ঢাকা ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর শামীম ওসমানের দাঁড়ি-গোফ যুক্ত ছবি ভাইরাল, যা বলছে ফ্যাক্টচেক ঢাকায় যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা চার-ছক্কা হাঁকানো ভুলে যাননি সাব্বির হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই : ধর্ম উপদেষ্টা একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চেয়ে জামায়াত উল্টো জাস্টিফাই করছে: মেজর হাফিজ ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ’ পিএইচডি করে ১৯ সন্তানের মা শমী কায়সারের ব্যাংক হিসাব তলব আগামী মাসের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক সবাই হাতে পাবে : প্রেস সচিব নিক্কেই এশিয়াকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন মেয়াদে ভুয়া নির্বাচন মঞ্চস্থ করেছেন হাসিনা

কাঁঠালের ফল ধারণ ও ফলের আকার বৃদ্ধিতে করণীয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৩:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫
  • ৭৫৯ বার

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। রসালো, উচ্চ পুষ্টিকর এই ফল খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এর ফুল আসে। তবে অমৌসুমী ও বারোমাসি গাছে সেপ্টেম্বর মাস থেকে ফুল ও ফল আসতে দেখা যায়। কাঁঠাল গাছ মনোসিয়াস বা সহবাসী বিধায় একই গাছে আলাদা আলাদা ভাবে স্ত্রী ও পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী ধরে থাকে।

বিপুল সংখ্যক ফুল একটা মঞ্জরীদন্ডের উপর জন্মে থাকে। কাঁঠালের পুষ্পমঞ্জরী হলো একটা স্পাইক যা দুটো নৌকার মত স্পেদ বা খোলসের মধ্যে আবৃত থাকে। ধীরে ধীরে স্পেদ উন্মুক্ত হয়ে পুষ্পমঞ্জরীটি বের হয়। সাধারণত কাঁঠাল গাছের ট্রাংক বা পুরাতন ডালের ফুটস্টকে স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরী ধরে ।

ফুটস্টক হলো গাছের ট্রাংক বা ডাল থেকে উৎপন্ন কাঁঠালের বোটার মত অংশ যা থেকে কাঁঠাল ঝুলে থাকে। পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী গাছের শাখা-প্রশাখা, কান্ড যে কোন অংশে ধরতে পারে। কাঁঠালের স্ত্রী ও পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী সহজেই চেনা যায়। স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরীর বোটা মোটা ও বোটায় স্পষ্ট রিং এর মত থাকে । পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী কিছুটা ছোট ও এর বোটা চিকন। এর উপরিভাগ মসৃন থাকে।

স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরী পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী অপেক্ষা দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ও আকারে বড় হয়। স্ত্রী পুস্পমঞ্জরীর গায়ে ফুলের স্টিগমা গুলো বাইরে থেকে দেখা যায়। স্টিগমার সংখ্যা দুই-তিন হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। স্টিগমার পরাগরেণু গ্রহনোপযোগীতা এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। যত বেশী স্ত্রীফুল পরাগায়িত হবে কাঁঠালের কোষও তত বেশী হবে এবং আকারে বড় হবে।

কাঁঠালের স্ত্রীপুষ্পমঞ্জরী বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র স্ত্রী ফুল নিয়ে গঠিত হয়। স্টিগমা গুলোর উপস্থিতিতে স্ত্রীপুষ্পমঞ্জরীর উপরিভাগ খসখসে হয়ে থাকে। এ্যানথারগুলো বিদারনের সময় পুরুষ পুষ্পমঞ্জরীর উপরে হালকা হলুদ পাউডারের মত দানার সৃষ্টি হয় এবং তা থেকে পরাগরেণু বের হয়। একটা পুষ্পমঞ্জরীতে এক কোটিরও বেশী পরাগরেণু উৎপন্ন হয়ে থাকে এবং তা থেকে সাধারনত ৩-৪ দিন সজীব পরাগরেণু পাওয়া যায়।

Jackfruit

বারি কাঁঠাল-১ এর স্ত্রী (বামে) ও পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী (ডানে)

কাঁঠাল ফুল বায়ু পরাগী। তাই কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে পরাগায়ন নিশ্চিত করতে পারলে ফল ধারণ বৃদ্ধি পায়। পরাগায়নের সময় পরাগরেণুর সজীবতা বা ভায়াবিলিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে ও ভিন্ন গাছের সজীব পরাগরেণুর মাধ্যমে কৃত্রিম পরাগায়ন করলে তাতে পুষ্ট কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও এতে কাঁঠালের আকারও বড় হয় এবং কাঁঠালের অপুষ্টতা বা এ্যাবরোথ্যাবরো ভাবও কমে যায়।

