ঢাকা ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবার তুরস্কের ওপর রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫২:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৫
  • ৩২০ বার

সিরিয়ার আকাশসীমায় রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তুরস্কের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শনিবার এ সংক্রান্ত একটি নথিতে সই করেছেন। ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই নথিতে লেখা রয়েছে, মস্কো তুরস্ক থেকে কিছু পণ্য আমদানি, রাশিয়ায় তুর্কি কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা এবং রুশ কোম্পানিতে তুরস্কের নাগরিকদের কাজ করার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করবে। এছাড়া, নথিতে রাশিয়া থেকে তুরস্কগামী বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধের কথাও বলা হয়েছে। রেডিও তেহরানের এক প্রতিবেদনে এখবর দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আদেশে রাশিয়ার ভ্রমণ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোকে বলা হয়েছে, তারা যেন তুরস্কের কাছে ভ্রমণ প্যাকেজ বিক্রি না করে। পরিস্থিতি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়া তার নাগরিকদের তুরস্ক ভ্রমণের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হলো রাশিয়া। এ ছাড়া গত বছর প্রায় ৩০ লাখ রুশ পর্যটক তুরস্ক ভ্রমণ করেন। শনিবার পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, তুরস্কের প্রায় ৯০ হাজার নাগরিক রাশিয়ায় কর্মরত। পরিবারের সদস্যসহ এ সংখ্যা দুই লাখ দাঁড়াবে। অন্যদিকে, শনিবারই তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা সতর্ক বার্তায় ‘পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত’ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাশিয়া সফর থেকে বিরত থাকতে তুর্কি নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার তুরস্কের সঙ্গে ভিসাবিহীন ভ্রমণ ব্যবস্থা স্থগিত করেছে রাশিয়া। গত মঙ্গলবার সিরিয়ার আকাশসীমায় একটি রুশ এসইউ-২৪ বোমারু বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে তুরস্ক। এ সময় বিমানটিতে দু’জন পাইলট ছিল। বিমানটি ভূপাতিত হওয়ার আগেই প্যারাস্যুটের সাহায্যে দুই পাইলট বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন কিন্তু মূল পাইলটকে আকাশেই গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান কো-পাইলট কনস্তানতিন মুরাতিন। উদ্ধার হওয়ার পর তিনি বলেছেন, রুশ বিমান এক সেকেন্ডের জন্যও তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে নি। তিনি আরো বলেছেন, বিমান ভূপাতিত করার আগে তুরস্কের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের রেডিও সিগন্যাল কিংবা দৃশ্যমান সতর্ক বার্তা দেয়া হয় নি। অবশ্য আঙ্কারা দাবি করেছে, বোমারু বিমানটি তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বিমানটি সিরিয়ার আকাশসীমাতেই ছিল। তিনি ঘটনাটিকে ‘পিঠে ছুরি মারা’র সঙ্গে তুলনা করে এর কড়া জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিমান ভূ-পাতিত করার জন্য রাশিয়া তুরস্ককে ক্ষমা চাইতে বললেও তাতে অস্বীকৃতি জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। উল্টো শুক্রবার এক বক্তব্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘আগুন নিয়ে খেলার’ অভিযোগ করেন তিনি। এরদোগান উত্তেজনা প্রশমনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক চাইলেও তার আগে তুরস্ককে ক্ষমা চাইতে হবে বলে শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে আইএসআইএল-সহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইরত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া রাশিয়ার এই অভিযানের সমালোচনা করে আসছে আমেরিকা, তুরস্কসহ তাদের মিত্র দেশগুলো। গত শুক্রবার তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি বা একেপি’র এক সমাবেশে এরদোগান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করার জন্য রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন। এছাড়া, সিরিয়ার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিমান অভিযান পরিচালনার জন্যও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার তুরস্কের ওপর রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা

আপডেট টাইম : ১০:৫২:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৫

সিরিয়ার আকাশসীমায় রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তুরস্কের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শনিবার এ সংক্রান্ত একটি নথিতে সই করেছেন। ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই নথিতে লেখা রয়েছে, মস্কো তুরস্ক থেকে কিছু পণ্য আমদানি, রাশিয়ায় তুর্কি কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা এবং রুশ কোম্পানিতে তুরস্কের নাগরিকদের কাজ করার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করবে। এছাড়া, নথিতে রাশিয়া থেকে তুরস্কগামী বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধের কথাও বলা হয়েছে। রেডিও তেহরানের এক প্রতিবেদনে এখবর দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আদেশে রাশিয়ার ভ্রমণ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোকে বলা হয়েছে, তারা যেন তুরস্কের কাছে ভ্রমণ প্যাকেজ বিক্রি না করে। পরিস্থিতি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়া তার নাগরিকদের তুরস্ক ভ্রমণের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হলো রাশিয়া। এ ছাড়া গত বছর প্রায় ৩০ লাখ রুশ পর্যটক তুরস্ক ভ্রমণ করেন। শনিবার পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, তুরস্কের প্রায় ৯০ হাজার নাগরিক রাশিয়ায় কর্মরত। পরিবারের সদস্যসহ এ সংখ্যা দুই লাখ দাঁড়াবে। অন্যদিকে, শনিবারই তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা সতর্ক বার্তায় ‘পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত’ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাশিয়া সফর থেকে বিরত থাকতে তুর্কি নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার তুরস্কের সঙ্গে ভিসাবিহীন ভ্রমণ ব্যবস্থা স্থগিত করেছে রাশিয়া। গত মঙ্গলবার সিরিয়ার আকাশসীমায় একটি রুশ এসইউ-২৪ বোমারু বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে তুরস্ক। এ সময় বিমানটিতে দু’জন পাইলট ছিল। বিমানটি ভূপাতিত হওয়ার আগেই প্যারাস্যুটের সাহায্যে দুই পাইলট বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন কিন্তু মূল পাইলটকে আকাশেই গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান কো-পাইলট কনস্তানতিন মুরাতিন। উদ্ধার হওয়ার পর তিনি বলেছেন, রুশ বিমান এক সেকেন্ডের জন্যও তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে নি। তিনি আরো বলেছেন, বিমান ভূপাতিত করার আগে তুরস্কের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের রেডিও সিগন্যাল কিংবা দৃশ্যমান সতর্ক বার্তা দেয়া হয় নি। অবশ্য আঙ্কারা দাবি করেছে, বোমারু বিমানটি তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বিমানটি সিরিয়ার আকাশসীমাতেই ছিল। তিনি ঘটনাটিকে ‘পিঠে ছুরি মারা’র সঙ্গে তুলনা করে এর কড়া জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিমান ভূ-পাতিত করার জন্য রাশিয়া তুরস্ককে ক্ষমা চাইতে বললেও তাতে অস্বীকৃতি জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। উল্টো শুক্রবার এক বক্তব্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘আগুন নিয়ে খেলার’ অভিযোগ করেন তিনি। এরদোগান উত্তেজনা প্রশমনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক চাইলেও তার আগে তুরস্ককে ক্ষমা চাইতে হবে বলে শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে আইএসআইএল-সহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইরত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া রাশিয়ার এই অভিযানের সমালোচনা করে আসছে আমেরিকা, তুরস্কসহ তাদের মিত্র দেশগুলো। গত শুক্রবার তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি বা একেপি’র এক সমাবেশে এরদোগান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করার জন্য রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন। এছাড়া, সিরিয়ার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিমান অভিযান পরিচালনার জন্যও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।