ঢাকা ১২:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লোকসানের আশঙ্কা : তবুও স্বপ্ন বুনেন কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৮:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ মার্চ ২০২০
  • ২০৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গায়ে হাতে কাদা মাখামাখির দৃশ্য চারিদিকে। ধান নয় যেন সবুজ স্বপ্ন বোনেন কৃষক। লোকশানের আশঙ্কা মাথায় নিয়েই ঠাকুরগাঁওয়ের মাঠে মাঠে এখন বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। কল ও গরুর লাঙ্গল মই দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে জমি প্রস্তুতের কাজ। কোথাও ডিপ টিউবওয়েল কিংবা শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন ও রোপনের ব্যস্ততায় ফুসরৎ ফেলার সময় নেই কারো।
প্রায় প্রতি বছরই বোরো বা আমন ধানের দাম না পাওয়ার অভিযোগ থাকে তবুও থেমে থাকে না রোপন করার ও ফসল তোলার উৎসবমুখর কর্মকাÐ। সময় সীমিত তাই কিছুটা কাড়াকাড়ি পড়ে রোপনের কামলা নিয়ে। মজুরিও বাড়ে এ সময় তাই কৃষি মজুরদের মধ্যে চলে উৎসবের আমেজ। ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রতি বছরের মতো সেই কাঁদা-মাটি গায়ে মাখার উৎসবমুখর পরিবেশটি দেখা যাচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে বাকী জমিতে চারা রোপন সম্পন্ন হবে। এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯০ মেট্রিক টন চাল।
সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কৃষক আবুল কাশেম জানান, ফসল গাড়ার খরচ অনেক বেড়েছে কিন্তু বাজার আমাদের হাতে না। সরকারকে ধান দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। সরকার যখন বেশি দামে ধান কেনে ততদিনে আমাদের কাছে ধান থাকে না আর থাকলেও হাজারো ঝামেলা নিয়ে আমরা গুদামে ধান দিতে পারি না সেখানে নাকি আবার লটারিও হয়।
কাশেম , নুরল , ক্ষিতিশ, তহিদুলসহ আরো বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, গতবছর আমরা বোরো আবাদ করছি কিন্তু ধান বেচার সময় দাম পাইনি। অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে আমাদের। বিষ, ভিটামিন ও জৈব ও রাসয়নিক সার তারপর বিঘা প্রতি মাটি কাটা, সেচ সব কিছুর খরচ দিয়ে আমাদের লোকসান হয়েছে। এবারো লাগাচ্ছি দেখি কি হয়। কৃষকরা জানালেন, বোরো ধান সেচ নির্ভর ঠাকুরগাঁও সরকারি বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের গভীর নলক‚প প্রকল্পের আওতায়, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে খরচ আরো বাড়লো কৃষকের তাই এবার ধানের দাম আরও না বাড়লে কৃষকের লসের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে মজুরি বাড়ায় কৃষি শ্রমিকদের পরিবারে চলছে স্বস্তির ব্যস্ততা। রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ক্ষেতমজুর দিনেশ জানান, তারা দল বেঁধে চুক্তি নিয়ে ধান রোপণ করেন এতে মজুরি কিছুটা বেশি পাওয়া যায়। তাই এ সময়ে কাজ করে আগামী কয়েক মাসের ধান-চাল কিনে রাখতে চান পরিবারের সবাই মিলে। গৌরিপুরের শাহানা বলেন, এই কাজ শেষ হবার পরই কিছুদিন গ্রামে কাজকর্মের আকাল পড়বে। এই অল্প কয়েকদিনের আয়ের আশায় তারা গত ১ মাস ধরে অপেক্ষা করেন।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন জানান, আমরা ইতিমধ্যে কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারেও বোরো ধান উৎপাদনে বাম্পার ফলন আশা করা যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

লোকসানের আশঙ্কা : তবুও স্বপ্ন বুনেন কৃষক

আপডেট টাইম : ১০:৩৮:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ মার্চ ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গায়ে হাতে কাদা মাখামাখির দৃশ্য চারিদিকে। ধান নয় যেন সবুজ স্বপ্ন বোনেন কৃষক। লোকশানের আশঙ্কা মাথায় নিয়েই ঠাকুরগাঁওয়ের মাঠে মাঠে এখন বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। কল ও গরুর লাঙ্গল মই দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে জমি প্রস্তুতের কাজ। কোথাও ডিপ টিউবওয়েল কিংবা শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন ও রোপনের ব্যস্ততায় ফুসরৎ ফেলার সময় নেই কারো।
প্রায় প্রতি বছরই বোরো বা আমন ধানের দাম না পাওয়ার অভিযোগ থাকে তবুও থেমে থাকে না রোপন করার ও ফসল তোলার উৎসবমুখর কর্মকাÐ। সময় সীমিত তাই কিছুটা কাড়াকাড়ি পড়ে রোপনের কামলা নিয়ে। মজুরিও বাড়ে এ সময় তাই কৃষি মজুরদের মধ্যে চলে উৎসবের আমেজ। ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রতি বছরের মতো সেই কাঁদা-মাটি গায়ে মাখার উৎসবমুখর পরিবেশটি দেখা যাচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে বাকী জমিতে চারা রোপন সম্পন্ন হবে। এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯০ মেট্রিক টন চাল।
সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কৃষক আবুল কাশেম জানান, ফসল গাড়ার খরচ অনেক বেড়েছে কিন্তু বাজার আমাদের হাতে না। সরকারকে ধান দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। সরকার যখন বেশি দামে ধান কেনে ততদিনে আমাদের কাছে ধান থাকে না আর থাকলেও হাজারো ঝামেলা নিয়ে আমরা গুদামে ধান দিতে পারি না সেখানে নাকি আবার লটারিও হয়।
কাশেম , নুরল , ক্ষিতিশ, তহিদুলসহ আরো বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, গতবছর আমরা বোরো আবাদ করছি কিন্তু ধান বেচার সময় দাম পাইনি। অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে আমাদের। বিষ, ভিটামিন ও জৈব ও রাসয়নিক সার তারপর বিঘা প্রতি মাটি কাটা, সেচ সব কিছুর খরচ দিয়ে আমাদের লোকসান হয়েছে। এবারো লাগাচ্ছি দেখি কি হয়। কৃষকরা জানালেন, বোরো ধান সেচ নির্ভর ঠাকুরগাঁও সরকারি বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের গভীর নলক‚প প্রকল্পের আওতায়, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে খরচ আরো বাড়লো কৃষকের তাই এবার ধানের দাম আরও না বাড়লে কৃষকের লসের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে মজুরি বাড়ায় কৃষি শ্রমিকদের পরিবারে চলছে স্বস্তির ব্যস্ততা। রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ক্ষেতমজুর দিনেশ জানান, তারা দল বেঁধে চুক্তি নিয়ে ধান রোপণ করেন এতে মজুরি কিছুটা বেশি পাওয়া যায়। তাই এ সময়ে কাজ করে আগামী কয়েক মাসের ধান-চাল কিনে রাখতে চান পরিবারের সবাই মিলে। গৌরিপুরের শাহানা বলেন, এই কাজ শেষ হবার পরই কিছুদিন গ্রামে কাজকর্মের আকাল পড়বে। এই অল্প কয়েকদিনের আয়ের আশায় তারা গত ১ মাস ধরে অপেক্ষা করেন।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন জানান, আমরা ইতিমধ্যে কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারেও বোরো ধান উৎপাদনে বাম্পার ফলন আশা করা যায়।