ঢাকা ০৭:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নবজাতকের শ্রেষ্ঠ খাবার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৫:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫
  • ২৪৫ বার

নবজাতক সন্তানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার হলো মায়ের বুকের দুধ। এর মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে শিশুর গড়ন ও বিকাশ হয়। সন্তান জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের শালদুধ খাওয়াতে হয়। শালদুধ যা কলোস্ট্রাম নামেও অভিহিত। শালদুধ নবজাতক সহজেই হজম করতে পারে। এটি শিশুর জন্য রোগ প্রতিরোধী প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে।

একটা সময় ছিল যখন মানুষ নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের ওপরই বেশি নির্ভর করতেন। তখন ৬ মাসের বেশি সময় ধরে মায়ের দুধই শিশুকে খাওয়ানো হত। তারপর ধীরে ধীরে বাজারে শিশুখাদ্য আসে। মায়েরাও এ খাদ্য খাওয়াতে অভ্যস্ত হলেন। যা গোটা বিশ্বে শিশুর দুগ্ধজাত পণ্যের ৫০ বিলিয়ন ডলারের বাজার সৃষ্টি করে। তবে বাজারের দুধের ক্ষতিকর দিক ও ভয়াবহতার কারণে ব্রিটেনের মত দেশেও ‘ব্রেস্ট ফিডিং উইক’ পালন করা হয়। যাতে বুকের দুধের বিষয়ে মায়েদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভবপর হয়।

শিশুখাদ্য বিপণনের ব্যাপারে দেশে আইনও রয়েছে। তবে সে আইন অনেকক্ষেত্রেই মানা হয় না। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৯৮৪ সালের অধ্যাদেশটি রহিত করে শিশুখাদ্য সম্পর্কিত ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও তা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ)’ নামের এক নতুন আইন পাস করা হয়।

আইন থাকলেও তা প্রয়োগ না থাকায় বিকল্প শিশুখাদ্যের বিক্রয় ও বিপণন বন্ধ হচ্ছে না। এতে একদিকে বেড়েছে শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারীদের দৌরাত্ম্য, অন্যদিকে কমছে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর হার।

বাজারে শিশুখাদ্যের অধিক প্রভাব, মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে না পারা, মায়ের দুধপানের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক সরকারি প্রচারণায় ধারাবাহিকতা অনুপস্থিতি শিশু জন্মের প্রথম ছয় মাসও মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে বলছেন
শিশু বিশেষজ্ঞরা।

মাতৃদুগ্ধ পানের উপকারিতা

– মাতৃদুগ্ধ পানে শিশুকে অন্ত্রের সমস্যা থেকে রক্ষা করে। এই দুধ তাড়াতাড়ি হজম হয় এবং এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

– মাতৃদুগ্ধ শিশুর নাক ও গলার ঝিল্লির উপর আস্তরণ তৈরি করে হাঁপানি ও কানের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। গরুর দুধে অনেক শিশুর অ্যালার্জি হয়। কিন্তু মাতৃদুগ্ধ ১০০ শতাংশ নিরাপদ।

– শৈশবে লিউকোমিয়া হওয়া থেকে মায়ের দুধ রক্ষা করে। বড় বয়সে ডায়াবিটিস টাইপ ১ এবং উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে।

– মাতৃদুগ্ধ পানে শিশুর বুদ্ধি বাড়ে। প্রথমত শিশুর সঙ্গে মায়ের একটা বন্ধন তৈরি হয় এবং দ্বিতীয়ত মাতৃদুগ্ধ পানে এমন ফ্যাটি এসিড থাকে যা শিশুর মগজের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে।

– গর্ভাবস্থার পরে বুকের দুধ খাওয়ালে মায়ে স্তন ও ডিম্বাশয়ে ক্যান্সারের আশঙ্কা কম থাকে।

এছাড়া মায়ের দুধে ১০৮ প্রকার উপকারী উপাদান আছে, যা আর কোনো বিকল্প খাবারে পাওয়া যায় না। মায়ের দুধপানে শিশুর স্মরণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি এবং আচার-ব্যবহার, সামাজিকতা ও মানুষের প্রতি সুন্দর আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

সরকারি হিসাবে, ১৯৯৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ছয় মাস বয়সী শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের হার ছিল ৪৩ শতাংশ। ২০১১ সালে তা বেড়ে হয় ৬৪ শতাংশ। কিন্তু ২০১৪ সালে তা কমে হয় ৫৫ শতাংশ। এর জন্য দায়ী করা হয় বেসরকারি শিশুখাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর তৎপরতা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারির অভাবকেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নবজাতকের শ্রেষ্ঠ খাবার

