ঢাকা ১২:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৌসুমী কৃষকদের পদচারণায় মুখর ফসলি মাঠ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৬:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ মার্চ ২০২০
  • ২৫৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বপ্ন নেইতো রাজ প্রাসাদেরদু মুঠো চাই অন্ন,আবার সবার মুখে অন্ন জোটে এই কৃষকের জন্য’

কৃষক দরদি কবি যথার্থই বলেছেন, দেশের কৃষকেরা রাজা বাদশা উজির নাজির সবার জন্য অন্ন যোগার করলেও নিজেদের অন্ন যোগার করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। শুধু মাত্র দু মুঠো অন্নই তাদের স্বপ্ন বিলাস।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাজার হাজার অভাবী লোক প্রতি বছরই কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে আসে এক মুঠো অন্ন সংগ্রহ করার জন্য। এদের মধ্যে রয়েছে নিরক্ষর, অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন থেকে শুরু করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গন্ডি পার হওয়া এসএসসি ও এইচএসসি পাস যুবক।

শুধু মাত্র পরিবারের একটু স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য কলেজ পড়ুয়া অনেক শিক্ষিত ও শিক্ষার্থী কাজ করতে চলে আসেন বিভিন্ন এলাকায়।

কুমিল্লা জেলার ১৭ উপজেলাতেই চলছে জমজমাট বোরো চাষ। নিশ্বাস ফেলার ফুসরত নেই এই চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। দেশের উত্তরাঞ্চলের অসংখ্য যুবক পাশাপাশি বৃদ্ধ ব্যক্তিও  চলে এসেছেন কৃষি কাজ করার জন্য। মৌসুমী এই কৃষকদের পদচারণায় মুখরিত কুমিল্লা অঞ্চলের সবুজ জমিন।

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউপির মির্জানগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে নানা বয়সের নারী পুরুষ মিলে বোরো ধান আবাদ করছে। গোমতী নদীর কোল ঘেষে বেড়ে উঠা এই জমিতে গিয়ে কথা হয়  মিজান, খোকন, নাঈম, পলাশ, রাসেল ও আনিসের সঙ্গে।

মাথা নিচু করে হাতে সবুজ বোরোর মুঠি নিয়ে কাদা জমিতে বোরো ধান আবাদ করছে আর গুণগুনিয়ে মনের আনন্দে বিভিন্ন পল্লী গান গাইছে। সালাম দিতেই এগিয়ে এলেন আনিছ নামের মধ্য বয়সের এক যুবক।

বাড়ির নাম জানতেই এক গাল হেসে দিয়ে বললেন, ভাই আমরা রংপুরের না। আমাদের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায়।

কবে এসেছেন জানতে চাইলে জানালেন, প্রায় এক মাস হয়ে যাবে। প্রতি বছরই এই অঞ্চলে ধান চাষ করতে আসি। এ সময় নিজ এলাকায় খুব একটা কাজ থাকে না। কুমিল্লা অঞ্চলে কাজও বেশি, আবার টাকাও বেশি।

আনিছ জানালেন, কুমিল্লায় চুক্তিতে কাজ করি। এক কানি (৪০ শতাংশ) বোরো আবাদ করতে দুই হাজার টাকা নেই। ক্ষেত্র বিশেষ কিছু কম বা বেশিও নেই। গড়ে প্রতি দিন প্রায় আড়াই থেকে তিন কানি জমিতে বোরো আবাদ করি। গড়ে প্রত্যেকে আট শ টাকা থেকে এক হাজার টাকা রোজগার করি। খরচ গিয়ে প্রায় ছয় শ টাকা থাকে।

বোরো আবাদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই লাজুক হাসিতে মিজানুর রহমান বলেন, ভাই আমি কিন্তু কৃষক না। কৃষি সম্পর্কে ভাল উত্তর দিতে পারব না। কলেজে পড়ি। এখন এই এলাকায় বোরো আবাদের মৌসুম। তাই এক মাসের জন্য কুমিল্লা এসেছি। এখানে এক মাস কাজ করলে প্রায় সারা বছরের পড়াশুনার খরচ হয়ে যায়। তাই চাচাদের সঙ্গে প্রায় বছরই এখানে কাজ করতে আসি।

কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকেও প্রায় কয়েকশ শিক্ষার্থী আসেন যারা দশম শ্রেণি থেকে শুরু করে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশুনা করে।

আমরা শিক্ষার্থীরা শুধু উইন্টার সিজনে আসি। কেউ এক মাস, কেউ দুই মাস কেউবা তিন মাস কাজ করে চলে যায়। আবার পরের বছর আসে। নিজের পড়াশুনার খচর আর সংসারের স্বচ্ছলতা আনতেই তারা এই পরিশ্রমটকু করেন বলে জানান মিজান।

এই নাঈম, মিজান আর আনিছদের কোমল হাতের স্পর্শেই কুমিল্লার ফসলি মাঠে দেখা যায় সবুজ হাসি। এদের হাত ধরেই ধান উৎপাদনে সমৃদ্ধশালী কুমিল্লা।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে কুমিল্লা জেলায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে বেরো আবাদের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

১ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৯ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। সব কিছু অনুকূলে থাকলে এবার বিগত বছরের তুলনায় কুমিল্লায় বোরোর বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্পসারণ অফিসের উপ পরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে প্রতি বছরই ধানের আবাদী জমি কমছে। তারপরেও লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রায় ৯৫ ভাগ আবাদি জমিতে বোরো আবাদ করা হয়ে গেছে।

আশা করি ২/১ দিনের মধ্যে বাকীগুলোও সম্পন্ন হবে। চলতি মৌসুমে বোরো কি পরিমাণ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে জানতে চাইলে এই কৃষিবিদ জানান, গত বছরের চেয়ে ভাল হবে। আমরা প্রতিনিয়ত বোরোর বীজ থেকে শুরু করে ফলন উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের লোকবল দিয়ে মনিটরিং করছি এবং করব। আশা করি এবার কুমিল্লায় বোরোর উৎপাদন ভাল হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মৌসুমী কৃষকদের পদচারণায় মুখর ফসলি মাঠ

আপডেট টাইম : ০৬:৩৬:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ মার্চ ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বপ্ন নেইতো রাজ প্রাসাদেরদু মুঠো চাই অন্ন,আবার সবার মুখে অন্ন জোটে এই কৃষকের জন্য’

কৃষক দরদি কবি যথার্থই বলেছেন, দেশের কৃষকেরা রাজা বাদশা উজির নাজির সবার জন্য অন্ন যোগার করলেও নিজেদের অন্ন যোগার করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। শুধু মাত্র দু মুঠো অন্নই তাদের স্বপ্ন বিলাস।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাজার হাজার অভাবী লোক প্রতি বছরই কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে আসে এক মুঠো অন্ন সংগ্রহ করার জন্য। এদের মধ্যে রয়েছে নিরক্ষর, অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন থেকে শুরু করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গন্ডি পার হওয়া এসএসসি ও এইচএসসি পাস যুবক।

শুধু মাত্র পরিবারের একটু স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য কলেজ পড়ুয়া অনেক শিক্ষিত ও শিক্ষার্থী কাজ করতে চলে আসেন বিভিন্ন এলাকায়।

কুমিল্লা জেলার ১৭ উপজেলাতেই চলছে জমজমাট বোরো চাষ। নিশ্বাস ফেলার ফুসরত নেই এই চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। দেশের উত্তরাঞ্চলের অসংখ্য যুবক পাশাপাশি বৃদ্ধ ব্যক্তিও  চলে এসেছেন কৃষি কাজ করার জন্য। মৌসুমী এই কৃষকদের পদচারণায় মুখরিত কুমিল্লা অঞ্চলের সবুজ জমিন।

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউপির মির্জানগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে নানা বয়সের নারী পুরুষ মিলে বোরো ধান আবাদ করছে। গোমতী নদীর কোল ঘেষে বেড়ে উঠা এই জমিতে গিয়ে কথা হয়  মিজান, খোকন, নাঈম, পলাশ, রাসেল ও আনিসের সঙ্গে।

