ঢাকা ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোটি টাকার আগরের শ্রমিকরা আছেন অভাব-অনটনেই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩১:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০
  • ১৮০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগর কিংবা আতরের দাম কোটি টাকা। কিন্তু এর নেপথ্যের শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা বড়ই করুণ। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার আগর কাঠ স্পর্শ করলেও ভাগ্য ফেরেনি তাদের এক রতিও।

প্রতি বছর আগর ও আতর রপ্তানি করে বাংলাদেশে অর্জিত হয় কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু এর পেছনের কারিগরদের দিন ফেরেনি। তারা আগে যেমন ছিলেন, তেমনই আছেন। মূল্যবৃদ্ধির এই সময়ে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

মৌলভীবাজার জেলার আতরসমৃদ্ধ উপজেলা বড়লেখা। এরই আগরপূর্ণ অঞ্চল সুজানগর ইউনিয়ন। যেখানে বাড়ি বাড়ি আগর গাছ। বাড়ি বাড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানা। এই সুজানগর গ্রামের দিন আনতে পান্তা ফুরানো এক আগর শ্রমিকের নাম নুরুল ইসলাম। পুঞ্জিহীন (মূলধনহীন) এই শ্রমিক বহুকাল ধরে জীবনের অসচ্ছল নৌকা বেয়ে চলেছেন।

বাজারে যান একটু ভালো মাছ কেনার আশায়। কিন্তু মাছ না কিনে শুটকি নিয়ে সেই অবশিষ্ট কয়েকদিনের টাকা জমিয়ে আগর কাঠ কিনে এনে আগর উড তৈরি করে বিক্রি করেন। সামান্য বাড়তি কিছু আয় হয়। তবে মাছ আর খাওয়া হয় না নুরুলের।

আছে ময়জুল ইলাম, জাহিদ ইলামসহ আরো অসংখ্য নাম। প্রায় সহস্রের কাছাকাছি। এরা প্রত্যেকেই সুজানগর গ্রামের ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবনের একেক জন স্বপ্নভগ্ন অভাবী মানুষ।

আগরশ্রমিক নুরুল ইসলাম বলেন, বেশির ভাগ সময় মানুষের কামকাজই করি। আগর কাঠ থেকে কালো ও সাদা অংশগুলোকে বাটাল দিয়ে কেটে কেটে আলাদা করা। সারাদিন আট-দশ ঘণ্টা কাজ করে তিনশ টাকা হাজিরা পাই। আর যদি কিছু টাকা জোগাড় করতে পারি তবে মাঝে মধ্যে নিজে আগর কাঠ কিনে আগর উড তৈরি করে তারপর ডিলারের কাছে বিক্রি করলে সামান্য কিছু বাড়তি টাকার মুখ দেখি।

সাংসারিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার চার ছেলে দুই মেয়ে এবং আমরা স্বামী-স্ত্রীসহ মোট আটজন। আমি একা খুবই কষ্ট করে সামান্য আয়-রোজগার করি। আমার সব সন্তানই পড়ালেখায় আছে। তবে বড় ছেলে দুটো শাকিল আর রায়হান একটু সেয়ানা (কাজে অভিজ্ঞ)। সেয়ানা থাকলেও কী হবে? তারা তো পড়াশোনা করে। মাঝে মধ্যে যদি কখনো একটু টাকা জমিয়ে কিছু আগর কাঠ কিনতে পারি তবে তারা দু’জন মিলে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে মালের (পণ্যের) সাইজ বানিয়ে আমাকে অনেক সাহায্য করে। বাইরে কোনো কাজে তারা যায় না। বাইরে গিয়ে শুধু আমি একাই কাজ করি।

সন্তানদের লেখাপড়া, আটজনের খাবার-দাবার, ওষুধপত্র সব মিলিয়ে দৈনিক ৩শ টাকার মজুরি দিয়ে সংসার আর চলে না। মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। তখন দিতে পারি না। বিল জমে যায়। মেয়ে দুটো বড় হচ্ছে। তাদের বিয়েশাদির ব্যাপার আছে। সবকিছু নিয়ে বড়ই আর্থিক সংকটের মধ্যে আছি। জানান আগরশ্রমিক নুরুল ইসলাম।

মেসার্স মরিয়ম আগর আতর ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সজীব আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সুজানগর গ্রামে প্রায় এক হাজার আগর শ্রমিক রয়েছেন যারা খুবই দরিদ্র। দিন আনে দিন খায়। এমনই অবস্থা তাদের। এসব শ্রমিকদের যদি সরকারি কোনো সাহায্য বা ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো তাহলে তাদের জীবনমানে কিছুটা হলেও সচ্ছলতা ফিরে আসতো।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আল ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আসলে আমার নলেজে (অবহিত) ছিল না। আগর ও আতরের অসহায়-অসচ্ছল শ্রমিকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কোটি টাকার আগরের শ্রমিকরা আছেন অভাব-অনটনেই

