হাওর বার্তা ডেস্কঃ পরিকল্পনা অনুযায়ী টার্গেট করা বাসায় কাজের বুয়া হিসেবে মহিলা সদস্যদের নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করেন দুর্ধর্ষ চোর চক্র। এরপর সুবিধামতো ওই বুয়া খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে বাসার লোকজনকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করে পালিয়ে যায়।
শনিবার দিনগত রাতে রাজধানীর জুরাইন, তাঁতীবাজার ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের ৫ সদস্যকে আটক করে গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ।
আটকরা হলো- বিউটি বেগম ওরফে ময়না ওরফে জান্নাতের মা , খোরশেদ আলম ওরফে মোরশেদ, আশাদুল ইসলাম, রিপনা বেগম ও ফারুক আহম্মেদ।
এ সময় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণের ১ জোড়া হাতের চুড়ি, একটি লকেটসহ স্বর্ণের চেইন, নগদ ৩০ হাজার টাকা, ৬টি চেতনানাশক ট্যাবলেট ও একটি মোবাইল জব্দ করা হয়।
রোববার দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির ওয়ারি বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইফতেখার আহমেদ।
ঘটনার বর্ণনায় ডিসি বলেন, রাজধানীর গেন্ডারিয়ার একটি বাসার গৃহবধূ মোছা. ফয়জুন্নেছা দারোয়ানের মাধ্যমে গত ৯ মার্চ কাজের বুয়া হিসেবে ময়না নামে একজনকে নিয়োগ দেন। কিন্তু পরেরদিনই দুপুর দেড়টার দিকে দুপুরের খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে সবাইকে অজ্ঞান করেন ওই কাজের বুয়া। এরপর নগদ ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও ২৫ ভরি স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আটক খুরশেদ আলম সুকৌশলে তার স্ত্রী ময়নাকে ভিকটিম ফয়জুন্নেছার বাসার কাজের বুয়া হিসেবে পাঠায়। আর আটক আশাদুল ও তার স্ত্রী রিপনা বেগম চুরির উদ্দেশ্যে ময়নাকে চেতনানাশক ওষুধ সরবরাহ করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের বুয়া ময়না দুপুরের খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ালে ভিকটিম ও তার পরিবারের সদস্যরা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর আলমারিতে রাখা ২লাখ ৭০ হাজার টাকা ও ২৫ ভরি বিভিন্ন স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর চোরাইকৃত মালামাল স্বর্ণের দোকানদার আটক ফারুক আহম্মেদের কাছে বিক্রি করে।
ডিসি বলেন, চেতনানাশক ওষুধের তীব্রতায় অজ্ঞান ওই পরিবারের তিন সদস্যের সবাইকে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের সন্দেহমূলক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া থেকে কাজের বুয়া ময়নাকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকিদের আটক করা হয়।
তিনি আরো বলেন, ২০১৩ সালে একটি মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে খোরশেদ-ময়না ও আশাদুল-রিপনা দম্পতির পরিচয় হয়। তখন থেকে তারা সংঘবদ্ধভাবে ঢাকা ও রাজশাহীতে এই কৌশলে স্ত্রীদের বাসায় কাজের বুয়া হিসেবে নিয়োগ দিয়ে চুরির করে আসছিল।
ময়না বুয়া সেজে চুরি করে ধরা পড়া সময়ের মধ্যে রিপনা-আশাদুল দম্পতি আরেক জায়গা আরেকটি চুরির ঘটনা ঘটায়। যে ঘটনায় একজন ভিকটিম এখনো আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন।
বাসায় লোক সংখ্যা কম, শিক্ষিত ও সরল, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ কম এমন গৃহকর্তীদের টার্গেট করতো এ চক্রটি। এরপর কাজের বুয়া সেজে বাসায় চুরি করে। কিন্তু চেতনানাশক ওষুধের প্রায়োগিক জ্ঞান না থাকার কারণে তাদের কুটকৌশলের কারণে অনেক ভুক্তভোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ডিসি ইফতেখার বলেন, বাসায় কাজের বুয়া নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্য নেন, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি রাখুন, প্রয়োজনে বুয়ার বাড়ির ফোন নম্বরও রেখে দিন। সন্দেহজনক হলে পুলিশকে জানান। পুলিশ সার্বিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।