আম ও লিচু জাতীয় কতিপয় ফলের ফুল ধারনের আগে খরার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কাঁঠালের বেলায় তা প্রয়োজন পড়ে না। বরং সেচের প্রয়োজন পড়ে। স্টিগমার গ্রহনোপযোগীতা, পরাগরেণুর সজীবতা এবং ফল ঝরা বন্ধ করার জন্য সেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য নভেম্বর মাস থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর সেচ প্রয়োগ করতে পারলে কাঁঠালের ফুল-ফুল ধারন বৃদ্ধি পায় ও ফল ঝরা কমে।

Jillur

মাঠ গবেষণারত ড. মো. জিল্লুর রহমান

কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে কাঁঠালের আকার বড় ও সম আকৃতির হয়ে থাকে। পরাগায়নের জন্য অন্য গাছের উপযুক্ত পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী থেকে পরাগরেণু সংগ্রহ করতে হবে। পুরুষ পুষ্পমঞ্জরীর গায়ে যখন এ্যানথার সমুহ হালকা হলুদাভ রং ধারণ করে তখন আস্তে করে হাতে ঘসা দিলে সহজেই এ্যানথার থেকে পরাগরেণু বের হয়ে আসে এবং তা হাতের তালুতে নিলে দৃশ্যমান হয়। এ সময় পরাগরেণু তুলির সাহায্যে উপযুক্ত স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরীর গায়ে লাগিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া সম্পূর্ণ পুরুষ পুষ্পমঞ্জরীটি বোটা ধরে তার পৃষ্ঠদেশ স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরীর গায়ে লাগিয়ে ঘসা দিয়েও পরাগায়ন সম্পন্ন করা যায়। এতে সঠিক মাত্রায় পরাগায়ন হয়ে থাকে।

স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরীর গায়ে স্টীগমা বের হওয়ার প্রথম সপ্তাহ পর থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে দু এক দিন পর পর মোট তিন বার কৃত্রিম পরাগায়ন করলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়। সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা কৃত্রিম পরাগায়নের জন্য উত্তম। ফলের অপুষ্টতা বা ম্যালফরমেশন বা এবরোথেবরো ভাব দূর করতে মৌসুমের শুরুতে ০.২% বোরণ পুষ্পমঞ্জরী, গাছের পাতা ও শাখা প্রশাখা ভিজিয়ে স্প্রে করলে এ সমস্যা থাকে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার

কাঁঠালের ফল ধারণ ও ফলের আকার বৃদ্ধিতে করণীয়

আপডেট টাইম : ১১:৩৩:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। রসালো, উচ্চ পুষ্টিকর এই ফল খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এর ফুল আসে। তবে অমৌসুমী ও বারোমাসি গাছে সেপ্টেম্বর মাস থেকে ফুল ও ফল আসতে দেখা যায়। কাঁঠাল গাছ মনোসিয়াস বা সহবাসী বিধায় একই গাছে আলাদা আলাদা ভাবে স্ত্রী ও পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী ধরে থাকে।

বিপুল সংখ্যক ফুল একটা মঞ্জরীদন্ডের উপর জন্মে থাকে। কাঁঠালের পুষ্পমঞ্জরী হলো একটা স্পাইক যা দুটো নৌকার মত স্পেদ বা খোলসের মধ্যে আবৃত থাকে। ধীরে ধীরে স্পেদ উন্মুক্ত হয়ে পুষ্পমঞ্জরীটি বের হয়। সাধারণত কাঁঠাল গাছের ট্রাংক বা পুরাতন ডালের ফুটস্টকে স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরী ধরে ।

ফুটস্টক হলো গাছের ট্রাংক বা ডাল থেকে উৎপন্ন কাঁঠালের বোটার মত অংশ যা থেকে কাঁঠাল ঝুলে থাকে। পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী গাছের শাখা-প্রশাখা, কান্ড যে কোন অংশে ধরতে পারে। কাঁঠালের স্ত্রী ও পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী সহজেই চেনা যায়। স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরীর বোটা মোটা ও বোটায় স্পষ্ট রিং এর মত থাকে । পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী কিছুটা ছোট ও এর বোটা চিকন। এর উপরিভাগ মসৃন থাকে।

স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরী পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী অপেক্ষা দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ও আকারে বড় হয়। স্ত্রী পুস্পমঞ্জরীর গায়ে ফুলের স্টিগমা গুলো বাইরে থেকে দেখা যায়। স্টিগমার সংখ্যা দুই-তিন হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। স্টিগমার পরাগরেণু গ্রহনোপযোগীতা এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। যত বেশী স্ত্রীফুল পরাগায়িত হবে কাঁঠালের কোষও তত বেশী হবে এবং আকারে বড় হবে।

কাঁঠালের স্ত্রীপুষ্পমঞ্জরী বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র স্ত্রী ফুল নিয়ে গঠিত হয়। স্টিগমা গুলোর উপস্থিতিতে স্ত্রীপুষ্পমঞ্জরীর উপরিভাগ খসখসে হয়ে থাকে। এ্যানথারগুলো বিদারনের সময় পুরুষ পুষ্পমঞ্জরীর উপরে হালকা হলুদ পাউডারের মত দানার সৃষ্টি হয় এবং তা থেকে পরাগরেণু বের হয়। একটা পুষ্পমঞ্জরীতে এক কোটিরও বেশী পরাগরেণু উৎপন্ন হয়ে থাকে এবং তা থেকে সাধারনত ৩-৪ দিন সজীব পরাগরেণু পাওয়া যায়।

Jackfruit

বারি কাঁঠাল-১ এর স্ত্রী (বামে) ও পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী (ডানে)

কাঁঠাল ফুল বায়ু পরাগী। তাই কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে পরাগায়ন নিশ্চিত করতে পারলে ফল ধারণ বৃদ্ধি পায়। পরাগায়নের সময় পরাগরেণুর সজীবতা বা ভায়াবিলিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে ও ভিন্ন গাছের সজীব পরাগরেণুর মাধ্যমে কৃত্রিম পরাগায়ন করলে তাতে পুষ্ট কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও এতে কাঁঠালের আকারও বড় হয় এবং কাঁঠালের অপুষ্টতা বা এ্যাবরোথ্যাবরো ভাবও কমে যায়।

আম ও লিচু জাতীয় কতিপয় ফলের ফুল ধারনের আগে খরার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কাঁঠালের বেলায় তা প্রয়োজন পড়ে না। বরং সেচের প্রয়োজন পড়ে। স্টিগমার গ্রহনোপযোগীতা, পরাগরেণুর সজীবতা এবং ফল ঝরা বন্ধ করার জন্য সেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য নভেম্বর মাস থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর সেচ প্রয়োগ করতে পারলে কাঁঠালের ফুল-ফুল ধারন বৃদ্ধি পায় ও ফল ঝরা কমে।

Jillur

মাঠ গবেষণারত ড. মো. জিল্লুর রহমান

কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে কাঁঠালের আকার বড় ও সম আকৃতির হয়ে থাকে। পরাগায়নের জন্য অন্য গাছের উপযুক্ত পুরুষ পুষ্পমঞ্জরী থেকে পরাগরেণু সংগ্রহ করতে হবে। পুরুষ পুষ্পমঞ্জরীর গায়ে যখন এ্যানথার সমুহ হালকা হলুদাভ রং ধারণ করে তখন আস্তে করে হাতে ঘসা দিলে সহজেই এ্যানথার থেকে পরাগরেণু বের হয়ে আসে এবং তা হাতের তালুতে নিলে দৃশ্যমান হয়। এ সময় পরাগরেণু তুলির সাহায্যে উপযুক্ত স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরীর গায়ে লাগিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া সম্পূর্ণ পুরুষ পুষ্পমঞ্জরীটি বোটা ধরে তার পৃষ্ঠদেশ স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরীর গায়ে লাগিয়ে ঘসা দিয়েও পরাগায়ন সম্পন্ন করা যায়। এতে সঠিক মাত্রায় পরাগায়ন হয়ে থাকে।

স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরীর গায়ে স্টীগমা বের হওয়ার প্রথম সপ্তাহ পর থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে দু এক দিন পর পর মোট তিন বার কৃত্রিম পরাগায়ন করলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়। সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা কৃত্রিম পরাগায়নের জন্য উত্তম। ফলের অপুষ্টতা বা ম্যালফরমেশন বা এবরোথেবরো ভাব দূর করতে মৌসুমের শুরুতে ০.২% বোরণ পুষ্পমঞ্জরী, গাছের পাতা ও শাখা প্রশাখা ভিজিয়ে স্প্রে করলে এ সমস্যা থাকে না।