা, জামালপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এবং ইউএনডিপির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এ কে এম মাকসুদ কামাল বলেন, এবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ঢাকা থেকে ৩৫০ কি.মি. দূরে মনিপুর রাজ্য৷ কেন্দ্রে এর মাত্রা ছিল ৬.৭৷ ওই কেন্দ্রে নাকি ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা ছিল৷ আর সেটা যদি হতো, তাহলে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়তো৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই ১২টি ভূমিকম্প ফাটল আছে৷ এসব জায়গায় ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে৷ ঢাকার অদূরে মধুপুর ফাটল খুব বিপজ্জনক৷ প্রতি ১০০ বছর পর পর ফাটল থেকে বড় আকারের ভূমিকম্প হয়৷ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হয়েছে৷ তাই আরেকটি বড় ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে আছি আমরা৷ অধ্যাপক মাকসুদ কামাল জানান, ২০০৯ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ভবনগুলো নিয়ে জরিপ করা হয়৷ তাতে দেখা যায় যে, আগামীতে যদি ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তাহলে তিন লাখ ২৬ হাজার ভবনের মধ্যে ৭২ হাজার ভবন তাৎক্ষণিকভাবে ধসে পড়বে৷ একেবারে অক্ষত থাকবে খুব কম সংখ্যক ভবন৷ এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে৷ ঘটবে মানবিক বিপর্যয়ও৷ তিনি বলেন, এই দুর্যোগের জন্য আমাদের প্রস্তুতি পর্যাপ্ত নয়৷ প্রথমত, ভূমিকম্পে যাঁরা গৃহহীন হবেন তাদের আশ্রয় দেয়ার মতো খালি জায়গা নেই ঢাকায়৷ উদ্ধার কাজের জন্য দক্ষ জনবল এবং যন্ত্রপাতি নেই৷ নেই চিকিৎসা সুবিধাো৷ তাছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতাও নেই৷ তাই ভূমিকম্পের সময় কী কী করণীয়– সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না৷ ফলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে৷ মাকসুদ কামাল বলেন, আমাদের এখনই প্রস্তুতি নেয়া উচিত৷ উচিত বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করা৷ এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত৷

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে ভবন ধসবে ৭২ হাজার

আপডেট টাইম : ০৯:০৩:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৬

সাতটি টেকটনিক বা গঠনমূলক প্লেট দিয়ে তৈরি আমাদের ভূপৃষ্ঠ৷ যেসব স্থানে এসব প্লেটের মিলন ঘটেছে, সেসব স্থান সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত৷ নেপালে ভূমিকম্পের কারণ হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্লেটের সঙ্গে ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষ৷ পৃথিবীর সাতটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার একটি নেপাল৷ এদিকে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে এবং তার কেন্দ্র ঢাকার চারপাশের এলাকা হলে রাজধানীর ৭২ হাজার ভবন পুরোপুরি ধসে পড়বে- এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের৷ তাদের মতে, এমন ঝঁকি থাকলেও ক্ষয়ক্ষতি মেকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই দেশটির৷ শুক্রবার ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ৪ জানুয়ারি ভোর রাতে রিখটার স্কেলে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ৷ এ ঘটনায় শুধুমাত্র আতঙ্কেই মারা যান ছয়জন৷ সাধারণ মানুষের আতঙ্ক এবং চিৎকারে সৃষ্টি হয় এক ভীতিকর অবস্থার৷ তাদের কথা, এবারের ভূমিকম্পের মতো কম্পন তারা আগে কখনো দেখেননি৷ ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে বাইরে বের হতে গিয়ে আহত হন শতাধিক৷ ঢাকায় ছয়টি ভবন হেলে পড়ার খবরও পাওয়া গেছে। এছাড়া সারাদেশে ৫০টিরও বেশি ভবন হেলে পড়ে অথবা ফাটল ধরে বলে জানা যায়৷ ভোর ৫টার দিকে শুরু হয় ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প৷ প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠায় ঘুম থেকে উঠেই ঘর ছাড়ার চেষ্টা করে অনেক মানুষ৷ এ সময় আতঙ্কে ঢাকা, জামালপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এবং ইউএনডিপির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এ কে এম মাকসুদ কামাল বলেন, এবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ঢাকা থেকে ৩৫০ কি.মি. দূরে মনিপুর রাজ্য৷ কেন্দ্রে এর মাত্রা ছিল ৬.৭৷ ওই কেন্দ্রে নাকি ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা ছিল৷ আর সেটা যদি হতো, তাহলে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়তো৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই ১২টি ভূমিকম্প ফাটল আছে৷ এসব জায়গায় ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে৷ ঢাকার অদূরে মধুপুর ফাটল খুব বিপজ্জনক৷ প্রতি ১০০ বছর পর পর ফাটল থেকে বড় আকারের ভূমিকম্প হয়৷ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হয়েছে৷ তাই আরেকটি বড় ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে আছি আমরা৷ অধ্যাপক মাকসুদ কামাল জানান, ২০০৯ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ভবনগুলো নিয়ে জরিপ করা হয়৷ তাতে দেখা যায় যে, আগামীতে যদি ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তাহলে তিন লাখ ২৬ হাজার ভবনের মধ্যে ৭২ হাজার ভবন তাৎক্ষণিকভাবে ধসে পড়বে৷ একেবারে অক্ষত থাকবে খুব কম সংখ্যক ভবন৷ এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে৷ ঘটবে মানবিক বিপর্যয়ও৷ তিনি বলেন, এই দুর্যোগের জন্য আমাদের প্রস্তুতি পর্যাপ্ত নয়৷ প্রথমত, ভূমিকম্পে যাঁরা গৃহহীন হবেন তাদের আশ্রয় দেয়ার মতো খালি জায়গা নেই ঢাকায়৷ উদ্ধার কাজের জন্য দক্ষ জনবল এবং যন্ত্রপাতি নেই৷ নেই চিকিৎসা সুবিধাো৷ তাছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতাও নেই৷ তাই ভূমিকম্পের সময় কী কী করণীয়– সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না৷ ফলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে৷ মাকসুদ কামাল বলেন, আমাদের এখনই প্রস্তুতি নেয়া উচিত৷ উচিত বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করা৷ এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত৷