ঢাকা ০৯:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আম্রপালি’তে দু’বছর ধরে স্বপ্ন বুনেছেন অমৃত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৪৯:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুলাই ২০২০
  • ২৭৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানুষকে বিষমুক্ত আম খাওয়াবেন-এমনটি স্বপ্ন তার। স্থানীয় কৃষি অফিসকে সাহায্যকারী হিসেবে পেয়ে মনোবল বেড়ে যায় দ্বিগুণ। এর সঙ্গে এসে যোগ হয় নিষ্ঠা আর কঠোর পরিশ্রম। এসব কিছুর সমন্বয়ে এখন প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে আম্রপালি জাতের আম।

দুই বছর রোদের উত্তাপ, শীতের তীব্রতা আর বৃষ্টিধারা গায়ে মেখে এ আম গাছগুলোকে পরিচর্যা করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নে আমচাষি অমৃত যাদব। দু’বছরের চেষ্টায় স্বার্থক এ আমচাষি।

সোমবার (২৯ জুন) দুপুরে এ আমচাষির আমবাগানে গিয়ে দেখা যায়, আমগাছগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট। কিন্তু প্রতিটি গাছই ফলে পরিপূর্ণ। পাখির বাসাও আছে দু’একটি আমগাছে।

আমচাষি অমৃত যাদব বাংলানিউজকে বলেন, মানুষকে বিষমুক্ত আম খাওয়াবো। পাশাপাশি নিজের পরিবারকেও- এমন স্বপ্ন থেকেই আমবাগান করা। জায়গা এখানে বেশি নয়, প্রায় ত্রিশ শতাংশ (১ বিঘা)। প্রথমে ভয় ভয় লাগছিল। স্থানীয় কৃষি বিভাগ যথেষ্ট সাহায্য করেছে আমাকে। তারপরও আমি কিছু টাকা ব্যয় করেছি এখানে।

গাছ থেকে আম সংগ্রহ করে পাকানো বিষয়ে অমৃত বলেন, কৃষি অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি প্রাকৃতিকভাবে আম পাকানো পদ্ধতি আয়ত্ত করেছি। এখন আমগুলো প্রাকৃতিক পদ্ধতি পাকানো চেষ্টা করবো।

আমের জাত প্রসঙ্গে এ আমচাষি বলেন, আমার বাগানের অধিকাংশই আম্রপালি জাতের আম। তবে অল্প কয়েকটা হাঁড়িভাঙ্গা, একটা গোপালভোগ আম গাছ রয়েছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমচাষি যাদবের আগ্রহের দিকটি বিবেচনা করে আমাদের কৃষি অফিস থেকে তাকে সত্তরটি চারা দেওয়া হয়। এগুলো সম্পূর্ণ ফ্রিতে। এর পর তাকে বিভিন্ন প্রকারের সার ও কীটনাশকও বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি মাঝে মাঝে এসে দেখতাম, সে একাই আমগাছগুলোর যত্নআত্তি করছেন।

আমগুলো কুসুমগরম পানিতে ডিটারজেন পাউডার মিশিয়ে ৫/১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর আমগুলো পানি থেকে তুলে কাপড়ে মুছে ‘এ’ এবং ‘বি’ গ্রেডিং করতে হবে। মানে সবচেয়ে ভালো আমগুলো গ্রেড-এ এর দিকে; কম ভালোগুলো গ্রেড-বি এভাবে। পরে খড়যুক্ত ক্যারেটে (প্লাস্টিকের ঝুড়ি) রেখে দিলেই দু’এক দিনের মাঝে আম পেকে যাবে। এটাই হলো আম পাকানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতি বলে জানান সাইফুল ইসলাম।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আম্রপালি’ খেতে খুবই সুস্বাদু। এটা অন্যরকম মিষ্টিজাতের আম। এটি ইন্ডিয়ান একটি জাত। আমাদের দেশে এই আমটিকে আমরা মডিফাই (উন্নতকরণ) করে ‘আম্রপালি’ নাম দিয়েছি। এটি বারি আম-৩। বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিচার্জ ইস্টটিটিউট কর্তৃক উদ্ভোবিত জনপ্রিয় জাতের ভ্যারাইটি।

চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি সারা বাংলাদেশে সব ধরণের আবহাওয়া এবং সব ধরণের মাটিতেই এই ভ্যারাইটি ভালো হয়। কলমের চারা যদি ৬ মাস বয়েসে সংগ্রহ করে লাগান তবে পরের বছরই ফুল আসে। যদিও আমরা সেই ফুলটি অর্থাৎ প্রথম আসা ফুলটি নিতে মানা করি এবং তখন ফুলগুলো ভেঙে দিলে এর পরের বছর ভালো করে ধরে।

‘আম্রপালি’ একটু বিলম্বিত ফল। আষাঢ় মাসের আগে কিন্তু পাকে না। একে আমাদের এগ্রিকালচারের ভাষায় মধ্যম লেট ভ্যারাইটি বলি। এই আম সাইজে ছোট এবং আঁশবিহীন বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আম্রপালি’তে দু’বছর ধরে স্বপ্ন বুনেছেন অমৃত