মাথা নিচু করে হাতে সবুজ বোরোর মুঠি নিয়ে কাদা জমিতে বোরো ধান আবাদ করছে আর গুণগুনিয়ে মনের আনন্দে বিভিন্ন পল্লী গান গাইছে। সালাম দিতেই এগিয়ে এলেন আনিছ নামের মধ্য বয়সের এক যুবক।

বাড়ির নাম জানতেই এক গাল হেসে দিয়ে বললেন, ভাই আমরা রংপুরের না। আমাদের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায়।

কবে এসেছেন জানতে চাইলে জানালেন, প্রায় এক মাস হয়ে যাবে। প্রতি বছরই এই অঞ্চলে ধান চাষ করতে আসি। এ সময় নিজ এলাকায় খুব একটা কাজ থাকে না। কুমিল্লা অঞ্চলে কাজও বেশি, আবার টাকাও বেশি।

আনিছ জানালেন, কুমিল্লায় চুক্তিতে কাজ করি। এক কানি (৪০ শতাংশ) বোরো আবাদ করতে দুই হাজার টাকা নেই। ক্ষেত্র বিশেষ কিছু কম বা বেশিও নেই। গড়ে প্রতি দিন প্রায় আড়াই থেকে তিন কানি জমিতে বোরো আবাদ করি। গড়ে প্রত্যেকে আট শ টাকা থেকে এক হাজার টাকা রোজগার করি। খরচ গিয়ে প্রায় ছয় শ টাকা থাকে।

বোরো আবাদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই লাজুক হাসিতে মিজানুর রহমান বলেন, ভাই আমি কিন্তু কৃষক না। কৃষি সম্পর্কে ভাল উত্তর দিতে পারব না। কলেজে পড়ি। এখন এই এলাকায় বোরো আবাদের মৌসুম। তাই এক মাসের জন্য কুমিল্লা এসেছি। এখানে এক মাস কাজ করলে প্রায় সারা বছরের পড়াশুনার খরচ হয়ে যায়। তাই চাচাদের সঙ্গে প্রায় বছরই এখানে কাজ করতে আসি।

কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকেও প্রায় কয়েকশ শিক্ষার্থী আসেন যারা দশম শ্রেণি থেকে শুরু করে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশুনা করে।

আমরা শিক্ষার্থীরা শুধু উইন্টার সিজনে আসি। কেউ এক মাস, কেউ দুই মাস কেউবা তিন মাস কাজ করে চলে যায়। আবার পরের বছর আসে। নিজের পড়াশুনার খচর আর সংসারের স্বচ্ছলতা আনতেই তারা এই পরিশ্রমটকু করেন বলে জানান মিজান।

এই নাঈম, মিজান আর আনিছদের কোমল হাতের স্পর্শেই কুমিল্লার ফসলি মাঠে দেখা যায় সবুজ হাসি। এদের হাত ধরেই ধান উৎপাদনে সমৃদ্ধশালী কুমিল্লা।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে কুমিল্লা জেলায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে বেরো আবাদের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

১ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৯ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। সব কিছু অনুকূলে থাকলে এবার বিগত বছরের তুলনায় কুমিল্লায় বোরোর বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্পসারণ অফিসের উপ পরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে প্রতি বছরই ধানের আবাদী জমি কমছে। তারপরেও লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রায় ৯৫ ভাগ আবাদি জমিতে বোরো আবাদ করা হয়ে গেছে।

আশা করি ২/১ দিনের মধ্যে বাকীগুলোও সম্পন্ন হবে। চলতি মৌসুমে বোরো কি পরিমাণ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে জানতে চাইলে এই কৃষিবিদ জানান, গত বছরের চেয়ে ভাল হবে। আমরা প্রতিনিয়ত বোরোর বীজ থেকে শুরু করে ফলন উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের লোকবল দিয়ে মনিটরিং করছি এবং করব। আশা করি এবার কুমিল্লায় বোরোর উৎপাদন ভাল হবে।