বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টাডি সেন্টার’ অনুমোদন নয়

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের কোনো স্টাডি সেন্টার অনুমোদন দেবে না সরকার। তবে আগামী বছর থেকেই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসের অনুমোদন শুরু হবে। এর আগে চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই এসংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধন করে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হবে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়টি বিবেচনায় এনেই এই সংশোধন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, স্টাডি সেন্টারের আকার প্রায় কোচিং সেন্টারের মতো। বিদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের একটি বা হাতেগোনা কয়েকটি কোর্স এখানে পরিচালিত হয়। পরীক্ষা ও কারিকুলাম ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। এক কথায়, শিক্ষার কোনো কাঠামোই থাকে না। অন্যদিকে শাখা ক্যাম্পাসের আকার একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। বোর্ড অব গভর্ন্যান্স থাকে। বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ থাকে। সুযোগ থাকে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, স্টাডি সেন্টার অনুমোদন দিলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শিক্ষার মান নিয়েও সংশয় থাকে। এ কারণে স্টাডি সেন্টার অনুমোদন না দিয়ে শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদন দেওয়া হবে। এর আলোকেই নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে।

‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০’-এর নির্দেশনার আলোকে ২০১৪ সালের ৩১ মে ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই বিধিমালার আলোকে ১৪টি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আবেদনও করে। এর মধ্য থেকে দুটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি কলেজের স্টাডি সেন্টার পরিদর্শন ও যাচাই শেষে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। এডুকো বাংলাদেশ কর্তৃক অস্ট্রেলিয়ার মোনাস কলেজ প্রাইভেট লিমিটেড বিএসি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক ইউনিভার্সিটি অব ডার্বি এবং সেন্টার ফর ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি কর্তৃক পরিচালিত লন্ডন স্কুল অব কমার্সের স্টাডি সেন্টার পরিচালনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের আপত্তির কারণে তত্কালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আমলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঐ কার্যক্রম স্থগিত রাখে। এর মধ্যে বিএসি ইন্টারন্যাশনাল অবৈধভাবে তাদের কার্যক্রম এখনো পরিচালনা করছে।

দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত এপ্রিল মাসে এ বিষয়ে একটি সভা করেন। সেখানে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস অনুমোদনের পক্ষে মত দেন তিনি। বিদ্যমান বিধিমালা সংশোধন করতে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী ও ইউজিসির সচিব মো. খালেদ। তবে ইউজিসির সচিব মো. খালেদ ওএসডি থাকায় তিনি এসংক্রান্ত কোনো সভায় অংশ নেননি। এছাড়া অধ্যাপক আখতার হোসেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হওয়ায় তাকে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ কারণে খুব একটা অগ্রগতি নেই বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

বিধিমালা সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেন, ‘বিধিমালা সংশোধনের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছি।’ তিনি বলেন, শিক্ষার যথাযথ মান যেন বজায় থাকে, সেদিক বিবেচনা করে বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। সংশোধিত বিধিমালার মাধ্যমে কোনো অযোগ্য ও অখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ থাকবে না।

কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে চলা ৫৬টি বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে বিজ্ঞপ্তি দেয় ইউজিসি। বেশির ভাগই বন্ধ থাকে। তবে বিএসসি ইন্টারন্যাশনালসহ কয়েকটি অবৈধভাবে স্টাডি সেন্টার পরিচালনা করছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর