ঢাকা ০৬:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্দি জীবনে যেমন আছেন তারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৭:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ অগাস্ট ২০২০
  • ১৭৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতার হন বেশ কয়েকজন রাঘব বোয়াল। নিজ নিজ জগতে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এসব ব্যক্তিরা অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দেশ-বিদেশে কাটিয়েছেন বিলাসী জীবন। একেকজন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন দেশ-বিদেশে। চলেছেন দামি গাড়িতে সশস্ত্র প্রহরায়। যখন যা খুশি তাই করেছেন চোখের ইশারায়। প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারা চালিয়ে গেছেন অবৈধ কর্মকাণ্ড। এদিকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ধন-সম্পদ দেখে বিস্মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। তবে যতটুকু উদ্ধার করা হয়েছে তার চাইতেও অনেক বেশি অর্থ তারা বিদেশে পাচার করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গ্রেফতারের পর এসব রাঘব বোয়ালরা এখন দিন কাটাচ্ছেন কারাগারের বদ্ধ কক্ষে। ক্ষমতাধর প্রভবশালী এসব ব্যক্তিদের কেউ কেউ চিকিৎসার নামে আছেন হাসপাতালে। রাজনৈতিক ও অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় অন্য বন্দিদের কাছ থেকে বিশেষ খাতির-যত্নও পাচ্ছেন তারা।

ক্যাসিনোকাণ্ডে ২০১৯ সালে গ্রেফতার হন যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে একই বছর গ্রেফতার হন বহুল আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীম। পরবর্তীতে সম্রাট ও খালেদ মাহমুদকে সংগঠনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। নানান অপরাধের অভিযোগে চলতি বছর গ্রেফতার হন যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। তাকেও পরে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

করোনা টেস্ট নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে চলতি বছরে গ্রেফতার হন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরী। পরে ডা. সাবরিনাকে হাসপাতাল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেফতার হন সম্রাট। গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন টাকার কুমির। রাজধানীর কাকরাইলে তিনি বহুতল একটি ভবন দখল করে সেখানে গড়ে তোলেন তার অপরাধের সাম্রাজ্য। রাজধানীর ক্যাসিনো কিংবা জুয়ার আসরগুলোর অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি।

কথিত আছে, সম্রাটকে ভাগ না দিয়ে ঢাকা শহরে কোথাও জুয়া খেলা সম্ভব ছিল না। ক্ষমতাসীন দলের ভেতর তিনি ছিলেন বেশ আলোচিত। বিশেষ করে দলের যেকোনো প্রোগ্রামে তার বিশাল শো-ডাউন নজর কাড়তো সবার। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সম্রাটকে গ্রেফতারের পরদিনই চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি করা হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। এক সপ্তাহ পর মাদক, অস্ত্র ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সম্রাটকে নেয়া হয় কাশিমপুর কারাগারে। গত বছরের ২৪ নভেম্বর বুকে ব্যথার কথা বলে কারাগারের চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ভর্তি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। গত প্রায় ৮ মাস বিএসএমএমইউ’তেই আছেন মুকুটহীন এই সম্রাট। অভিযোগ আছে, তার সঙ্গে সেখানে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বিশ্বস্ত সহযোগীরা।

এর আগে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন বহুল আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীম। গণপূর্তসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বড় ঠিকাদারি কাজগুলো ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। এজন্য তিনি শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিতেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। গ্রেফতারের পর সম্রাটের মতো তিনিও চিকিৎসার নামে আছেন বিএসএমএমইউ’তে। অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালে থাকার অজুহাত হিসেবে শামীম তার ভাঙা ডান হাতের ক্ষতস্থান থেকে প্লেট সরাতে রাজি হচ্ছেন না।

বিএসএমএমইউ এর হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডাক্তার চৌধুরী মেশকাত আহম্মেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, সম্রাটের অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন আছে। এজন্য আমরা মেডিকেল বোর্ডও গঠন করেছিলাম। ওষুধ দিয়ে তা সারাতে পারিনি। কারা কর্তৃপক্ষকে বলেছি তাকে এমন কোথাও নেয়া হোক যেখানে তার হৃৎস্পন্দন সমস্যার ভালো চিকিৎসা হয়।

অন্যদিকে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা জানিয়েছেন, কারাবন্দিদের স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাদের বাইরে হাসপাতালে পাঠানো হয়। রুটিন প্রসিডিউর হিসেবে নিয়মিত তাদের খোঁজখবর নেয়া হয়। চিকিৎসকদের কাছে স্বাস্থ্য পুনঃরুদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। সেই তথ্য পেলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কারাগারে ফেরত নিয়ে আসি।

রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে ‘ক্যাসিনো’ চালানোর অভিযোগে ২০১৯ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিজ বাসা থেকে র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার করা হয় খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে রাঘব বোয়ালদের মধ্যে তিনিই প্রথম গ্রেফতার হন। তার কাছ থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। তিনি ছিলেন সম্রাটের ডান হাত। সম্রাটের হয়ে তিনিই মূলত নিয়ন্ত্রণ করতেন জুয়ার আসরগুলো। তার বিরুদ্ধেও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। দেশেও তিনি গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে বন্দি আছেন অপরাধ জগতের প্রভাবশালী এ ব্যক্তি।

চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। পরে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসাই ছিলো তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু ব্যক্তি ও বিদেশিরাই ছিল এসবের গ্রাহক।

পাপিয়াকে গ্রেফতারকারী র‍্যাব কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, জাল নোটের ব্যবসা, চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্য, জমি দখল-বেদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যার সঙ্গে পাপিয়া জড়িত নন। বিপুল অর্থ-বিত্তের অধিকারী, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে হট কানেকশনধারী এই নারী এখন বন্দি আছেন কাশিমপুর কারাগারে।

কাশিমপুর কারা সূত্রে জানা গেছে, কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশেষ একটি সেলে একাই রাখা হয়েছে পাপিয়াকে। কখনো বই পড়ে কখনো বা কারাফটকের ভেতর পায়চারী বা শুয়ে-বসে-ঘুমিয়ে দিন কাটছে এই বিলাসী রমনীর।

করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় গত ১৩ জুলাই গ্রেফতার হন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন। গ্রেফতারের পর তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সামিয়কভাবে চাকরিচ্যুত করে। প্রতারণা করা অর্থে বিলাসী জীবন কাটাতেন এই সুদর্শনা চিকিৎসক ও তার স্বামী। বর্তমানে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের একটি কক্ষে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

করোনা রিপোর্ট নিয়ে সবচে বড় প্রতারণা অভিযোগ উঠে রিজেন্ট গ্রুপ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে উঠে নানাবিধ প্রতারণার অভিযোগ। গত ১৫ জুলাই সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, জাল টাকা, প্রতারণাসহ বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ ৫ আগস্ট বুধবার তাকে সাতক্ষীরার দেবহাটা থানায় অস্ত্র আইনে করা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বন্দি জীবনে যেমন আছেন তারা

আপডেট টাইম : ১২:২৭:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ অগাস্ট ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতার হন বেশ কয়েকজন রাঘব বোয়াল। নিজ নিজ জগতে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এসব ব্যক্তিরা অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দেশ-বিদেশে কাটিয়েছেন বিলাসী জীবন। একেকজন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন দেশ-বিদেশে। চলেছেন দামি গাড়িতে সশস্ত্র প্রহরায়। যখন যা খুশি তাই করেছেন চোখের ইশারায়। প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারা চালিয়ে গেছেন অবৈধ কর্মকাণ্ড। এদিকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ধন-সম্পদ দেখে বিস্মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। তবে যতটুকু উদ্ধার করা হয়েছে তার চাইতেও অনেক বেশি অর্থ তারা বিদেশে পাচার করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গ্রেফতারের পর এসব রাঘব বোয়ালরা এখন দিন কাটাচ্ছেন কারাগারের বদ্ধ কক্ষে। ক্ষমতাধর প্রভবশালী এসব ব্যক্তিদের কেউ কেউ চিকিৎসার নামে আছেন হাসপাতালে। রাজনৈতিক ও অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় অন্য বন্দিদের কাছ থেকে বিশেষ খাতির-যত্নও পাচ্ছেন তারা।

ক্যাসিনোকাণ্ডে ২০১৯ সালে গ্রেফতার হন যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে একই বছর গ্রেফতার হন বহুল আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীম। পরবর্তীতে সম্রাট ও খালেদ মাহমুদকে সংগঠনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। নানান অপরাধের অভিযোগে চলতি বছর গ্রেফতার হন যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। তাকেও পরে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

করোনা টেস্ট নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে চলতি বছরে গ্রেফতার হন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরী। পরে ডা. সাবরিনাকে হাসপাতাল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেফতার হন সম্রাট। গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন টাকার কুমির। রাজধানীর কাকরাইলে তিনি বহুতল একটি ভবন দখল করে সেখানে গড়ে তোলেন তার অপরাধের সাম্রাজ্য। রাজধানীর ক্যাসিনো কিংবা জুয়ার আসরগুলোর অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি।

