রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ রাষ্ট্রপতি। তার জন্য প্রাসাদোপম বাড়ি, বাড়ির ভেতরেই তার বহু কর্মকর্তা কর্মচারী ।
বাড়ি কিংবা রাস্তা – সবজায়গাতেই তার জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা। কোন কিছুর কমতি নেই পৃথিবীর যে কোন দেশের রাষ্ট্রপতির জন্য।
এমনকি অফিস করতে বাইরেও যেতে হয়না। রাষ্ট্রের প্রথা অনুযায়ী সবাই তার সাথে এসে দেখা করেন। এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু এতো কিছুর মধ্যেও মাঝে-মধ্যে হাঁপিয়ে উঠেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এতো নিরাপত্তার আয়োজনে তার অস্বত্বিও হয়।
বঙ্গভবনে বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই নিজের মনোভাব প্রকাশ করলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়েছেন প্রায় তিন বছর। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বঙ্গভবনে তার কেমন কাটছে?
তিনি উত্তর দেন, “খারাপ সময় কাটছে এটা বলা মুশকিল। তবে আমার কাছে মনে হয়- আই ডোন্ট ফিল সো মাচ কমফোর্ট (খুব একটা ভালো অনুভব করিনা)। কারণটা হলো, এখানে মনে হয় স্বাধীনতা বিহীন একটা অবস্থায় আছি।”
পুরোদস্তুর একজন রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হবার আগে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। প্রায় ৫৫ বছর ধরে তিনি রাজনীতি করেছেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে।
বঙ্গভবনে তিনি যে আরামে থাকেন সে কথা তিনি অস্বীকার করছেন না। আরাম থাকলেও আগের মতো স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ তিনি হারিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “ এতো বড় বাড়িতে থাকি। বঙ্গভবন বাইরে থেকে মনে হয় রাজভবনের মত। রাজা-বাদশারা যে অবস্থায় থাকত তেমন মনে হয়। খুব আরাম আয়েশে থাকি, এটাই স্বাভাবিক।”
মি: হামিদের কাছে সবচেয়ে সমস্যা মনে হয়, তিন চাইলেই চট করে যে কোন জায়গায় যেতে পারেন না।
বিবিসি’র কাছে সে কথাই তুলে ধরলেন রাষ্ট্রপতি, “আমার কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, সারা জীবন চলার যে একটা স্টাইল ছিল, এটার মধ্যে একটা বিরাট ছন্দপতন হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমি আমার মন যখন যেটা চায় যে আমি এটা করব বা আমি ওখানে যাবো-এ ধরনের কত কাজই তো থাকে-মনে মনে। চিন্তা করি যে এটা করা দরকার, ওইখানে যাইতে হবে, তার সঙ্গে দেখা করতে হবে- দেখা গেলো এগুলো আমি পারি না- কারণ আমার যাওয়া খুবই কঠিন। ”
তিনি মনে করেন, লোকজনকে বঙ্গভবনে নিয়ে আসা আর নিজে ইচ্ছে করে কোথাও যাওয়ার মধ্যে বিরাট পার্থক্য আছে। নিজে কোথাও গেলে যে প্রশান্তি আসে, লোকজনকে খবর দিয়ে বঙ্গভবনে আনার মধ্যে সেই স্বস্তি নেই।
রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় বের হলেই যে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ বিষয়টি রাষ্ট্রপতির মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করে।
তিনি কোথাও যাবার জন্য মনস্থির করলেও নিরাপত্তার ব্যাপক আয়োজনের কথা মনে হলে সে ইচ্ছা ‘দমে যায়’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রপতি আক্ষেপ করে বলেন, তিনি রাস্তায় বের হলে যতক্ষণ রাস্তা বন্ধ থাকে ততক্ষণে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা কোন রোগীর মৃত্যুও হতে পারে বলে নিজের হতাশা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “কারণ রাস্তা যেভাবে থাকে, সেভাবে আমাকে যেতে দিবে না। বিশেষ করে অন্য লক্ষ লক্ষ মানুষের যে সমস্যা সৃষ্টি হয় এটাই আমাকে সবচেয়ে ব্যথিত করে।”
বিবিসি বাংলা’র সৌজন্যে