প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা বলেছেন, প্রত্যেক ধর্মেই কিছু খারাপ লোক আছে তারা সমাজের ভাল মানুষদের হত্যা করে। সমাজের অশুভ কাজগুলো করে। অশুভ কাজের এত শক্তি পায় কোথায়। যারা সমাজের মানুষের সামনে চলতে পারে না তারা এতো শক্তি পায় কোথায়?
বৃহস্পতিবার শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিজয়া পুনর্মিলনী পরিষদ-২০১৫ এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘বিজয়া পুর্নমিলনী’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কোর্ট বর্জনের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘বার কাউন্সিলের রুলস যেগুলো আছে আপনারা (আইনজীবীরা) সেই রুলসগুলো মানেন না।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখানে মেজরিটি ৯৫ শতাংশ বিচারক ও আইনজীবী। এখানে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সাহেব আছেন। আমরা প্রত্যেকে একই পরিবারের সদস্য। সঙ্গত কারণে বিচার বিভাগ এবং আইনের শাসনের অভিভাবক হিসেবে আমি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং অ্যাটর্নি জেনারেল আছেন।
আপনাদের কাছে আমার একটা আবেদন। আজকে আমরা আইনের শাসনের কথা বলি। যে কারণে আজকে এ মহান পেশা প্রবর্তন করা হয়েছে। এটা তো শুধু আমরা, যারা অবস্থাপন্ন তাদের জন্য বড় বড় আইনজীবী নিয়োগ হবে। যারা গরিব তাদের জন্য ইয়ো হবে না। যারা টাকা পয়সা পায় তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচারে প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা করে।
সুরেন্দ্র কুমার বলেন, আমি আজকে বলছি, এ সিভিল কোর্ট বন্ধ (ছুটি) হয়ে গেলো। সিলেটে আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান আমাকে অভিযোগ করলেন সুনামগঞ্জে একজন মহিলা বিচারকের কোর্ট বর্জন করা হচ্ছে। তার অপরাধ যে উনি বললেন-সুপ্রিম কোর্ট থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে কিছু পুরাতন মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য। উনি করছেন। দুই একজন আইনজীবী না বলছেন। উনি হয়তো দু’একটা মন্তব্য করলেন।
এক জায়গায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে (আমাদের বার কাউন্সিলে আইন করা হয়েছে যে পোশাক পরার জন্য) একজন আইনজীবী গিয়েছেন পোশাক ছাড়া। আমার বিচারক বলেছেন-আপনার পোশাকটা ঠিক হয়নি। আপনি ইয়ে করে আসেন। ব্যস্ বয়কট শুরু হলো। আরেক জায়গায় একজন জুনিয়র বিচারক উনি বলছেন, তিনি পুরাতন মামলায় অ্যাডজোরমেন্ট (মুলতবি) দেবেন না। কিন্তু আইনজীবীরা বলছেন পুরাতন মামলায় হিয়ারিং (শুনানি) করবেন না। ওই কোর্ট বয়কট।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা সম্মানিত আইনজীবীদের আমি বলছি হ্যাঁ আপনাদের কিছু দায়িত্ব আছে। কিন্তু এই যদি হয়। আপনার বার কাউন্সিলের রুলস যেগুলো আছে আপনারা সেই রুলসগুলো আপনারাই মানেন না। রুলস অব ল’ অ্যাডমিনিসেট্রশন অব জাস্টিস বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় বলছে কোথায় কি রকম আমরা এ গুলি বের করবো।’
বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে আবেদন করছি। আপনারা একটু সহযোগিতা করেন। আপনাদের পেশা শুধু টাকা আর্নিংয়ের (আয়ের) জন্য না। গরিব যারা পুরাতন যারা বিচার থেকে বঞ্চিত যারা তাদের মামলাগুলো আমাদের নিষ্পত্তি করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে তারা কোর্টে বিচার পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি। আপনারা যদি সহযোগিতা না করেন। সমাজ থেকে কোনোদিনই অন্যায় থেকে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারবো না।’
সভাপতির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মা দেবী দুর্গা মানুষের মাঝে আসেন শান্তির বার্তা নিয়ে। দেশে আজ যে অশুভ শক্তির আবির্ভাব হয়েছে বিচারবিভাগ যদি মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় তাহলে অনেক অশুভ শক্তি মাথাচারা দিয়ে উঠতে পারবে না। তিনি বলেন, জুডিশিয়ারি যদি পদানত হয়ে যায় তার চেয়ে দুর্ভাগ্য আর নয়।
খন্দকার মাহবুব বলেন, আপনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে জুডিশিয়ারিকে যে ভাবে ঢেলে সাজাতে চান তাতে আমি আশাবাদী। তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে সমুন্নত করতে হবে। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। বিচারবিভাগ যদি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে তাহলে সমাজে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শামীম হাসনাইন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিসহ আইনজীবীবৃন্দ।