ঢাকা ০৮:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একাত্তরে মন ফেরায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৫৫:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫
  • ৫৬৮ বার

বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর বেলা। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা দল বেধে এসেছেন মুক্তিযুুদ্ধ জাদুঘর দেখতে। জাদুঘর ঘুরে দেখে কেউ আবেগ তাড়িত, আবার কেউ বিজয়ের উল্লাসে উচ্ছ্বাসিত। সেই আবেগ আর উল্লাস পরস্পর ভাগাভাগি করে সবাই যেন ’৭১ এ ফিরে যেতে চাইছে। বাংলাদেশের জন্মকথা নিয়ে তাদের যেন কৌতূহলের অন্ত নেই।

জাদুঘর পরিদর্শন করে জানা ইতিহাসের পেছনের অজানা কথা নিয়েও একে অপরকে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে। কোনোটির উত্তর মিলছে, আবার কোনোটির মিলছে না। তবুও যেন জানা-অজানা মুক্তিযুদ্ধের এই ইতিকথা নিয়েই তাদের চেতনাদীপ্ত পথ চলা। বিজয়ের মাস উপলক্ষে জমে উঠেছে মু্ক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। বছরের প্রতিদিন শত শত দর্শণার্থী জাদুঘরটি দর্শন করতে এলেও ডিসেম্বর মাসে, তা বহুগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে এই সময়ে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন।

১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি পুরাতন ভবনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্ম। আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের এই প্রয়াস গোড়া থেকেই মানুষের সমর্থন ও সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে জাদুঘরে প্রায় ১৪০০ স্মারক প্রদর্শিত হলেও সংগ্রহ ভাণ্ডারে জমা হয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি স্মারক।

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিরপুরে মুসলিম বাজার ও জল্লাদখানা বধ্যভূমি খননের কাজ সম্পন্ন করে এবং পরে (২০০৮ সালে) জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিপীঠ নির্মাণ করে। ‘মানুষের জন্য ফাউণ্ডেশন’ এর অংশীদারিত্বে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস ও মানবাধিকারবিষয়ক প্রদর্শনীর বিশেষ আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রয়েছে গ্রন্থাগার ও তথ্যভাণ্ডার এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল সেন্টার যা দেশ-বিদেশে পরিচিতি পেয়েছে একটি নন্দিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে।

এই জাদুঘরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে যথাযথভাবে উপস্থাপন। এর বিশেষ লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সচেতন করে তোলা, যার ফলে তারা মাতৃভূমির জন্য গর্ব ও দেশাত্ববোধে উদ্দীপ্ত হবে এবং দেশমাতৃকার তরে নিবেদিত থাকবে।

জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটান এলাকায় শিক্ষার্থীদের পরিবহনযোগে জাদুঘর পরিদর্শনে নিয়ে আসা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং চেতনার সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটাতেই এই প্রয়াস। এছাড়া একটি বড় আকারের বাসের অভ্যন্তরে প্রদর্শনী সাজিয়ে একে পরিণত করা হয়েছে খুদে জাদুঘরে। এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

জাদুঘরের প্রথম পর্বে ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত উপনিবেশিক পর্ব সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপিত হচ্ছে। এরপর ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১-এর মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তান পর্ব এবং দ্বিতীয় ভাগের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা (মুক্তিযুদ্ধ পর্ব) বরাদ্দ রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ পর্বে প্রদর্শিত হচ্ছে অসহযোগ আন্দোলন ও ৭ মার্চের ভাষণ, গণহত্যা, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, প্রথম প্রতিরোধ, উদ্বাস্তু সমস্যা, মুজিবনগর সরকারের প্রতিষ্ঠা, সেক্টর বিভাজন ও সংগঠিত সামরিক প্রতিরোধ, জনযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড, সেক্টর ও ব্রিগেড কমান্ডারদের অধীনে সশস্ত্র যুদ্ধ, নৌকমান্ডো, বিমানবাহিনীতে বিমানযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলা বেতার, গণমাধ্যম, সামরিক প্রশিক্ষণ ও শিবির, মুক্ত এলাকা, আন্তর্জাতিক সংহতি, দেশীয় দালালদের ভূমিকা, রাজাকার বাহিনী, শান্তি কমিটি ও আল বদর বাহিনী, বঙ্গবন্ধুর প্রহসনের বিচার, দেশের অভ্যন্তরে প্রতিরোধ, নারীদের ভূমিকা, নারী নির্যাতন, যৌথ বাহিনী গঠন ও ডিসেম্বর চূড়ান্ত লড়াাই, মিত্র বাহিনীর ভারতীয় সদস্যদের আত্মদান, বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং বাঙালির বিজয়।

জাদুঘরের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বিশ্ববাসীর কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্যও বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে সংঘঠিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সর্ম্পকেও বিশেষ তথ্য পরিবেশ করছে আসছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

এদিকে স্বাধীনতা উৎসব, বিজয় উৎসব, বইমেলা, চিত্র প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুর শাহাদৎবরণ দিবস, তাজউদ্দীন আহমদ জন্মদিবস, মিরপুর মুক্ত দিবস, মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ প্রতিষ্ঠা দিবস, শিক্ষক সম্মেলন, গণঅভ্যুত্থান দিবস, সার্জেন্ট জহুরুল হক দিবস, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস, বিশ্ব জাদুঘর দিবস, বিশ্ব শরণার্থী দিবস, হিরোশিমা দিবস, বজলুর রহমান স্মৃতিপদক প্রদানসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

একাত্তরে মন ফেরায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

আপডেট টাইম : ০২:৫৫:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫

বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর বেলা। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা দল বেধে এসেছেন মুক্তিযুুদ্ধ জাদুঘর দেখতে। জাদুঘর ঘুরে দেখে কেউ আবেগ তাড়িত, আবার কেউ বিজয়ের উল্লাসে উচ্ছ্বাসিত। সেই আবেগ আর উল্লাস পরস্পর ভাগাভাগি করে সবাই যেন ’৭১ এ ফিরে যেতে চাইছে। বাংলাদেশের জন্মকথা নিয়ে তাদের যেন কৌতূহলের অন্ত নেই।

জাদুঘর পরিদর্শন করে জানা ইতিহাসের পেছনের অজানা কথা নিয়েও একে অপরকে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে। কোনোটির উত্তর মিলছে, আবার কোনোটির মিলছে না। তবুও যেন জানা-অজানা মুক্তিযুদ্ধের এই ইতিকথা নিয়েই তাদের চেতনাদীপ্ত পথ চলা। বিজয়ের মাস উপলক্ষে জমে উঠেছে মু্ক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। বছরের প্রতিদিন শত শত দর্শণার্থী জাদুঘরটি দর্শন করতে এলেও ডিসেম্বর মাসে, তা বহুগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে এই সময়ে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন।

১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি পুরাতন ভবনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্ম। আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের এই প্রয়াস গোড়া থেকেই মানুষের সমর্থন ও সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে জাদুঘরে প্রায় ১৪০০ স্মারক প্রদর্শিত হলেও সংগ্রহ ভাণ্ডারে জমা হয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি স্মারক।

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিরপুরে মুসলিম বাজার ও জল্লাদখানা বধ্যভূমি খননের কাজ সম্পন্ন করে এবং পরে (২০০৮ সালে) জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিপীঠ নির্মাণ করে। ‘মানুষের জন্য ফাউণ্ডেশন’ এর অংশীদারিত্বে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস ও মানবাধিকারবিষয়ক প্রদর্শনীর বিশেষ আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রয়েছে গ্রন্থাগার ও তথ্যভাণ্ডার এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল সেন্টার যা দেশ-বিদেশে পরিচিতি পেয়েছে একটি নন্দিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে।

এই জাদুঘরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে যথাযথভাবে উপস্থাপন। এর বিশেষ লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সচেতন করে তোলা, যার ফলে তারা মাতৃভূমির জন্য গর্ব ও দেশাত্ববোধে উদ্দীপ্ত হবে এবং দেশমাতৃকার তরে নিবেদিত থাকবে।

জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটান এলাকায় শিক্ষার্থীদের পরিবহনযোগে জাদুঘর পরিদর্শনে নিয়ে আসা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং চেতনার সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটাতেই এই প্রয়াস। এছাড়া একটি বড় আকারের বাসের অভ্যন্তরে প্রদর্শনী সাজিয়ে একে পরিণত করা হয়েছে খুদে জাদুঘরে। এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

জাদুঘরের প্রথম পর্বে ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত উপনিবেশিক পর্ব সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপিত হচ্ছে। এরপর ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১-এর মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তান পর্ব এবং দ্বিতীয় ভাগের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা (মুক্তিযুদ্ধ পর্ব) বরাদ্দ রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ পর্বে প্রদর্শিত হচ্ছে অসহযোগ আন্দোলন ও ৭ মার্চের ভাষণ, গণহত্যা, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, প্রথম প্রতিরোধ, উদ্বাস্তু সমস্যা, মুজিবনগর সরকারের প্রতিষ্ঠা, সেক্টর বিভাজন ও সংগঠিত সামরিক প্রতিরোধ, জনযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড, সেক্টর ও ব্রিগেড কমান্ডারদের অধীনে সশস্ত্র যুদ্ধ, নৌকমান্ডো, বিমানবাহিনীতে বিমানযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলা বেতার, গণমাধ্যম, সামরিক প্রশিক্ষণ ও শিবির, মুক্ত এলাকা, আন্তর্জাতিক সংহতি, দেশীয় দালালদের ভূমিকা, রাজাকার বাহিনী, শান্তি কমিটি ও আল বদর বাহিনী, বঙ্গবন্ধুর প্রহসনের বিচার, দেশের অভ্যন্তরে প্রতিরোধ, নারীদের ভূমিকা, নারী নির্যাতন, যৌথ বাহিনী গঠন ও ডিসেম্বর চূড়ান্ত লড়াাই, মিত্র বাহিনীর ভারতীয় সদস্যদের আত্মদান, বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং বাঙালির বিজয়।

জাদুঘরের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বিশ্ববাসীর কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্যও বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে সংঘঠিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সর্ম্পকেও বিশেষ তথ্য পরিবেশ করছে আসছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

এদিকে স্বাধীনতা উৎসব, বিজয় উৎসব, বইমেলা, চিত্র প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুর শাহাদৎবরণ দিবস, তাজউদ্দীন আহমদ জন্মদিবস, মিরপুর মুক্ত দিবস, মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ প্রতিষ্ঠা দিবস, শিক্ষক সম্মেলন, গণঅভ্যুত্থান দিবস, সার্জেন্ট জহুরুল হক দিবস, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস, বিশ্ব জাদুঘর দিবস, বিশ্ব শরণার্থী দিবস, হিরোশিমা দিবস, বজলুর রহমান স্মৃতিপদক প্রদানসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।