ঢাকা ০৭:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলম ধরা হাতে ঝিয়ের কাজ করেও জেএসসিতে জিপিএ ৫

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৯:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২০৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুখী আক্তার। যদিও জীবনে কখনো সুখের মুখ দেখেনি সে। বেঁচে থাকতে তাইতো প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে ১৪ বছরের এই কিশোরীকে।

তার বসবাস ঠাঁকুরগাও জেলার গোয়ালপাড়ায়। মা, ছয় বছর বয়সী ভাই সাইফুল ও ৮০ বছরের বৃদ্ধা নানীকে নিয়েই তার সংসার। পরিবারের একমাত্র ভরসা সুখী। এই ছোট মেয়েটির কাঁধেই মস্ত বড় এক দায়িত্ব।

স্কুলে সুখী

স্কুলে সুখী

তিন বেলা না হলেও তাদের জন্য দুই বেলা আহার যোগাড় করতে হয় সুখীকেই। তার মা শিউলি আক্তার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হওয়ায় কেউ তাকে কাজ দেয়নি। তার নানীও বয়সের ভারে চলতে পারেনা। আর ছোট ভাইটি তো এখনো ঠিকভাবে কথা বলতেই শেখেনি। বাবাও অনেক আগেই তাদের ছেড়েছেন। শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছে সুখী। তার বাবা হামিদুল ইসলাম বাদাম বিক্রি করে কোনো মতে সংসার চালাতেন।

মায়ের যত্ন নিচ্ছে সে

মায়ের যত্ন নিচ্ছে সে

তার মৃত্যুর পর সুখীর কাঁধে পুরো পরিবারের দায়িত্ব পড়ে। কারণ সংসারে উপার্জন করার মত আর তো কেউ নেই। তাইতো বাবার জায়গাটি নিতে হয়েছে তাকে। তাইতো পরিবারের সবার দেখাশুনা ও ভরণ পোষণ করছে ১৪ বছরের এই কিশোরী। সুখী মানুষের বাসায় কাজ করে। অন্যের বাড়িতে গৃহস্থালীর কাজ করেই দিনাতিপাত করছে সে। যে হাতে সুখী কলম ধরে আবার সেই হাতেই বাসন ও কাপড় ধোয়া, ঘর মোছাসহ রান্না সবই করতে হয়।

পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেয় সে

পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেয় সে

একটি টিনের ঘর, তার মধ্যেই গাদাগাদি করে কোনো রকম বসবাস করছে সুখী ও তার পরিবার। এত কষ্টে জীবযাপন করলেও শিক্ষাকে পায়ে ঠেলে দেয়নি সুখী। তার ধ্যান জ্ঞান যেন লেখাপড়া। সে বড় হয়ে বড় চাকরিজীবী হতে চায়। তাইতো সংসার চালানোর পাশাপাশি কষ্ট করে হলেও লেখাপড়ায় মগ্ন থাকে সুখী আক্তার।

মাথা গোঁজার ঠাঁই এই ঘরটিই

মাথা গোঁজার ঠাঁই এই ঘরটিই

ঠাঁকুরগাও জেলার গোয়ালপাড়া উপজেলার গোয়ালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী সুখী। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ খাশেরুল ইসলাম বলেন, সুখী আমাদের স্কুলের গর্ব। সে একজন মেধাবী ছাত্রী। ২০১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষা সুখী জিপিএ ৫ পেয়ে সাফল্যের সহিত উত্তীর্ণ হয়েছে। আমরা সবাই চাই সে যেন তার মেধা দিয়ে সব বাধা বিপত্তি জয় করতে পারে।

অন্যের বাড়িতে কাজ করছে

অন্যের বাড়িতে কাজ করছে

সকাল ৬টা থেকে ৯টা আবার স্কুল থেকে ফিরে রাত ১০টা পর্যন্ত অন্যের বাড়িতে কাজ করে সুখী। এর মাঝে সময় করে বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে হয়। নইলে যে লেখাপড়া হবে না। কাজ তো করতেই হবে পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে হবে এমনটিই জানায় সুখী।

স্বপ্ন তার বড় চাকুরে হওয়ার

স্বপ্ন তার বড় চাকুরে হওয়ার

তার মতে, আমিই পরিবারের ভরসা। এজন্যই মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালাতে হয়। এখনো তো আমার চাকরি করার বয়স ও যোগ্যতা কোনোটাই হয়নি। তাই লেখাপড়া করে যোগ্য হয়ে তবেই আমি বড় চাকরিজীবী হতে চাই। এটাই আমার আশা। এজন্য যত কষ্ট করতে হয় আমি করব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কলম ধরা হাতে ঝিয়ের কাজ করেও জেএসসিতে জিপিএ ৫

আপডেট টাইম : ১০:৪৯:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুখী আক্তার। যদিও জীবনে কখনো সুখের মুখ দেখেনি সে। বেঁচে থাকতে তাইতো প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে ১৪ বছরের এই কিশোরীকে।

তার বসবাস ঠাঁকুরগাও জেলার গোয়ালপাড়ায়। মা, ছয় বছর বয়সী ভাই সাইফুল ও ৮০ বছরের বৃদ্ধা নানীকে নিয়েই তার সংসার। পরিবারের একমাত্র ভরসা সুখী। এই ছোট মেয়েটির কাঁধেই মস্ত বড় এক দায়িত্ব।

স্কুলে সুখী

স্কুলে সুখী

তিন বেলা না হলেও তাদের জন্য দুই বেলা আহার যোগাড় করতে হয় সুখীকেই। তার মা শিউলি আক্তার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হওয়ায় কেউ তাকে কাজ দেয়নি। তার নানীও বয়সের ভারে চলতে পারেনা। আর ছোট ভাইটি তো এখনো ঠিকভাবে কথা বলতেই শেখেনি। বাবাও অনেক আগেই তাদের ছেড়েছেন। শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছে সুখী। তার বাবা হামিদুল ইসলাম বাদাম বিক্রি করে কোনো মতে সংসার চালাতেন।

মায়ের যত্ন নিচ্ছে সে

মায়ের যত্ন নিচ্ছে সে

তার মৃত্যুর পর সুখীর কাঁধে পুরো পরিবারের দায়িত্ব পড়ে। কারণ সংসারে উপার্জন করার মত আর তো কেউ নেই। তাইতো বাবার জায়গাটি নিতে হয়েছে তাকে। তাইতো পরিবারের সবার দেখাশুনা ও ভরণ পোষণ করছে ১৪ বছরের এই কিশোরী। সুখী মানুষের বাসায় কাজ করে। অন্যের বাড়িতে গৃহস্থালীর কাজ করেই দিনাতিপাত করছে সে। যে হাতে সুখী কলম ধরে আবার সেই হাতেই বাসন ও কাপড় ধোয়া, ঘর মোছাসহ রান্না সবই করতে হয়।

পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেয় সে

পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেয় সে

একটি টিনের ঘর, তার মধ্যেই গাদাগাদি করে কোনো রকম বসবাস করছে সুখী ও তার পরিবার। এত কষ্টে জীবযাপন করলেও শিক্ষাকে পায়ে ঠেলে দেয়নি সুখী। তার ধ্যান জ্ঞান যেন লেখাপড়া। সে বড় হয়ে বড় চাকরিজীবী হতে চায়। তাইতো সংসার চালানোর পাশাপাশি কষ্ট করে হলেও লেখাপড়ায় মগ্ন থাকে সুখী আক্তার।

মাথা গোঁজার ঠাঁই এই ঘরটিই

মাথা গোঁজার ঠাঁই এই ঘরটিই

ঠাঁকুরগাও জেলার গোয়ালপাড়া উপজেলার গোয়ালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী সুখী। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ খাশেরুল ইসলাম বলেন, সুখী আমাদের স্কুলের গর্ব। সে একজন মেধাবী ছাত্রী। ২০১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষা সুখী জিপিএ ৫ পেয়ে সাফল্যের সহিত উত্তীর্ণ হয়েছে। আমরা সবাই চাই সে যেন তার মেধা দিয়ে সব বাধা বিপত্তি জয় করতে পারে।

অন্যের বাড়িতে কাজ করছে

অন্যের বাড়িতে কাজ করছে

সকাল ৬টা থেকে ৯টা আবার স্কুল থেকে ফিরে রাত ১০টা পর্যন্ত অন্যের বাড়িতে কাজ করে সুখী। এর মাঝে সময় করে বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে হয়। নইলে যে লেখাপড়া হবে না। কাজ তো করতেই হবে পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে হবে এমনটিই জানায় সুখী।

স্বপ্ন তার বড় চাকুরে হওয়ার

স্বপ্ন তার বড় চাকুরে হওয়ার

তার মতে, আমিই পরিবারের ভরসা। এজন্যই মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালাতে হয়। এখনো তো আমার চাকরি করার বয়স ও যোগ্যতা কোনোটাই হয়নি। তাই লেখাপড়া করে যোগ্য হয়ে তবেই আমি বড় চাকরিজীবী হতে চাই। এটাই আমার আশা। এজন্য যত কষ্ট করতে হয় আমি করব।