আপডেট টাইম : ১০:৩১:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগর কিংবা আতরের দাম কোটি টাকা। কিন্তু এর নেপথ্যের শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা বড়ই করুণ। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার আগর কাঠ স্পর্শ করলেও ভাগ্য ফেরেনি তাদের এক রতিও।

প্রতি বছর আগর ও আতর রপ্তানি করে বাংলাদেশে অর্জিত হয় কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু এর পেছনের কারিগরদের দিন ফেরেনি। তারা আগে যেমন ছিলেন, তেমনই আছেন। মূল্যবৃদ্ধির এই সময়ে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

মৌলভীবাজার জেলার আতরসমৃদ্ধ উপজেলা বড়লেখা। এরই আগরপূর্ণ অঞ্চল সুজানগর ইউনিয়ন। যেখানে বাড়ি বাড়ি আগর গাছ। বাড়ি বাড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানা। এই সুজানগর গ্রামের দিন আনতে পান্তা ফুরানো এক আগর শ্রমিকের নাম নুরুল ইসলাম। পুঞ্জিহীন (মূলধনহীন) এই শ্রমিক বহুকাল ধরে জীবনের অসচ্ছল নৌকা বেয়ে চলেছেন।

বাজারে যান একটু ভালো মাছ কেনার আশায়। কিন্তু মাছ না কিনে শুটকি নিয়ে সেই অবশিষ্ট কয়েকদিনের টাকা জমিয়ে আগর কাঠ কিনে এনে আগর উড তৈরি করে বিক্রি করেন। সামান্য বাড়তি কিছু আয় হয়। তবে মাছ আর খাওয়া হয় না নুরুলের।

আছে ময়জুল ইলাম, জাহিদ ইলামসহ আরো অসংখ্য নাম। প্রায় সহস্রের কাছাকাছি। এরা প্রত্যেকেই সুজানগর গ্রামের ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবনের একেক জন স্বপ্নভগ্ন অভাবী মানুষ।

আগরশ্রমিক নুরুল ইসলাম বলেন, বেশির ভাগ সময় মানুষের কামকাজই করি। আগর কাঠ থেকে কালো ও সাদা অংশগুলোকে বাটাল দিয়ে কেটে কেটে আলাদা করা। সারাদিন আট-দশ ঘণ্টা কাজ করে তিনশ টাকা হাজিরা পাই। আর যদি কিছু টাকা জোগাড় করতে পারি তবে মাঝে মধ্যে নিজে আগর কাঠ কিনে আগর উড তৈরি করে তারপর ডিলারের কাছে বিক্রি করলে সামান্য কিছু বাড়তি টাকার মুখ দেখি।

সাংসারিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার চার ছেলে দুই মেয়ে এবং আমরা স্বামী-স্ত্রীসহ মোট আটজন। আমি একা খুবই কষ্ট করে সামান্য আয়-রোজগার করি। আমার সব সন্তানই পড়ালেখায় আছে। তবে বড় ছেলে দুটো শাকিল আর রায়হান একটু সেয়ানা (কাজে অভিজ্ঞ)। সেয়ানা থাকলেও কী হবে? তারা তো পড়াশোনা করে। মাঝে মধ্যে যদি কখনো একটু টাকা জমিয়ে কিছু আগর কাঠ কিনতে পারি তবে তারা দু’জন মিলে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে মালের (পণ্যের) সাইজ বানিয়ে আমাকে অনেক সাহায্য করে। বাইরে কোনো কাজে তারা যায় না। বাইরে গিয়ে শুধু আমি একাই কাজ করি।

সন্তানদের লেখাপড়া, আটজনের খাবার-দাবার, ওষুধপত্র সব মিলিয়ে দৈনিক ৩শ টাকার মজুরি দিয়ে সংসার আর চলে না। মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। তখন দিতে পারি না। বিল জমে যায়। মেয়ে দুটো বড় হচ্ছে। তাদের বিয়েশাদির ব্যাপার আছে। সবকিছু নিয়ে বড়ই আর্থিক সংকটের মধ্যে আছি। জানান আগরশ্রমিক নুরুল ইসলাম।

মেসার্স মরিয়ম আগর আতর ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সজীব আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সুজানগর গ্রামে প্রায় এক হাজার আগর শ্রমিক রয়েছেন যারা খুবই দরিদ্র। দিন আনে দিন খায়। এমনই অবস্থা তাদের। এসব শ্রমিকদের যদি সরকারি কোনো সাহায্য বা ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো তাহলে তাদের জীবনমানে কিছুটা হলেও সচ্ছলতা ফিরে আসতো।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আল ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আসলে আমার নলেজে (অবহিত) ছিল না। আগর ও আতরের অসহায়-অসচ্ছল শ্রমিকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।