ঢাকা ১১:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যা ভাঙনে দিশেহারা যমুনা তিস্তা ধরলাপারের মানুষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ১৬৬ বার

হাওর বাতা ডেস্কঃ বন্যা ও ভাঙনের পর তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে নতুন বন্যার আঘাতে। রাস্তাঘাট ভাঙছে, বসতভিটা নদীতে বিলীন হচ্ছে, ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে খাবারের সংকট-সব মিলিয়ে একটা কঠিন সময় পার করছে যমুনা, তিস্তা ও ধরলার তীরবর্তী মানুষ।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসও স্বস্তিদায়ক নয়। কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা আজ শনিবারও অব্যাহত থাকতে পারে। ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে। তাই দেশের সব সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল দেশের ১৯টি জেলার ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। এই ১৯টি জেলা হলো—রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ছয় দিন পর যমুনার দুটি পয়েন্টে আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার, কাজিপুর পয়েন্টে বেড়েছে ১৪ সেন্টিমিটার। নদীতীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার মানুষের মধ্যে নতুন করে বন্যা আর ভাঙনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও কাজিপুর পয়েন্টের পানি বিপত্সীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে যমুনার পানি বাড়তে থাকায় ভাঙনের কবলে পড়েছে চৌহালি উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ। ক্রমে বিলীন হচ্ছে দক্ষিণ চৌহালির বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, সারিয়াকান্দি উপজেলার দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। এর মধ্যে উপজেলার চরগোদাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বাঙ্গালী নদীর ভাঙনে এবং চরদিঘাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনা নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে।

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আমন ধান ও আগাম সবজির অনেক জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, উপজেলার পাঁচ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমনের চারা লাগানো হয়েছিল। বন্যা ও বর্ষণে ৩৫ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তাসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলা নদীর পানি গতকাল সকালে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বিপত্সীমার কাছাকাছি রয়েছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানিও। ফলে পঞ্চম দফা বন্যায় কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী ও উলিপুর উপজেলার শতাধিক চর নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক ও আবাদি জমি।

রংপুর অফিস জানায়, ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে আসা ঢলে রংপুরের তিস্তাপারে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে রোপা আমনসহ ফসলের ক্ষেত। নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় গত পাঁচ দিনে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, সেখানে তিস্তার পানি কিছুটা কমেছে। গতকাল বিকেলে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টের পানি বিপত্সীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আগের দিন সকালে প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সেখানে চতুর্থ দফা বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত তিন দিনে মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে প্রায় ৪৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই পানি এসে নামছে ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে।

শেরপুর প্রতিনিধি জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দুর্ভোগে পড়েছেন নালিতাবাড়ীর কৃষকরা। ভোগাই নদীর ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে নালিতাবাড়ী শহরের নিচপাড়া, জেলখানা রোড, মরিচপুরান ইউনিয়নের ফকিরপাড়া, দক্ষিণ কোন্নগরসহ কয়েকটি গ্রাম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যা ভাঙনে দিশেহারা যমুনা তিস্তা ধরলাপারের মানুষ

আপডেট টাইম : ০৯:৩৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাওর বাতা ডেস্কঃ বন্যা ও ভাঙনের পর তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে নতুন বন্যার আঘাতে। রাস্তাঘাট ভাঙছে, বসতভিটা নদীতে বিলীন হচ্ছে, ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে খাবারের সংকট-সব মিলিয়ে একটা কঠিন সময় পার করছে যমুনা, তিস্তা ও ধরলার তীরবর্তী মানুষ।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসও স্বস্তিদায়ক নয়। কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা আজ শনিবারও অব্যাহত থাকতে পারে। ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে। তাই দেশের সব সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল দেশের ১৯টি জেলার ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। এই ১৯টি জেলা হলো—রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ছয় দিন পর যমুনার দুটি পয়েন্টে আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার, কাজিপুর পয়েন্টে বেড়েছে ১৪ সেন্টিমিটার। নদীতীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার মানুষের মধ্যে নতুন করে বন্যা আর ভাঙনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও কাজিপুর পয়েন্টের পানি বিপত্সীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে যমুনার পানি বাড়তে থাকায় ভাঙনের কবলে পড়েছে চৌহালি উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ। ক্রমে বিলীন হচ্ছে দক্ষিণ চৌহালির বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, সারিয়াকান্দি উপজেলার দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। এর মধ্যে উপজেলার চরগোদাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বাঙ্গালী নদীর ভাঙনে এবং চরদিঘাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনা নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে।

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আমন ধান ও আগাম সবজির অনেক জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, উপজেলার পাঁচ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমনের চারা লাগানো হয়েছিল। বন্যা ও বর্ষণে ৩৫ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তাসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলা নদীর পানি গতকাল সকালে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বিপত্সীমার কাছাকাছি রয়েছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানিও। ফলে পঞ্চম দফা বন্যায় কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী ও উলিপুর উপজেলার শতাধিক চর নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক ও আবাদি জমি।

রংপুর অফিস জানায়, ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে আসা ঢলে রংপুরের তিস্তাপারে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে রোপা আমনসহ ফসলের ক্ষেত। নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় গত পাঁচ দিনে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, সেখানে তিস্তার পানি কিছুটা কমেছে। গতকাল বিকেলে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টের পানি বিপত্সীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আগের দিন সকালে প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সেখানে চতুর্থ দফা বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত তিন দিনে মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে প্রায় ৪৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই পানি এসে নামছে ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে।

শেরপুর প্রতিনিধি জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দুর্ভোগে পড়েছেন নালিতাবাড়ীর কৃষকরা। ভোগাই নদীর ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে নালিতাবাড়ী শহরের নিচপাড়া, জেলখানা রোড, মরিচপুরান ইউনিয়নের ফকিরপাড়া, দক্ষিণ কোন্নগরসহ কয়েকটি গ্রাম।