ঢাকা ১০:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে বন্যায় বেশি ক্ষতি ফসলে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২০:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০২০
  • ২৮৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উজানের ঢল এবং অতি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় কুড়িগ্রামে তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টরের বেশি ফসলি জমি। প্রায় দেড় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানির নিচে ডুবে থাকা এসব ফসল বেশির ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে চলতি মৌসুমের আউস ধান,আমন বীজতলা, কাউন, চিনা বাদাম, তিলসহ সবধরনের সবজি পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। পাট অর্ধ নিমজ্জিত থাকায় আংশিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে পাট চাষিরা।

গত ১৭ জুন থেকে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গাধরের পানির বৃদ্ধি তখন থেকেই চলমান ছিল। ফলে এই দুই নদ-নদীর অববাহিকার চরাঞ্চলের ফসল আগেই পানির নিচে তলিয়ে যায়। এসব চরাঞ্চলের বেশিরভাগ ফসল দশ দিনের বেশি সময় ধরে পানির নিচে ছিল। ফলে সম্পূর্ণরূপে এসব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

এই আগাম বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সবজি চাষিরা। পটল, ঢেড়শ, চিচিংগা, ঝিঙ্গা, বেগুন, চালকুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি জাতীয় ফসলের সবেমাত্র ফলন আসা শুরু হয়েছে এমন সময় বন্যায় তলিয়েছে। তলিয়ে যাওয়া এসব ক্ষেতের ফসল পচে নষ্ট হচ্ছে। ফলে সকল বিনিয়োগ হারিয়ে পথে বসার উপক্রম কৃষকদের।

নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের ভিতরবন্দ, খাষমহল এলাকার সবজি চাষি মজিবর,আকবর আলীসহ অনেক চাষি বলেন, ইতোমধ্যে পানি উঠে তাদের চাষকৃত পটল, ঢেড়শ, চিচিংগা, বেগুন, চালকুমড়ার গাছ মরে গেছে। ফলে খরচকৃত টাকা ঘরে তুলতে পারেননি।

কৃষক মফিজুল ইসলাম জানান, ২০ হাজার টাকা ধারদেনা করে চার বিঘা জমিতে করলা, চিচিংগা, ঝিংগা, চালকুমড়া লাগিয়েছিলেন। ফলন আসার প্রাক্কালে পানি উঠে সব শেষ। এই বন্যায় তার প্রায় দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান।

একই অবস্থা কৃষক আব্দুল করিমের। তিনিও ধারদেনা করে ৩ বিঘা জমিদে সবজি চাষ করেছিলেন যা পানিতে তলিয়ে মরে গেছে।

সর্বশেষ সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় জেলার ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৫৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ১৫ হাজার ৬শ পরিবারের ৬৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নদীভাঙনে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি হারিয়েছে ৫শ পরিবার। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং ৩৭ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার।

বন্যায় কৃষিতে ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে ৫হাজার ৬৫৩ হেক্টর। এরমধ্যে আমন বীজতলা ৪৩৫ হেক্টর, আউশ ৮২৫ হেক্টর, তিল ২৪০ হেক্টর, কাউন ৫ হেক্টর, চিনাবাদাম ৮০ হেক্টর, মরিচ ৫৮ হেক্টর এবং পাট অর্ধ নিমজ্জিত হয়েছে ৩৫৯০ হেক্টর।

অপরদিকে মৎস বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ না জানালেও ইতিমধ্যে শতাধিক পুকুর প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাছচাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বলেন, টানা বৃষ্টি আর বন্যার কারণে কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন বীজতলা তৈরি করে উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়াও বন্যার পর ক্ষতি নিরূপণ করে তালিকা তৈরি করা হবে। সেই হিসাবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কুড়িগ্রামে বন্যায় বেশি ক্ষতি ফসলে

আপডেট টাইম : ১২:২০:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উজানের ঢল এবং অতি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় কুড়িগ্রামে তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টরের বেশি ফসলি জমি। প্রায় দেড় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানির নিচে ডুবে থাকা এসব ফসল বেশির ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে চলতি মৌসুমের আউস ধান,আমন বীজতলা, কাউন, চিনা বাদাম, তিলসহ সবধরনের সবজি পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। পাট অর্ধ নিমজ্জিত থাকায় আংশিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে পাট চাষিরা।

গত ১৭ জুন থেকে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গাধরের পানির বৃদ্ধি তখন থেকেই চলমান ছিল। ফলে এই দুই নদ-নদীর অববাহিকার চরাঞ্চলের ফসল আগেই পানির নিচে তলিয়ে যায়। এসব চরাঞ্চলের বেশিরভাগ ফসল দশ দিনের বেশি সময় ধরে পানির নিচে ছিল। ফলে সম্পূর্ণরূপে এসব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

এই আগাম বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সবজি চাষিরা। পটল, ঢেড়শ, চিচিংগা, ঝিঙ্গা, বেগুন, চালকুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি জাতীয় ফসলের সবেমাত্র ফলন আসা শুরু হয়েছে এমন সময় বন্যায় তলিয়েছে। তলিয়ে যাওয়া এসব ক্ষেতের ফসল পচে নষ্ট হচ্ছে। ফলে সকল বিনিয়োগ হারিয়ে পথে বসার উপক্রম কৃষকদের।

নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের ভিতরবন্দ, খাষমহল এলাকার সবজি চাষি মজিবর,আকবর আলীসহ অনেক চাষি বলেন, ইতোমধ্যে পানি উঠে তাদের চাষকৃত পটল, ঢেড়শ, চিচিংগা, বেগুন, চালকুমড়ার গাছ মরে গেছে। ফলে খরচকৃত টাকা ঘরে তুলতে পারেননি।

কৃষক মফিজুল ইসলাম জানান, ২০ হাজার টাকা ধারদেনা করে চার বিঘা জমিতে করলা, চিচিংগা, ঝিংগা, চালকুমড়া লাগিয়েছিলেন। ফলন আসার প্রাক্কালে পানি উঠে সব শেষ। এই বন্যায় তার প্রায় দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান।

একই অবস্থা কৃষক আব্দুল করিমের। তিনিও ধারদেনা করে ৩ বিঘা জমিদে সবজি চাষ করেছিলেন যা পানিতে তলিয়ে মরে গেছে।

সর্বশেষ সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় জেলার ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৫৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ১৫ হাজার ৬শ পরিবারের ৬৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নদীভাঙনে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি হারিয়েছে ৫শ পরিবার। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং ৩৭ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার।

বন্যায় কৃষিতে ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে ৫হাজার ৬৫৩ হেক্টর। এরমধ্যে আমন বীজতলা ৪৩৫ হেক্টর, আউশ ৮২৫ হেক্টর, তিল ২৪০ হেক্টর, কাউন ৫ হেক্টর, চিনাবাদাম ৮০ হেক্টর, মরিচ ৫৮ হেক্টর এবং পাট অর্ধ নিমজ্জিত হয়েছে ৩৫৯০ হেক্টর।

অপরদিকে মৎস বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ না জানালেও ইতিমধ্যে শতাধিক পুকুর প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাছচাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বলেন, টানা বৃষ্টি আর বন্যার কারণে কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন বীজতলা তৈরি করে উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়াও বন্যার পর ক্ষতি নিরূপণ করে তালিকা তৈরি করা হবে। সেই হিসাবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।