রাজধানীর অদূরে কেরাণীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে নির্মিত হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। চলতি মাসেই আংশিকভাবে এটি উদ্বোধন করা হবে। কেমন হবে নতুন এ কারাগারটি তা নিয়ে থাকছে জাগো নিউজের ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ থাকছে এর তৃতীয় পর্ব।
নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের মেইন গেটে উপরে তাকালেই চোখে পড়ে একটি বাক্য। ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’। নিয়ন আলোয় লেখাগুলো রাতে জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে।
তবে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তোলেন, সত্যিই কি আসামিদের আলোর পথ দেখায় কারাগার? আসামিরা কি কারাগারের ভেতরে নিরাপদ? এসব প্রশ্নের খুব সন্তোষজনক উত্তর হয়তো দিতে পারেননি কারা কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
”
তবে পরিসংখ্যান বলছে, কারাগারের ভেতরে দূর্ধর্ষ আসামি-খুনিদের সঙ্গে মেলামেশায় ছোট ছোট অপরাধীরা মুক্তি পেয়ে বড় ধরনের অপরাধ করছে। একসঙ্গে থাকায় বড় বড় নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে কারাগারের ভেতরেই। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অপরাধীদের সংশোধনের পথ।
এর অন্যতম কারণ হিসেবে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেন, আসামিদের অপরাধের ধরন বিবেচনায় ভেতরে আলাদা ভবন এবং সেল না থাকা। তবে এই সুযোগটি থাকছে না কেরাণীগঞ্জের নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটিতে। অপরাধের ধরন অনুযায়ী তৈরি হয়েছে পৃথক ভবন ও সেল।
আন্ডারট্রায়াল বা বিচারাধীন মামলার আসামি, কিশোর অপরাধী, মানসিক ভারসাম্য প্রতিবন্ধীদের জন্যেও আলাদা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য, হত্যা মামলা ও ফাঁসির আসামিদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে চারটি ডেনজার প্রিজনার ভবন।
”
সরেজমিনে দেখা গেছে, কারাগারের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের শেষ সীমানায় এ ধরনের আসামিদের জন্য চারটি ভবন তৈরি করা হয়েছে। ডেনজার প্রিজন ১, ২, ৩ এবং ৪ হিসেবে ভবনগুলোকে নামকরণ করা হয়েছে। প্রতিটি ভবন চারতলা বিশিষ্ট।
ভেতরে ছোট ছোট সেল আর অ্যাটাচ টয়লেট। ভবনের সীমানা প্রাচীরের সামনে একটি গেট, ভেতরে একটি গেট এবং পৃথক আসামিদের জন্য লোহার দুটি গেট দিয়ে তিনস্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে ‘ডেনজার’ আসামিদের জন্য।
ডেনজার প্রিজন-৩ এর দক্ষিণ দিকের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে রয়েছে কারাগারটির একমাত্র ফাঁসির মঞ্চ। যেসব আসামিদের ফাঁসির দিন-তারিখ কাছাকাছি চলে আসবে তাদেরকে ৩ নং ভবনে এনে রাখা হবে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
”
কেরাণীগঞ্জের ফাঁসির মঞ্চটিও তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিকভাবে। মাটি থেকে ৫ ফুট উপরে ফাঁসির বেদিটির তিন দিক টিনের শিট দিয়ে ঘেরা। মঞ্চের দুদিক থেকেই বেদিতে ওঠার জন্য সিড়ি দেয়া হয়েছে।
বেদির ফাঁকা জায়গার গভীরতা রাখা হয়েছে প্রায় ১৫ ফুটের মতো। ফাঁসি কার্যকরের পর মরদেহ তুলে আনার জন্য মঞ্চের নিচের অংশে একটি আকাশি রঙয়ের লোহার গেট রয়েছে।
এশিয়ার ‘মডেল’ এই কারাগারে আন্ডারট্রায়াল বা বিচারাধীন আসামিদের জন্য আটটি ছোট ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও সম্পূর্ণ কারাগার এলাকার মাঝ বরাবর স্থানে তৈরি করা হয়েছে কেইস টেবিল বা কেস ফাইল।
”
যেসব আসামি কারাগারের ভেতরে বিশৃঙ্খলা-মারামারিসহ নানা অপরাধ করে তাদের বিচার এবং শাস্তি দেয়া হয় এখানে।
৪০৬ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই কারাগারটি এ বছরের নভেম্বরেই সীমিতভাবে উদ্বোধন করা হবে। পর্যায়ক্রমে আসামিদের ঢাকা থেকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।