কথিত আছে, সম্রাটকে ভাগ না দিয়ে ঢাকা শহরে কোথাও জুয়া খেলা সম্ভব ছিল না। ক্ষমতাসীন দলের ভেতর তিনি ছিলেন বেশ আলোচিত। বিশেষ করে দলের যেকোনো প্রোগ্রামে তার বিশাল শো-ডাউন নজর কাড়তো সবার। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সম্রাটকে গ্রেফতারের পরদিনই চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি করা হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। এক সপ্তাহ পর মাদক, অস্ত্র ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সম্রাটকে নেয়া হয় কাশিমপুর কারাগারে। গত বছরের ২৪ নভেম্বর বুকে ব্যথার কথা বলে কারাগারের চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ভর্তি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। গত প্রায় ৮ মাস বিএসএমএমইউ’তেই আছেন মুকুটহীন এই সম্রাট। অভিযোগ আছে, তার সঙ্গে সেখানে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বিশ্বস্ত সহযোগীরা।

এর আগে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন বহুল আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীম। গণপূর্তসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বড় ঠিকাদারি কাজগুলো ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। এজন্য তিনি শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিতেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। গ্রেফতারের পর সম্রাটের মতো তিনিও চিকিৎসার নামে আছেন বিএসএমএমইউ’তে। অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালে থাকার অজুহাত হিসেবে শামীম তার ভাঙা ডান হাতের ক্ষতস্থান থেকে প্লেট সরাতে রাজি হচ্ছেন না।

বিএসএমএমইউ এর হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডাক্তার চৌধুরী মেশকাত আহম্মেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, সম্রাটের অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন আছে। এজন্য আমরা মেডিকেল বোর্ডও গঠন করেছিলাম। ওষুধ দিয়ে তা সারাতে পারিনি। কারা কর্তৃপক্ষকে বলেছি তাকে এমন কোথাও নেয়া হোক যেখানে তার হৃৎস্পন্দন সমস্যার ভালো চিকিৎসা হয়।

অন্যদিকে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা জানিয়েছেন, কারাবন্দিদের স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাদের বাইরে হাসপাতালে পাঠানো হয়। রুটিন প্রসিডিউর হিসেবে নিয়মিত তাদের খোঁজখবর নেয়া হয়। চিকিৎসকদের কাছে স্বাস্থ্য পুনঃরুদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। সেই তথ্য পেলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কারাগারে ফেরত নিয়ে আসি।

রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে ‘ক্যাসিনো’ চালানোর অভিযোগে ২০১৯ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিজ বাসা থেকে র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার করা হয় খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে রাঘব বোয়ালদের মধ্যে তিনিই প্রথম গ্রেফতার হন। তার কাছ থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। তিনি ছিলেন সম্রাটের ডান হাত। সম্রাটের হয়ে তিনিই মূলত নিয়ন্ত্রণ করতেন জুয়ার আসরগুলো। তার বিরুদ্ধেও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। দেশেও তিনি গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে বন্দি আছেন অপরাধ জগতের প্রভাবশালী এ ব্যক্তি।

চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। পরে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসাই ছিলো তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু ব্যক্তি ও বিদেশিরাই ছিল এসবের গ্রাহক।

পাপিয়াকে গ্রেফতারকারী র‍্যাব কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, জাল নোটের ব্যবসা, চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্য, জমি দখল-বেদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যার সঙ্গে পাপিয়া জড়িত নন। বিপুল অর্থ-বিত্তের অধিকারী, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে হট কানেকশনধারী এই নারী এখন বন্দি আছেন কাশিমপুর কারাগারে।

কাশিমপুর কারা সূত্রে জানা গেছে, কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশেষ একটি সেলে একাই রাখা হয়েছে পাপিয়াকে। কখনো বই পড়ে কখনো বা কারাফটকের ভেতর পায়চারী বা শুয়ে-বসে-ঘুমিয়ে দিন কাটছে এই বিলাসী রমনীর।

করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় গত ১৩ জুলাই গ্রেফতার হন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন। গ্রেফতারের পর তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সামিয়কভাবে চাকরিচ্যুত করে। প্রতারণা করা অর্থে বিলাসী জীবন কাটাতেন এই সুদর্শনা চিকিৎসক ও তার স্বামী। বর্তমানে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের একটি কক্ষে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

করোনা রিপোর্ট নিয়ে সবচে বড় প্রতারণা অভিযোগ উঠে রিজেন্ট গ্রুপ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে উঠে নানাবিধ প্রতারণার অভিযোগ। গত ১৫ জুলাই সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, জাল টাকা, প্রতারণাসহ বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ ৫ আগস্ট বুধবার তাকে সাতক্ষীরার দেবহাটা থানায় অস্ত্র আইনে করা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।