ঢাকা ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়া লন্ডন যেতে পারবেন সরকারের পক্ষ থেকে পরিবারকে সবুজ সংকেত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:২০:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০
  • ২০৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্যারোলে মুক্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার পথ সুগম হচ্ছে। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে বিদেশে যেতে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের হাইকমান্ডের মনোভাব ইতিবাচক বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ঢাকায় অবস্থানকারী খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে তাঁদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না—এই শর্তে প্যারোলে মুক্তি পান। তাই তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে চাইলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ম্যাডাম ও তাঁর পরিবার তো উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চাইবেন। কারণ মুক্তির উদ্দেশ্যই ছিল উন্নততর চিকিৎসা, সেটা তো সফল হয়নি। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের মনোভাব তথা হিসাব-নিকাশের ওপর। সরকার চাইলে সব কিছু পারে। আমি মনে করি, ম্যাডাম যদি যেতে চান, তবে বিশেষ বিমানে করে তাঁকে যেতে দেওয়া উচিত।’

সূত্র জানিয়েছে, সমঝোতার অংশ হিসেবেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন এবং একই প্রক্রিয়ায় চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য চেষ্টা করে আসছিল তাঁর পরিবার। শেষ পর্যন্ত গত ২৫ মার্চ তিনি মুক্তি পান। সেই থেকে নিভৃত জীবন যাপন করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেলেও তাঁর জীবনযাপন ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ শর্ত অনুযায়ী তাঁকে সেখানেও নীরব ভূমিকা পালন করতে হবে।

সরকারের সূত্রটি দাবি করেছে, খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসার জন্য গেলেও প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারবেন না বলে সরকারের শর্তের মধ্যে রয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির পর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসায় যেভাবে বসবাস করছেন, লন্ডনে ঠিক তেমনি থাকবেন। প্রকাশ্য কোনো মন্তব্য, বক্তব্য ও বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকারও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। মুক্তি ছয় মাসের জন্য দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে চিকিৎসার প্রয়োজন দেখিয়ে এই মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে।

সব কিছু ঠিক থাকলে এবং পরিবেশ স্বাভাবিক হলেই খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হবে। সূত্রটি জানিয়েছে, যেকোনো দিন অনুমতির জন্য এ আবেদন করা হতে পারে।

বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বারবার প্যারোলে মুক্তির বিষয় প্রত্যাখ্যান করা হলেও শেষ পর্যন্ত ওই ব্যবস্থা মেনে নেন তাঁরা। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে গত ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন আদালত। গতকাল ২৫ জুন তাঁর (খালেদা জিয়া) মুক্তির তিন মাস পূর্ণ হয়েছে।

৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা ভোগ করছেন। দুই মামলায় তাঁর ১৭ বছরের সাজা হয়েছে। বারবার জামিনের আবেদন করা হলেও তাঁর জামিন হচ্ছিল না।

শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ার আগে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলের কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যায় ভুগছেন। তবে তাঁর মূল সমস্যা গেঁটে বাত।

জানা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ৩৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি মামলা বিচার পর্যায়ে আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

খালেদা জিয়া লন্ডন যেতে পারবেন সরকারের পক্ষ থেকে পরিবারকে সবুজ সংকেত

আপডেট টাইম : ০৯:২০:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্যারোলে মুক্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার পথ সুগম হচ্ছে। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে বিদেশে যেতে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের হাইকমান্ডের মনোভাব ইতিবাচক বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ঢাকায় অবস্থানকারী খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে তাঁদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না—এই শর্তে প্যারোলে মুক্তি পান। তাই তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে চাইলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ম্যাডাম ও তাঁর পরিবার তো উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চাইবেন। কারণ মুক্তির উদ্দেশ্যই ছিল উন্নততর চিকিৎসা, সেটা তো সফল হয়নি। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের মনোভাব তথা হিসাব-নিকাশের ওপর। সরকার চাইলে সব কিছু পারে। আমি মনে করি, ম্যাডাম যদি যেতে চান, তবে বিশেষ বিমানে করে তাঁকে যেতে দেওয়া উচিত।’

সূত্র জানিয়েছে, সমঝোতার অংশ হিসেবেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন এবং একই প্রক্রিয়ায় চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য চেষ্টা করে আসছিল তাঁর পরিবার। শেষ পর্যন্ত গত ২৫ মার্চ তিনি মুক্তি পান। সেই থেকে নিভৃত জীবন যাপন করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেলেও তাঁর জীবনযাপন ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ শর্ত অনুযায়ী তাঁকে সেখানেও নীরব ভূমিকা পালন করতে হবে।

সরকারের সূত্রটি দাবি করেছে, খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসার জন্য গেলেও প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারবেন না বলে সরকারের শর্তের মধ্যে রয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির পর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসায় যেভাবে বসবাস করছেন, লন্ডনে ঠিক তেমনি থাকবেন। প্রকাশ্য কোনো মন্তব্য, বক্তব্য ও বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকারও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। মুক্তি ছয় মাসের জন্য দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে চিকিৎসার প্রয়োজন দেখিয়ে এই মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে।

সব কিছু ঠিক থাকলে এবং পরিবেশ স্বাভাবিক হলেই খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হবে। সূত্রটি জানিয়েছে, যেকোনো দিন অনুমতির জন্য এ আবেদন করা হতে পারে।

বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বারবার প্যারোলে মুক্তির বিষয় প্রত্যাখ্যান করা হলেও শেষ পর্যন্ত ওই ব্যবস্থা মেনে নেন তাঁরা। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে গত ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন আদালত। গতকাল ২৫ জুন তাঁর (খালেদা জিয়া) মুক্তির তিন মাস পূর্ণ হয়েছে।

৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা ভোগ করছেন। দুই মামলায় তাঁর ১৭ বছরের সাজা হয়েছে। বারবার জামিনের আবেদন করা হলেও তাঁর জামিন হচ্ছিল না।

শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ার আগে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলের কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যায় ভুগছেন। তবে তাঁর মূল সমস্যা গেঁটে বাত।

জানা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ৩৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি মামলা বিচার পর্যায়ে আছে।