আপডেট টাইম : ১২:০৫:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

নবজাতক সন্তানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার হলো মায়ের বুকের দুধ। এর মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে শিশুর গড়ন ও বিকাশ হয়। সন্তান জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের শালদুধ খাওয়াতে হয়। শালদুধ যা কলোস্ট্রাম নামেও অভিহিত। শালদুধ নবজাতক সহজেই হজম করতে পারে। এটি শিশুর জন্য রোগ প্রতিরোধী প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে।

একটা সময় ছিল যখন মানুষ নবজাতকের জন্য মায়ের দুধের ওপরই বেশি নির্ভর করতেন। তখন ৬ মাসের বেশি সময় ধরে মায়ের দুধই শিশুকে খাওয়ানো হত। তারপর ধীরে ধীরে বাজারে শিশুখাদ্য আসে। মায়েরাও এ খাদ্য খাওয়াতে অভ্যস্ত হলেন। যা গোটা বিশ্বে শিশুর দুগ্ধজাত পণ্যের ৫০ বিলিয়ন ডলারের বাজার সৃষ্টি করে। তবে বাজারের দুধের ক্ষতিকর দিক ও ভয়াবহতার কারণে ব্রিটেনের মত দেশেও ‘ব্রেস্ট ফিডিং উইক’ পালন করা হয়। যাতে বুকের দুধের বিষয়ে মায়েদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভবপর হয়।

শিশুখাদ্য বিপণনের ব্যাপারে দেশে আইনও রয়েছে। তবে সে আইন অনেকক্ষেত্রেই মানা হয় না। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৯৮৪ সালের অধ্যাদেশটি রহিত করে শিশুখাদ্য সম্পর্কিত ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও তা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ)’ নামের এক নতুন আইন পাস করা হয়।

আইন থাকলেও তা প্রয়োগ না থাকায় বিকল্প শিশুখাদ্যের বিক্রয় ও বিপণন বন্ধ হচ্ছে না। এতে একদিকে বেড়েছে শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারীদের দৌরাত্ম্য, অন্যদিকে কমছে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর হার।

বাজারে শিশুখাদ্যের অধিক প্রভাব, মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে না পারা, মায়ের দুধপানের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক সরকারি প্রচারণায় ধারাবাহিকতা অনুপস্থিতি শিশু জন্মের প্রথম ছয় মাসও মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে বলছেন
শিশু বিশেষজ্ঞরা।

মাতৃদুগ্ধ পানের উপকারিতা

– মাতৃদুগ্ধ পানে শিশুকে অন্ত্রের সমস্যা থেকে রক্ষা করে। এই দুধ তাড়াতাড়ি হজম হয় এবং এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

– মাতৃদুগ্ধ শিশুর নাক ও গলার ঝিল্লির উপর আস্তরণ তৈরি করে হাঁপানি ও কানের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। গরুর দুধে অনেক শিশুর অ্যালার্জি হয়। কিন্তু মাতৃদুগ্ধ ১০০ শতাংশ নিরাপদ।

– শৈশবে লিউকোমিয়া হওয়া থেকে মায়ের দুধ রক্ষা করে। বড় বয়সে ডায়াবিটিস টাইপ ১ এবং উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে।

– মাতৃদুগ্ধ পানে শিশুর বুদ্ধি বাড়ে। প্রথমত শিশুর সঙ্গে মায়ের একটা বন্ধন তৈরি হয় এবং দ্বিতীয়ত মাতৃদুগ্ধ পানে এমন ফ্যাটি এসিড থাকে যা শিশুর মগজের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে।

– গর্ভাবস্থার পরে বুকের দুধ খাওয়ালে মায়ে স্তন ও ডিম্বাশয়ে ক্যান্সারের আশঙ্কা কম থাকে।

এছাড়া মায়ের দুধে ১০৮ প্রকার উপকারী উপাদান আছে, যা আর কোনো বিকল্প খাবারে পাওয়া যায় না। মায়ের দুধপানে শিশুর স্মরণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি এবং আচার-ব্যবহার, সামাজিকতা ও মানুষের প্রতি সুন্দর আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

সরকারি হিসাবে, ১৯৯৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ছয় মাস বয়সী শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের হার ছিল ৪৩ শতাংশ। ২০১১ সালে তা বেড়ে হয় ৬৪ শতাংশ। কিন্তু ২০১৪ সালে তা কমে হয় ৫৫ শতাংশ। এর জন্য দায়ী করা হয় বেসরকারি শিশুখাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর তৎপরতা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারির অভাবকেই।