আপডেট টাইম : ০৩:৪৯:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানুষকে বিষমুক্ত আম খাওয়াবেন-এমনটি স্বপ্ন তার। স্থানীয় কৃষি অফিসকে সাহায্যকারী হিসেবে পেয়ে মনোবল বেড়ে যায় দ্বিগুণ। এর সঙ্গে এসে যোগ হয় নিষ্ঠা আর কঠোর পরিশ্রম। এসব কিছুর সমন্বয়ে এখন প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে আম্রপালি জাতের আম।

দুই বছর রোদের উত্তাপ, শীতের তীব্রতা আর বৃষ্টিধারা গায়ে মেখে এ আম গাছগুলোকে পরিচর্যা করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নে আমচাষি অমৃত যাদব। দু’বছরের চেষ্টায় স্বার্থক এ আমচাষি।

সোমবার (২৯ জুন) দুপুরে এ আমচাষির আমবাগানে গিয়ে দেখা যায়, আমগাছগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট। কিন্তু প্রতিটি গাছই ফলে পরিপূর্ণ। পাখির বাসাও আছে দু’একটি আমগাছে।

আমচাষি অমৃত যাদব বাংলানিউজকে বলেন, মানুষকে বিষমুক্ত আম খাওয়াবো। পাশাপাশি নিজের পরিবারকেও- এমন স্বপ্ন থেকেই আমবাগান করা। জায়গা এখানে বেশি নয়, প্রায় ত্রিশ শতাংশ (১ বিঘা)। প্রথমে ভয় ভয় লাগছিল। স্থানীয় কৃষি বিভাগ যথেষ্ট সাহায্য করেছে আমাকে। তারপরও আমি কিছু টাকা ব্যয় করেছি এখানে।

গাছ থেকে আম সংগ্রহ করে পাকানো বিষয়ে অমৃত বলেন, কৃষি অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি প্রাকৃতিকভাবে আম পাকানো পদ্ধতি আয়ত্ত করেছি। এখন আমগুলো প্রাকৃতিক পদ্ধতি পাকানো চেষ্টা করবো।

আমের জাত প্রসঙ্গে এ আমচাষি বলেন, আমার বাগানের অধিকাংশই আম্রপালি জাতের আম। তবে অল্প কয়েকটা হাঁড়িভাঙ্গা, একটা গোপালভোগ আম গাছ রয়েছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমচাষি যাদবের আগ্রহের দিকটি বিবেচনা করে আমাদের কৃষি অফিস থেকে তাকে সত্তরটি চারা দেওয়া হয়। এগুলো সম্পূর্ণ ফ্রিতে। এর পর তাকে বিভিন্ন প্রকারের সার ও কীটনাশকও বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি মাঝে মাঝে এসে দেখতাম, সে একাই আমগাছগুলোর যত্নআত্তি করছেন।

আমগুলো কুসুমগরম পানিতে ডিটারজেন পাউডার মিশিয়ে ৫/১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর আমগুলো পানি থেকে তুলে কাপড়ে মুছে ‘এ’ এবং ‘বি’ গ্রেডিং করতে হবে। মানে সবচেয়ে ভালো আমগুলো গ্রেড-এ এর দিকে; কম ভালোগুলো গ্রেড-বি এভাবে। পরে খড়যুক্ত ক্যারেটে (প্লাস্টিকের ঝুড়ি) রেখে দিলেই দু’এক দিনের মাঝে আম পেকে যাবে। এটাই হলো আম পাকানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতি বলে জানান সাইফুল ইসলাম।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আম্রপালি’ খেতে খুবই সুস্বাদু। এটা অন্যরকম মিষ্টিজাতের আম। এটি ইন্ডিয়ান একটি জাত। আমাদের দেশে এই আমটিকে আমরা মডিফাই (উন্নতকরণ) করে ‘আম্রপালি’ নাম দিয়েছি। এটি বারি আম-৩। বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিচার্জ ইস্টটিটিউট কর্তৃক উদ্ভোবিত জনপ্রিয় জাতের ভ্যারাইটি।

চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি সারা বাংলাদেশে সব ধরণের আবহাওয়া এবং সব ধরণের মাটিতেই এই ভ্যারাইটি ভালো হয়। কলমের চারা যদি ৬ মাস বয়েসে সংগ্রহ করে লাগান তবে পরের বছরই ফুল আসে। যদিও আমরা সেই ফুলটি অর্থাৎ প্রথম আসা ফুলটি নিতে মানা করি এবং তখন ফুলগুলো ভেঙে দিলে এর পরের বছর ভালো করে ধরে।

‘আম্রপালি’ একটু বিলম্বিত ফল। আষাঢ় মাসের আগে কিন্তু পাকে না। একে আমাদের এগ্রিকালচারের ভাষায় মধ্যম লেট ভ্যারাইটি বলি। এই আম সাইজে ছোট এবং আঁশবিহীন বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার।