শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে হলুদ তরমুজ

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে হলুদ তরমুজ। যা খেতে অতন্ত সুস্বাধু ও সুমিষ্টি। রং ও স্বাদের জন্য চাহিদা বেশি থাকায় এটি চাষাবাদে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ারও একটি মাধ্যম বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

আর শ্রীমঙ্গলে প্রথম বারের মতো এটি নিয়ে আসেন একজন সুশিক্ষিত যুবক আলাউদ্দিন মোহাম্মদ তৌফিক নামে এক কৃষি প্রেমী।

তিনি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ইউছুপপুরে ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন থাইল্যান্ডের হলুদ তরমুজ কর্নিয়ার চাষ করার প্রয়াস করেন। চাষ করেন সাম্মামসহ আরো কয়েক জাতের তরমুজ। শ্রীমঙ্গলের মাটিতে হলুদ তরমুজ কেমন হয় মুলত এটা ছিলো তার গবেষনা বা দেখার বিষয়। তিনি জানান, শ্রীমঙ্গলে হবে কিনা একটা দুশ্চিন্তা নিয়ে তিনি প্রায় ৮/১০ লক্ষ টাকা খরচ করে সেখানে তা চাষ করেন। শ্রীমঙ্গলের মাটিতে এর ভালো উৎপাদন তার মনে দুশ্চিন্তা কাটিয়ে আনন্দ ও স্বস্তি এনে দিয়েছে। তার শ্রীমঙ্গলের ক্ষেতে এক একটি তরমুজ ৫ থেকে ৬ কেজি করে ওজন হয়েছে। তবে লকডাউনের কারনে ঢাকাতে মালের কাটতি কম থাকায় তার বেশ কিছু মাল ক্ষেতেই পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে অন্য দিকে আম্পানের সময় টানা বৃষ্টি ও পরবর্তীতে শ্রীমঙ্গলের বৃষ্টিপাতে জমিতে পানি লেগে বেশ ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, শ্রীমঙ্গলে তিনি নতুন। এখানের আবহাওয়া এবং বর্ষায় পানির স্তর কোন কিছুই জানা ছিলো না। তবে এবারের ক্ষতির অভিজ্ঞতা আগামীতে তিনি কাজে লাগাবেন। তিনি জানান, শ্রীমঙ্গলের মাটি হলুদ তরমুজের জন্য উপযোগী। এখণ এটি অনান্য চাষীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।

তিনি সরকারী চাকুরীর পেছনে না ছুঠে তিনি জীবন জীবিকা ও তার হৃদয়ে ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছেন মা মাটির প্রতি। পৃথিবীতে এমন দেশ নেই যাদের মা আমাদের বাংলাদেশের মায়ের মতো। আমাদের মা আমাদের ( বাংলাদেশের মাটি দেশের জনগনকে ) যে ভাবে ভালোবাসেন এমটা বিরল। কিন্তু আমরা আমাদের মা কে সে ভাবে ভালো বাসি না। বিশ্ব ব্যাপী যেকোন দূর্যোগত্তোর আমাদের ঘুরে দাড়ানোর প্রধান অবলম্বন আমাদের প্রিয় মাতৃভুমির উর্বরা মাটি। বিষয়টি মনে প্রাণে লালন করেন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এর ফিনান্স ব্যাকিংএ এমবিএ করা ৩০ বছরের যুবক আলাউদ্দিন মোহাম্মদ তৌফিক। লেখা পড়া শেষ করার সাথে সাথে যোগ দেন একটি টেকনিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা। কাজ করেন একটি বড়ো কোম্পানীর অডিট অফিসার হিসেবে। কিছুদিন কম্পিউটার ব্যবসাও করেন। কিন্তু কেন যেন তার মন এতে ঠেকে না। ছোট বেলা থেকেই তার গাছ গাছালির প্রতি বেশ টান। তিনি লক্ষ করেন আমাদের মা যে ভাবে সন্তানদের স্নেহ ভালোবাসায় বড় করে তুলেন, তেমনি আমাদের মাটির মা রোপনের মাত্র দুই মাসের মধ্যে ফল দেন। একটি মাত্র বীজ যা থেকে মাটির মায়ের বদৌলতে আসে শত সহস্র ফল। আর আমাদের বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার দেশে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা ও খাদ্য চাহিদা পুরণ করার বড় অবলম্বন হচ্ছে কৃষিজ উৎপাদন। মনের ভিতরের এই টান তাকে সবকিছু বাদ দিয়ে নিয়ে এসেছে মাটিতে। তিনি চট্টগ্রাম বিভাগের ফটিকছড়িতে কয়েক বছর আগে শুরু করেন এশিয়া প্লান্টার্স এন্ড নার্সারী কার্যক্রম। ২০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ফলজ নার্সারীর পাশাপাশি নিজেই চাষ করেন মাল্টা, পেপে, ক্যাপসিকাম, স্কোয়াস ও লেটুস পাতাসহ বিভিন্ন ফসল। তবে তিনি বেশ কিছু বিদেশী ফল ও সবজীর দিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন। ফটিক ছড়িতে তার এই সফলতা তার মনকে কৃষির প্রতি আবেগ অনেকগুন বাড়িয়েদেয়। তিনি মনস্ত করেন শুধু ফটিক ছড়ি নয় এ প্রয়াস সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। যতটুকু নিজে পারবেন করবেন বাকীটুকু পরামশ্য ও উৎসাহ দিয়ে। এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর