প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুন্দরবন, জাদুমাখা এক নাম। কাঁদামাটির ওপর বুকের পাঁজরের মতো শেকড় বেরিয়ে থাকা বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনে রয়েছে গাঢ় সবুজের সমারোহ। ফোটে আছে বিচিত্রবর্ণের ফুল। তার ওপর উড়ছে-বসছে মৌমাছি, অরণ্যের ভয়ঙ্কর বাঘ, দাতাল শুকর, বিষধর সাপ। বঙ্গোপসাগর থেকে ছুটে আসা ভেজা লবণাক্ত বাতাস। প্রকৃতির সৌন্দর্য, অ্যাডভেঞ্চার, ভয় ও শিহরণের স্থান সুন্দরবন। পানিতে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ। এ যেন প্রকৃতির অকৃপণ সৃষ্টি। পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনের আকর্ষণ তাই দুর্ণিবার। একঘেয়েমি কর্মময় জীবন থেকে ছুটি নিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন অনিন্দ্য সৌন্দর্যের  লীলাভূমি,  সুন্দরবনে।  অনেকেই ভ্রমণ করতে চাইলেও জানেন না প্রয়োজনীয় তথ্য ।

Image result for সুন্দরবন ছবি
জামতলা সৈকত : জামতলার আকর্ষণীয় জায়গা হলো পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। টাওয়ার থেকেই বিস্তীর্ণ ছনক্ষেতে হাজার হাজার হরিণের ছোটাছুটি, ভাগ্য ভালো হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পেয়ে যেতে পারেন। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কচিখালী সমুদ্র সৈকত হয়ে বন বিভাগের কচিখালী স্টেশন পর্যন্ত হাঁটা পথ। পথের পাশে ঘন অরণ্যে বাঘ, হরিণ, শূকর, বিষধর সাপ ইত্যাদির দেখা মেলে। সুতরাং সাবধান হতেই হবে। আর এ কারণে গা ছমছম পরিবেশে দুঃসাহসী পর্যটকদের জন্য এই স্থানের যেন বিকল্প নেই। সত্যিই মনোমুগ্ধকর!

Image result for সুন্দরবন ছবি
মান্দারবাড়িয়া সৈকত : মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত সুন্দরবন ও উত্তাল বঙ্গোপসাগরের যেন এক রূপসী কন্যা, যা এখনও কিছুটা অনাবিষ্কৃত এবং অস্পর্শিত। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত।
হীরন পয়েন্ট : হীরন পয়েন্টে গিয়ে কাঠের তৈরি ওয়াকওয়ে ধরে বনের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে বানর, হরিণ, গুইসাপ অথবা কুমিরের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দেখা যাবে। দেখা মিলে যেতে পারে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের।
দুবলার চর : দুবলার চর সুন্দরবনের অন্তর্গত একটি ছোট্ট চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী; সেসব নদী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। দুবলার চর একটু ভেতরে অবস্থিত বিধায় কোনো দশনার্থী সহজে এই চরে প্রবেশ করতে পারে না।

Image result for সুন্দরবন ছবি
কটকা বিচ : কটকাতে ৪০ ফুট উচ্চ একটি টাওয়ার আছে যেখান থেকে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে সেখানে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হতে ফেরার সময় হেঁটে বিচের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। অনেকে জায়গাটিকে ‘বাঘের জায়গা’ও বলে।
কোথায় থাকবেন : সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণ পয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভাড়া নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ ৩ হাজার টাকা, ৪ কক্ষ ১২ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষ ৩ হাজার টাকা, ৪ কক্ষ ১০ হাজার টাকা। কটকা প্রতি কক্ষ ২ হাজার টাকা, ২ কক্ষ ৪ হাজার টাকা। বিদেশিদের কাছে ভাড়া কিন্তু প্রায় দ্বিগুণ।
সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে একক, পরিবার ও গ্রæপ নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে।
মংলায় আছে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, পশুর বন্দরে সাধারণ হোটেল আছে পর্যটকদের থাকার জন্য। খুলনা মহানগরে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলিনিয়াম মানসম্পন্ন।

