উত্তরের কৃষকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘সোনালি আঁশ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাটকে বলা হয় ‘সোনালি আঁশ’। তবে সময়ের বিবর্তনে পাটের সেই কদর এখন আর নেই।

পাটের সোনালি অতীত এখন কেবলই ইতিহাস।

চলছে কেবল পুরোনো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার লড়াই। তাও আশা-নিরাশার দোলাচলে প্রতিবছর একবুক স্বপ্ন নিয়ে পাটের আবাদ করেন গ্রামের সাধারণ কৃষক। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে কাজ করেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলান। সবুজ পাটকে রূপান্তরিত করেন সোনালি বর্ণে। এর পরেও বিক্রি করতে গিয়ে পড়েন দুর্বিপাকে। কখনও ভালো দাম পান আবার কখনও একেবারেই পান না! অনেক সময় আবার লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয় বেশি। এরপরও সামান্য লাভের আশায় প্রতিবছরই পাটের আবাদ করেন তারা।

ফিরে আসুক সোনালি আঁশের সোনালি দিনপাটের ক্ষেত তৈরি, বীজ বপন, পরিচর্যা ও পাট কাটা ও জাগ দেওয়া নিয়ে বছরের একটি অংশ কেটে যায় কৃষকের। এরপরে হাটে তোলা ও বিক্রি করা নিয়ে শুরু হয় নতুন প্রতিযোগিতা।

তবে এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে রাজশাহী অঞ্চলে ভারি থেকে মাঝারি বর্ষণ হচ্ছে। এতে খাল-বিল, নদী-নালা পানিতে থৈ থৈ। আর আবহাওয়ার কারণে এবছর রাজশাহীতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে পুরোদমে চলছে পাট কাটা ও জাগ দেওয়ার কাজ। নদী-নালা-খাল-বিল ভরা থাকায় কৃষকদের পাট জাঁক দেওয়া নিয়ে এবার তেমন কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না।

একদিকে পাটের বাম্পার ফলন। আরেক দিকে জলাশয়ে রয়েছে পাট জাগ দেওয়ার পর্যাপ্ত পানি। তাই এবার রাজশাহী অঞ্চলের পাটচাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। এখন পর্যন্ত বাজারে পাটের দাম ভালো। এ অবস্থায় যদি সরকার দাম বেঁধে দেয় তাহলে পাটচাষিরা ন্যায্যমূল্য তো পাবেনই বাড়তি হিসেবে কিছু মুনাফাও ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা বুক বেঁধেছেন। শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সোনালি আঁশ দিয়েই এবার গেল কয়েক বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা।

দেশের সংবাদ l Deshersangbad.com » মধুমতি ও ...রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, উত্তরের এ জেলায় আবহাওয়া জনিত কারণে তোষা জাতের পাটের আবাদ বেশি হয়। এজন্য সাধারণ কৃষকরা এ জাতের পাটই বেশি আবাদ করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে পাটের ভালো ফলন হয়েছে। চলতি বছর রাজশাহীতে ১৪ হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যা গেলবারের উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার হেক্টর বেশি। বৃষ্টির পানি থাকায় এখন পুরোদমে চলছে পাট কাটা ও জাগ দেওয়ার কাজ। এরইমধ্যে ৬০ শতাংশ জমির পাট কাটা শেষ হয়েছে।

অনেকেই পাট কেটে জাগ দেওয়ার কাজ করছেন। আর যারা কাটেননি তারা কাটতে শুরু করেছেন। পাট লাগানো ও পরিচর্যা করার পর এখন পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও শুকোনো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুকোনোর পর তুলবেন বাজারে।

পবা উপজেলার মথুরা গ্রামের পাটচাষি হারেজ আলী বাংলানিউজকে জানান, গত বছরের আগের বছর পাটের ভালো দাম পেয়েছিলেন। গেলবার বাজার খারাপ ছিল। তবে এ বছর আবারও পাটের দাম ভালো। তাই এবার সাত বিঘাজমিতে পাটের আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় জলাশয়ে পানি আছে। তাই পাট জাগ দেওয়ার জন্য কোনো কষ্ট হচ্ছে না। সবমিলিয়ে সময়মতো পাট জাগ দিয়ে শুকিয়ে বাজারে তুলতে পারলে উপযুক্ত দাম পাবেন এবং মুনাফা হবে বলে আশা করছেন এ পাটচাষি।

Jute growers happy over production, fair price in Rajshahi region ...উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোস্তফা জামান জানান, এক বিঘা জমিতে পাটের চাষ করতে সাধারণত ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিঘাপ্রতি ১২ থেকে ১৪ মণ পর্যন্ত পাটের আবাদ হয়। বর্তমানে বাজারে ভালো মানের পাটের দাম ২ হাজার টাকা মণ। এছাড়া মাঝারি মানের পাট প্রতিমণ ১ হাজার ৮০০ এবং তার চেয়ে একটু খারাপ মানের পাট এক হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাটের বাজার ভালো। সময়মতো জাগ দিয়ে বাজারে তুলতে পারলে খরচ বাদে মুনাফার মুখ দেখা যাবে বলেও আশার কথা জানান এ কৃষক।

পাশের মল্লিকপুর গ্রামের পাটচাষি রবিউল আলম জানান, চাষাবাদ ভালো হলেও প্রতিবছর মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের বুদ্ধি ও পুঁজি খাটিয়ে কৃষকদের ঘর থেকে এ পাট কম দামে কিনে গুদামজাত করে রাখেন। বাজারে যখন সব পাট শেষ হয়ে যাবে তখন তারা বেশি দামে এ পাট বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা লুটবেন। বেশিরভাগ সময় কৃষকের সোনালি ফসল নিয়ে তাই মুনাফালোভীরাই ছিনিমিনি খেলেন।

তারা নিজেদের সুবিধা বুঝে বাজারে কখনও দামের পতন ঘটায় কখনও আবার কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বাড়তি লাভ আদায় করে। মাঝখানে পড়ে কষ্ট করেন কৃষক। আবার ক্ষতিগ্রস্ত হন ওই কৃষকই। তাই পাটচাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে এবং সোনালি আঁশের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এর দাম বেঁধে দেওয়ার দাবিও জানান এ কৃষক।

Foundation - Pure Jute Pure Juteরাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল হক বাংলানিউজকে জানান, এবার পাটের জন্য ভালো আবহাওয়া ছিল। তাই রাজশাহীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। বর্ষার বৃষ্টিতেও তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। আর উপযুক্ত জলাশয় ভরা পেয়েছেন পাটচাষিরা। এতে শেষসময়ে অনেকটা উপকারই হয়েছে চাষিদের। আর গেল পাঁচ বছরের তুলনায় এবার পাটের গুণগতমান ভালো। বাজারেও ভালো দাম রয়েছে। সময়মতো পাট জাগ দিয়ে শুকিয়ে বাজারে তুলতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবে বলেও আশা করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর