দেশি জাতের ‘চিকন ধান’ উদ্ভাবন করে চমকে দিলেন কৃষক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জৈব পদ্ধতিতে নিজ হাতে দেশি জাতের ‘চিকন ধান’ উদ্ভাবন করে চমকে দিয়েছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার চাটকিয়া গ্রামের কৃষক সেন্টু চন্দ্র হাজং। ব্রিডিং পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত এ ধানের নাম দিয়েছেন ‘সেন্টু শাইল’। ফলন ভালো হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ধানটি।

এবারের আমন মৌসুমে ছয় একর জমিতে ‘সেন্টু শাইল’ ধান চাষ করেছেন কৃষক সেন্টু হাজং। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলনও বেশ ভাল হয়েছে।

সেন্টু হাজং জানান, বেসরকারি সংস্থা কারিতাস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই ব্রিডিং পদ্ধতিতে নতুন জাতের এ ধান উদ্ভাবন করেন। এক একর জমিতে ট্রায়ালও দিয়েছেন। আপাতত এ ধানের নাম রেখেছেন ‘সেন্টু শাইল’। এ বছরই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শ নিয়ে নতুন নাম রখবেন।

তিনি আরো জানান, দেশি জাতের এ ধানে কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করেন না। এ ধানে এমনিতেই পোকার আক্রমণ কম হয়। একটু-আধটু পোকার আক্রমণ হলে নিমপাতা, বাসকপাতা পানিতে ভিজিয়ে ফুটিয়ে মেশিনের সাহায্যে জমিতে স্প্রে করেন। কেঁচো কম্পোস্ট ও গোবর ব্যবহার করায় ধান গাছ শক্ত-মজবুত হয়। ঝড়-বৃষ্টিতে কিংবা গাছ বড় হলেও হেলে পড়ে না। প্রতি একর জমিতে ৪০-৫০ মণ ধান উৎপাদন হয়।

সেন্টু চন্দ্র হাজং জানান, রাসায়নিক সার ব্যবহারে দিনদিন জমির উর্বরতা কমছে। এ কারণে এখনো তিনি গরু দিয়ে জমি চাষ ও জৈব সার ব্যবহার করেন। ৩০ বছর ধরে কৃষির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। আট বছর ধরে ধান গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধানের আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। এসব ধানের ভাত, পিঠা, মুড়ি অনেক সুস্বাদু হয়। বর্তমানে তিনি বগি, হালই, গোলাপী, মালঞ্চি, ময়নাগিড়ি, মালসিরা, অনামিয়া, পারিজাত, আপচি, কাইশাবিন্নি, মারাক্কাবিন্নি, শংবিন্নি, দুধবিন্নি, বিরই, চাপাল, খাসিয়াবিন্নিসহ বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন জাতের ধান নিয়ে কাজ করছেন।

একই গ্রামের কৃষক বিল­াল হোসেন জানান, তিনি সেন্টু হাজংয়ের কাছ থেকে ‘সেন্টু শাইল’ জাতের ধানের বীজ নিয়ে আবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়।

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির বলেন, সেন্টু চন্দ্র হাজং প্রতি বছরই দেশি জাতের ধান নিয়ে কাজ করছেন। তার উদ্ভাবিত ‘সেন্টু শাইল’ ধানের বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। এই জাতের ধানে রোগ বালাই কম। এটি দেশের অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা চলছে। দেশি জাতের ধান সংরক্ষণে সেন্টু হাজংয়ের উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সেন্টু চন্দ্র হাজংকে সব ধরনের সহযোগিতা ও প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর