ঢাকা ০৮:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিএজির নিরীক্ষা প্রতিবেদন: ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের অনিয়ম দূর করতে হবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৫:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২০৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-এর নিরীক্ষায় ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়েছে। সিএজি মোট ৩৪টি নিরীক্ষা চালিয়ে অনিয়মগুলো শনাক্ত করেছে।

সন্দেহ নেই, আর্থিক অনিয়মের অঙ্কটি উদ্বেগজনক। কাজেই এ সংক্রান্ত সিএজির বার্ষিক প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ অনিয়ম উদ্ঘাটনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হচ্ছে, সরকারের অডিট বিভাগের সক্ষমতা আগের তুলনায় বেড়েছে।

এটি একটি ইতিবাচক দিক। এখন এসব অনিয়ম নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে আলোচনা করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে পুরোপুরি। খেয়াল রাখতে হবে, ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রেও যেন আবার অনিয়ম না হয়!

সিএজির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাতেই অনিয়ম হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ খাতে অনিয়ম হচ্ছে কয়েক ধরনের কৌশলে। যেমন: ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পর খেলাপি হওয়া, শর্ত ভঙ্গ করে ঋণ গ্রহণ এবং জাল এমেন্ডমেন্টের মাধ্যমে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ও পিসি সুবিধা নেয়া ইত্যাদি।

ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম নতুন নয়। প্রায়ই কোনো না কোনো ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশ পায় গণমাধ্যমে। দেশে এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। ফলে এ খাতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, লুটপাট ও দুর্নীতির ঘটনা বেড়েছে।

ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অভিযোগটি হল, ব্যাংক পরিচালকরা যোগসাজশের মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নেয়া অধিকাংশ ঋণের টাকা আর ফেরত দেন না।

এর ফলে মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে এখনই সতর্ক না হলে আরও বেশি আস্থা সংকটে পড়বে ব্যাংকিং খাত। বলা যায়, ভেঙে পড়বে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা।

ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের দায় বর্তায় প্রথমত পরিচালনা পর্ষদের ওপর। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ও এর দায় এড়াতে পারে না। ব্যাংকগুলোর অনুমোদন তো সরকারই দিয়ে থাকে। ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাও জোরালো নয়।

অথচ ব্যাংকগুলোর দেখভাল করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বেসরকারি খাতের যেসব ব্যাংকের মালিক রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে অর্থ মন্ত্রণালয়কে থাকতে হবে। তা না হলে অনিয়ম বন্ধ হবে না।

বস্তুত অনিয়ম রোধে আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে এ খাতে অপরাধ করার অথবা অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ কমে আসবে। বন্ধ হবে অনৈতিক চর্চা।

ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। এ খাতের কোথাও কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়লে সব ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে থেকে নিতে হবে ব্যবস্থা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সিএজির নিরীক্ষা প্রতিবেদন: ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের অনিয়ম দূর করতে হবে

আপডেট টাইম : ১২:২৫:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-এর নিরীক্ষায় ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়েছে। সিএজি মোট ৩৪টি নিরীক্ষা চালিয়ে অনিয়মগুলো শনাক্ত করেছে।

সন্দেহ নেই, আর্থিক অনিয়মের অঙ্কটি উদ্বেগজনক। কাজেই এ সংক্রান্ত সিএজির বার্ষিক প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ অনিয়ম উদ্ঘাটনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হচ্ছে, সরকারের অডিট বিভাগের সক্ষমতা আগের তুলনায় বেড়েছে।

এটি একটি ইতিবাচক দিক। এখন এসব অনিয়ম নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে আলোচনা করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে পুরোপুরি। খেয়াল রাখতে হবে, ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রেও যেন আবার অনিয়ম না হয়!

সিএজির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাতেই অনিয়ম হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ খাতে অনিয়ম হচ্ছে কয়েক ধরনের কৌশলে। যেমন: ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পর খেলাপি হওয়া, শর্ত ভঙ্গ করে ঋণ গ্রহণ এবং জাল এমেন্ডমেন্টের মাধ্যমে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ও পিসি সুবিধা নেয়া ইত্যাদি।

ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম নতুন নয়। প্রায়ই কোনো না কোনো ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশ পায় গণমাধ্যমে। দেশে এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। ফলে এ খাতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, লুটপাট ও দুর্নীতির ঘটনা বেড়েছে।

ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অভিযোগটি হল, ব্যাংক পরিচালকরা যোগসাজশের মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নেয়া অধিকাংশ ঋণের টাকা আর ফেরত দেন না।

এর ফলে মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে এখনই সতর্ক না হলে আরও বেশি আস্থা সংকটে পড়বে ব্যাংকিং খাত। বলা যায়, ভেঙে পড়বে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা।

ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের দায় বর্তায় প্রথমত পরিচালনা পর্ষদের ওপর। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ও এর দায় এড়াতে পারে না। ব্যাংকগুলোর অনুমোদন তো সরকারই দিয়ে থাকে। ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাও জোরালো নয়।

অথচ ব্যাংকগুলোর দেখভাল করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বেসরকারি খাতের যেসব ব্যাংকের মালিক রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে অর্থ মন্ত্রণালয়কে থাকতে হবে। তা না হলে অনিয়ম বন্ধ হবে না।

বস্তুত অনিয়ম রোধে আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে এ খাতে অপরাধ করার অথবা অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ কমে আসবে। বন্ধ হবে অনৈতিক চর্চা।

ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। এ খাতের কোথাও কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়লে সব ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে থেকে নিতে হবে ব্যবস্থা।