হাওর বার্তা ডেস্কঃ উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নওগাঁয় ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার আত্রাই এবং মান্দা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়ে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর থেকে ছোট যমুনা নদীর লিটন ব্রিজে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার, মহাদেবপুর আত্রাই নদীতে ২৬ সেন্টিমিটার, মান্দার আত্রাই নদীর জোতবাজার পয়েন্টে ৬২ সেন্টিমিটার, ধামইরহাট উপজেলার আত্রাই নদীর শিমুলতলি ব্রিজে ২৭ সেন্টিমিটার এবং আত্রাই উপজেলায় আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া, কালিকাপুর, আহসানগঞ্জ, শাহাগোলা, বিশা, পাঁচুপুর ও ভোঁপাড়ার সাতটি ইউনিয়ন এবং মান্দা উপজেলার কসব, বিষ্ণপুর ও নুরুল্যাবাদ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এসব এলাকার মাঠের রোপা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে যায়। অধিকাংশ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মাটির বাড়িঘর ভেঙে গেছে।
এরই মধ্যে গত কয়েকদিনে আত্রাইয়ের হাটকালুপাড়া ও কালিকাপুর ইউনিয়নের বাড়িঘর পানিতে ডুবে যায়। কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর পানির নিচে। পাকাবাড়ির বাসিন্দারা বাড়ির জিনিসপত্র বিভিন্নভাবে উঁচু করে তার ওপর রেখে কোনোরকমে বসবাস করছেন। অধিকাংশ পরিবারের রান্না করার ব্যবস্থা নেই। তাদের গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের চক শিমলা গ্রামের ফারুক হোসেন বলেন, জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাঁধ ভেঙে বন্যার তাদের বাড়ি ঘর ডুবে যায়। এরপর পরিবার নিয়ে প্রায় এক মাস বাঁধের ওপর ছিলাম। আবারও ওই ভাঙা স্থান দিয়ে গত কয়েকদিনে পানি এসে দ্বিতীয় দফায় বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যায়। টিনের চালা পর্যন্ত পানি উঠেছে আমাদের। প্রতি বছর বাঁধ ভেঙে তাদের অনেক ক্ষতি হয়। বাঁধ শক্ত ও মজবুত করা হলে বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতাম।
এদিকে, চকশিমলা, সন্ন্যাসী বাড়ি, বড়শিমলা, হাটকালুপাড়া, পাহাড়পুর গ্রামে বন্যার অবস্থা ভয়াবহ। এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে বন্যার পানি উঠেনি। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে রয়েছে ৮ নং হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের মানুষ।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছানাউল ইসলাম বলেন, উপজেলার আট ইউনিয়নের মধ্যে সাত ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। হাটকালুপাড়া, কালিকাপুর ও আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। ইতোমধ্যে প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় হাটকালুপাড়া ও কালিকাপুর ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের মধ্যে চাল-ডাল ও তেলসহ শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, উপজেলার তিন ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। তাদের সরকারি সহযোগিতা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ইতোমধ্যে ত্রাণ সহযোগিতা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।