হাওর বার্তা ডেস্কঃ আষাঢ়-শ্রাবণের বৃষ্টিতে জমিতে জমানো পানিতে কুড়িগ্রামের কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণ করে থাকেন। কিন্তু বন্যায় নষ্ট হওয়া উঠতি ফসলের মধ্যে ছিলো আমন বীজতলা। এই বীজতলা নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা পড়েন চরম বিপাকে। দফায় দফায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার কৃষক আমন চাষে এবার ঘুরে দাঁড়াতে চায়।
জেলার ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তাসহ ১৬ নদী অববাহিকার ৯ উপজেলায় তৃতীয় দফার বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছে এখানকার কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে জেলায় বন্যায় অন্যান্য ফসলের মধ্যে শুধুমাত্র ১ হাজার ৭১ হেক্টর জমির আমন বীজতলা নষ্ট হয়েছে।
বীজতলা নষ্ট হলেও বন্যা পরবর্তী সময়ে এখানকার কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে আমন চারা রোপণে চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমন ধানের চারার তীব্র সংকট ও দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। যে কারণে বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার কৃষক।
আমনের চারা পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। তবুও কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
পাইকেরছড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম জানান, ৪ বিঘা জমির আমন বীজতলা বন্যায় সম্পূর্ণ ডুবে পঁচে যায়। এখন স্থানীয় হাট থেকে চড়া দামে আমন চারা কিনে আমন ধান রোপণের চেষ্টা করছেন। বন্যা পরবর্তী সময়ে তাকে বন্যার ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এক বিঘা জমিতে আমন চারা রোপণ করতে শ্রমিক মূল্য দিতে হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
স্থানীয় চরবলদিয়া গ্রামের কৃষক রাজ্জাক জানান, আমন বীজতলা বন্যায় নষ্ট হয়ে তিনি চরম বিপাকে পড়েছেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আমন চারার খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু চাহিদা মত আমন চারা পাচ্ছেন না।
স্থানীয় কৃষক হান্নানুর জানান, ৫ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আমন চারা সংরক্ষণের জন্য বলান করে রাখেন। এই ধান চারা বন্যায় ক্ষতি হয়নি। সংরক্ষিত আমন চারাগুলো নিজের জমিতে রোপণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। এরইমধ্যে আমন চারা বিঘা প্রতি ১৫০০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন বলেও জানান
কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, বন্যায় এবার কুড়িগ্রামে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ ট্রে সিস্টেম, ভাসমান পদ্ধতি ও কমিউনিটি বীজ তলা তৈরি করতে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
এখানে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে রোপণ যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষকদের ১৬ বিঘা জমিতে আমন চারা রোপণ করে দেয়া হবে। ৬৬০ জন কৃষককে ১ বিঘা করে মোট ৬৬০ বিঘা জমিতে রোপণের জন্য আমন চারা প্রদান করা হবে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান রাজু ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, জেলার ৯ টি উপজেলায় এবার আমনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমি। এখানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ হাজার ৭১ হেক্টর জমির
আমন বীজতলা।
তিনি আরো বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে আমনের লক্ষমাত্রার অর্জনকে ঠিক রাখতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি প্রণোদনাসহ আমন চারা বিতরণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।