Image result for সুন্দরবন ছবি
যাওয়ার ব্যবস্থা : ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন এবং লঞ্চে সরাসরি খুলনা যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এসি এবং ননএসি দুই ধরনের বাস চলাচল করে। ঢাকা থেকে সোহাগ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ এবং ঈগল পরিবহন নিয়মিত চলাচল করে খুলনার উদ্দেশ্য। ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গাড়িগুলো খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুলনা পৌঁছাতে সময় লাগে ৭ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ নিয়মিত যাতায়াত করছে খুলনার উদ্দেশ্যে।

Image result for সুন্দরবন ছবি
খুলনার নন এসি বাসের ভাড়া ৫৫০, এসি ১৪০০ টাকা। বাস থেকে নেমে রিকশা বা অটোতে যেতে হবে লঞ্চ ঘাট। আর ট্রেনে খুলনা গেলে স্টেশনে নেমে গাড়ি নিতে হবে না। কারণ, স্টেশন ও লঞ্চঘাট একেবারেই গায়ে লাগানো। সায়েদাবাদ থেকে মংলার সরাসরি বাস আছে। এই সেমি চেয়ারকোচ বাসগুলো রাত ৮টা থেকে ৮.৩০ এর মধ্যে ছেড়ে গিয়ে ভোর ৫-৬টার মধ্যে মংলা পৌঁছায়। ভাড়া ৪৫০ টাকা।
বিভিন্ন প্যাকেজের খরচ : সাধারণত প্রতি শুক্র থেকে রোববার অথবা সোম থেকে বৃহস্পতিবার খুলনা লঞ্চঘাট থেকে অপারেটরদের প্যাকেজ থাকে। ১০-২০ জনের গ্রপ হলেও প্যাকেজে নিজেরা একটি লঞ্চ নিতে পারবেন। এতে আপনাদের প্রাইভেসিও থাকবে, লোক কম হওয়ায় সার্ভিসও ভালো পাবার সম্ভাবনা থাকে। আর মংলা থেকে লঞ্চে সময়ও ৩ ঘণ্টার কম লাগে।
খাবারের মান ও জাহাজ ভেদে মাঝারি ধরনের একটি ট্যুরে সাধারণত খরচ পড়ে ৬-৮ হাজার টাকা। আরেকটু ভালো চাইলে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্যাকেজ আছে। ৩৫-৪০ জন হলে একটি লঞ্চে ফ্লোরিং করে ৪০০০-৫০০০ টাকার মধ্যেও তিন দিনের সুন্দরবন ভ্রমণ সম্ভব। এডভান্স দিয়ে এক মাস আগে বুকিং না দিলে ভ্যাসেল পাওযা কঠিন।

Image result for সুন্দরবন ছবি
ভ্রমণ ফি : অভয়ারণ্য এলাকায় প্রত্যেক দেশি পর্যটকের প্রতিদিনের ফি ১৫০ টাকা, ছাত্রছাত্রী ৩০ টাকা, বিদেশি পর্যটক ১৫০০ টাকা। অভয়ারণ্যের বাইরে দেশি পর্যটক ৭০ টাকা ও বিদেশি ১০০০ টাকা, ছাত্রছাত্রী ২০টাকা, গবেষক ৪০ টাকা। করমজল দেশি ২০ টাকা, বিদেশি ৩০০ টাকা। বন বিভাগের নির্দিষ্ট ভ্রমণ ফি ছাড়াও প্রতিদিন গাইড ফি ৫০০ টাকা, লঞ্চ ক্রু ফি ৭০ টাকা, নিরাপত্তা গার্ড ফি ৩০০ টাকা, টেলিকমিউনিকেশন ফি ২০০ টাকা, ভিডিও ক্যামেরা ফি দেশি পর্যটক ২০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটক ৩০০ টাকা। সুন্দরবনে রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে তীর্থ যাত্রীদের ফি তিন দিনের জন্য জনপ্রতি ৫০ টাকা, অনিবন্ধনকৃত ট্রলার ৮০০ টাকা, নিবন্ধনকৃত ট্রলার ২০০ টাকা এবং ট্রলারের অবস্থান ফি প্রতিদিন ২০০ টাকা।
ভ্রমণ টিপস
সুন্দরবনে যেতে হলে লিখিত দরখাস্তের মাধ্যমে বিভাগীয় বন কার্যালয় (সার্কিট হাউজ রোড, খুলনা, ফোনঃ ২০৬৬৫, ২১১৭৩) থেকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার পূর্ব অনুমতি নিতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর