ঢাকা ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের দুর্নীতি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আবার তদন্ত হবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৫:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
  • ১৮৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একটি তদন্ত রিপোর্টকে বিতর্কিত করার জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ। কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের দুর্নীতি তদন্ত করতে গিয়ে তারা এমন একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন যিনি সংশ্লিষ্ট সময়ে ঐ কারাগারের দায়িত্বেই ছিলেন না। এখন ঐ তদন্ত রিপোর্টটির আবারও তদন্ত হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান ইত্তেফাককে বলেন, এরকম অভিযোগ পেয়েছি আমরা। বিষয়টির তদন্ত করা হবে।

২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত কুষ্টিয়া কারাগারে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে সেগুলোর তদন্ত করার উদ্যোগ নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন এবং উপসচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গত বছরের ১৬ ও ১৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলা কারাগার সরেজমিন তদন্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের কাছে একজন ডিআইজি, কয়েক জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে একটি রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে ঐ কারাগারের সাবেক জেলার এস এম মহিউদ্দিন হায়দারের নাম দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করেছে। কিন্তু কারা সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি পদোন্নতি লাভ করে নতুন কর্মস্থল বাগেরহাট জেলা কারাগারে সিনিয়র জেলার হিসেবে যোগ দেন এস এম মহিউদ্দিন হায়দার। তদন্ত রিপোর্টে তার নাম আসায় অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। কারণ যে সময়ের দুর্নীতির তদন্ত হয়েছে সে সময়ের ২০ মাস আগেই মহিউদ্দিন হায়দার কুষ্টিয়া কারাগার ছাড়েন।

তদন্ত কমিটি অন্য কয়েক জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও তদন্ত করেন। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণও পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এসবের মধ্যে রয়েছে ক্যান্টিনের আয়-ব্যয়ের হিসাবে গরমিল, ক্যান্টিনে উদ্বৃত্ত খরচ করা, বন্দি ও কারারক্ষী কল্যাণে কোনো টাকা খরচ না করা, জেল সুপার নিজের ইচ্ছামতো ক্যান্টিনের লাভ্যাংশ খরচ করা প্রভৃতি। এসব ক্ষেত্রে জেল সুপার জাকের হোসেন এবং হিসাব রক্ষক আজহার আলীর আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি স্পষ্ট করেছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এই ১৬ মাসে তাদের দায়িত্বকালে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের খাদ্য নিম্নমানের ছিল। বন্দিদের নির্ধারিত পরিমাণ খাবার সরবরাহ না করে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত্ করেছেন তারা। এছাড়া কারাগারে আটক বন্দিদের স্বজন থেকে জেল সুপার টাকা আদায় করে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তা ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন। এছাড়া কারাগারের ভেতর বন্দিদের চোখ ও হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালানো হতো। এ ঘটনায় পাঁচ কারারক্ষীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এরা হলেন—কারারক্ষী নুরুজ্জামান, সামসুল হক, মাহফুজুর রহমান, মজিবর রহমান ও তপন কুমার হাওলাদার।

কারাগারের ভিতর মাদকসহ নিষিদ্ধ মালামাল প্রবেশ ও বিক্রির পেছনে জেল সুপারের নিয়ন্ত্রিত কারারক্ষীরা জড়িত ছিলেন। এরা হলেন—দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, সহকারী প্রধান কারারক্ষী শরিফুল ইসলাম, গেট চাবি কারারক্ষী সাইদুল ইসলাম, কারারক্ষী বাদল হোসেন, ফারুক রহমানসহ আরো পাঁচ জন কারারক্ষী।

যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ : তদন্ত কমিটি কুষ্টিয়া কারাগারের যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে তারা হলেন—কারারক্ষী আবু সাইদ, জিয়াউর রহমান, কারারক্ষী সোহেল রানা, আনিচুর রহমান, হারুন অর রশিদ, মাসুদ রানা, আরিফুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, আশিকুর রহমান, রাশেদুল ইসলাম, মামুন হোসেন-২, জসিম উদ্দিন, আমিরুল ইসলাম, আফছার হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম রেজা, নুরুজ্জামান, সামসুল হক, মাহফুজুর রহমান, মাহাবুবর রহমান, মামুন হোসেন-১, দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, সাইদুল ইসলাম, বাদল হোসেন, ফারুক আহম্মেদ, মজিবার রহমান, খাদ্যগুদাম সহকারী মনিরুজ্জামান, সহকারী প্রধান কারারক্ষী শরিফুল ইসলাম, প্রধান কারারক্ষী শফিকুল ইসলাম, মজিবর রহমান, তপন কুমার হালদার, হিসাব রক্ষক আজহার আলী, প্রাক্তন জেলার এস এম মহিউদ্দিন হায়দার এবং জেল সুপার জাকের হোসেন সরাসরি জড়িত। এদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করছে তদন্ত কমিটি। এর পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার কারণে যশোর বিভাগীয় ডিআইজির বিরুদ্ধে বিধিগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা কারাগারের সিনিয়র জেলার এস এম মহিউদ্দিন হায়দার বলেন, ২০১৬ সালের ৫ জুন থেকে ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আমি কুষ্টিয়া কারাগারের জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। অথচ আমি বুঝতে পারছি না, কী কারণে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হলো? আমার কোনো বক্তব্যই নেয়নি তদন্ত কমিটি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ক্যাটরিনার হাতে ২০ বার থাপ্পড় খেয়েছিলেন ইমরান খান

কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের দুর্নীতি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আবার তদন্ত হবে

আপডেট টাইম : ১০:১৫:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একটি তদন্ত রিপোর্টকে বিতর্কিত করার জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ। কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের দুর্নীতি তদন্ত করতে গিয়ে তারা এমন একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন যিনি সংশ্লিষ্ট সময়ে ঐ কারাগারের দায়িত্বেই ছিলেন না। এখন ঐ তদন্ত রিপোর্টটির আবারও তদন্ত হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান ইত্তেফাককে বলেন, এরকম অভিযোগ পেয়েছি আমরা। বিষয়টির তদন্ত করা হবে।

২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত কুষ্টিয়া কারাগারে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে সেগুলোর তদন্ত করার উদ্যোগ নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন এবং উপসচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গত বছরের ১৬ ও ১৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলা কারাগার সরেজমিন তদন্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের কাছে একজন ডিআইজি, কয়েক জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে একটি রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে ঐ কারাগারের সাবেক জেলার এস এম মহিউদ্দিন হায়দারের নাম দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করেছে। কিন্তু কারা সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি পদোন্নতি লাভ করে নতুন কর্মস্থল বাগেরহাট জেলা কারাগারে সিনিয়র জেলার হিসেবে যোগ দেন এস এম মহিউদ্দিন হায়দার। তদন্ত রিপোর্টে তার নাম আসায় অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। কারণ যে সময়ের দুর্নীতির তদন্ত হয়েছে সে সময়ের ২০ মাস আগেই মহিউদ্দিন হায়দার কুষ্টিয়া কারাগার ছাড়েন।

তদন্ত কমিটি অন্য কয়েক জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও তদন্ত করেন। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণও পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এসবের মধ্যে রয়েছে ক্যান্টিনের আয়-ব্যয়ের হিসাবে গরমিল, ক্যান্টিনে উদ্বৃত্ত খরচ করা, বন্দি ও কারারক্ষী কল্যাণে কোনো টাকা খরচ না করা, জেল সুপার নিজের ইচ্ছামতো ক্যান্টিনের লাভ্যাংশ খরচ করা প্রভৃতি। এসব ক্ষেত্রে জেল সুপার জাকের হোসেন এবং হিসাব রক্ষক আজহার আলীর আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি স্পষ্ট করেছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এই ১৬ মাসে তাদের দায়িত্বকালে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের খাদ্য নিম্নমানের ছিল। বন্দিদের নির্ধারিত পরিমাণ খাবার সরবরাহ না করে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত্ করেছেন তারা। এছাড়া কারাগারে আটক বন্দিদের স্বজন থেকে জেল সুপার টাকা আদায় করে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তা ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন। এছাড়া কারাগারের ভেতর বন্দিদের চোখ ও হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালানো হতো। এ ঘটনায় পাঁচ কারারক্ষীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এরা হলেন—কারারক্ষী নুরুজ্জামান, সামসুল হক, মাহফুজুর রহমান, মজিবর রহমান ও তপন কুমার হাওলাদার।

কারাগারের ভিতর মাদকসহ নিষিদ্ধ মালামাল প্রবেশ ও বিক্রির পেছনে জেল সুপারের নিয়ন্ত্রিত কারারক্ষীরা জড়িত ছিলেন। এরা হলেন—দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, সহকারী প্রধান কারারক্ষী শরিফুল ইসলাম, গেট চাবি কারারক্ষী সাইদুল ইসলাম, কারারক্ষী বাদল হোসেন, ফারুক রহমানসহ আরো পাঁচ জন কারারক্ষী।

যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ : তদন্ত কমিটি কুষ্টিয়া কারাগারের যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে তারা হলেন—কারারক্ষী আবু সাইদ, জিয়াউর রহমান, কারারক্ষী সোহেল রানা, আনিচুর রহমান, হারুন অর রশিদ, মাসুদ রানা, আরিফুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, আশিকুর রহমান, রাশেদুল ইসলাম, মামুন হোসেন-২, জসিম উদ্দিন, আমিরুল ইসলাম, আফছার হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম রেজা, নুরুজ্জামান, সামসুল হক, মাহফুজুর রহমান, মাহাবুবর রহমান, মামুন হোসেন-১, দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, সাইদুল ইসলাম, বাদল হোসেন, ফারুক আহম্মেদ, মজিবার রহমান, খাদ্যগুদাম সহকারী মনিরুজ্জামান, সহকারী প্রধান কারারক্ষী শরিফুল ইসলাম, প্রধান কারারক্ষী শফিকুল ইসলাম, মজিবর রহমান, তপন কুমার হালদার, হিসাব রক্ষক আজহার আলী, প্রাক্তন জেলার এস এম মহিউদ্দিন হায়দার এবং জেল সুপার জাকের হোসেন সরাসরি জড়িত। এদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করছে তদন্ত কমিটি। এর পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার কারণে যশোর বিভাগীয় ডিআইজির বিরুদ্ধে বিধিগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা কারাগারের সিনিয়র জেলার এস এম মহিউদ্দিন হায়দার বলেন, ২০১৬ সালের ৫ জুন থেকে ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আমি কুষ্টিয়া কারাগারের জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। অথচ আমি বুঝতে পারছি না, কী কারণে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হলো? আমার কোনো বক্তব্যই নেয়নি তদন্ত কমিটি।