ঢাকা ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিবন্ধী ভাইকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে অসহায় সাকিম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৬৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হামাকে বাড়িত কেউ আসে না! আব্বা-মা ও বোনুক হারা হামরা দিশেহারা। খ্যায়া না খ্যায়া জীবন পার করোছি। যে বাড়িত থাকি এটার কত টুকু হামাদের তাও জানা নাই। বন্ধক না কি জানি বলে থুছিলো আব্বা। চাচারাও কবা পারে না। অনেক কষ্টে খ্যায়া, না খ্যায়া ব্যাঁচে আছি হামরা।’

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে চাপাকষ্টের কথা বলে কিছুটা হালকা হওয়ার চেষ্টা করেন বাবা-মা ও বোনকে হারিয়ে অল্প বয়সে সংসারের ভার মাথায় নেয়া এতিম সাকিম। বলছি, নওগাঁ সদর থানার শেখপুরা গ্রামে হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া মো. সাকিম হোসেনের (১৭) কথা। দরিদ্র হলেও খেয়ে না খেয়ে বেশ ভালোই কাটছিলো বাবা-মার ছত্রছায়ায়। পরিবারে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের মতো নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া।

চলতি বছর বাবা মো. আইন মন্ডলকে হারায় সাকিম। এর আগে ২০১৭ সালে মা নুর জাহান ও তারও আগে বড় বোন শিল্পিকে হারিয়ে এখন প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন যেন সবাই হয়েছে পর।

তিন ভাইয়ের সংসারে সাকিম সবার ছোট। বড় ভাই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, মেঝ ভাই হাবিব একটি টেলিভিশন মেকানিকের দোকানে কাজ করেন।

সাকিমের ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল উচ্চ শিক্ষার। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়ায় সুযোগ হয়নি ভালো কোনো স্কুলের শিক্ষা গ্রহণের। গ্রামের ব্র্যাক স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হন নওগাঁ নামাজগর গাউছুল আজম কামিল মাদরাসায়। সেখান থেকে এ গ্রেড নিয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি। বর্তমানে সান্তাহার টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।

পরিবারের সব দায়িত্ব এখন সাকিমের কাঁধে। পড়ালেখার পাশাপাশি সপ্তাহে তিন-থেকে চার দিন দিনমজুর কাজের পেছনে ছুটতে হয় তাকে। দিনমজুর কাজ করে কোনো মতো জীবন যুদ্ধে বেঁচে আছে তিন ভাই। কাজ না করলে ভাত জোটে না রাতে। যেখানে তার ব্যস্ত থাকার কথা ছিল খেলার মাঠে। সেখানে পরিবারের সব দায়িত্ব এখন তার কাঁধে।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বড় ভাই মো. হানিফ হোসেন কোনো কাজ করতে পারেন না। এমনকি বাড়ির বাইরে গেলে ফিরতে পারেন না ঘরে। সারাদিন কাটে তালা-চাবি দেয়া একটি বদ্ধ কক্ষে। অথচ পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার কথা ছিল হানিফের। সেখানে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় সেই ছোট ভাইদের দ্বারস্থই হতে হচ্ছে তার। অনেক সময় গোসল ও খাবার খেতে সহযোগিতা করতে হয় ছোট ভাই সাকিমকে। এ অসহায় এতিমদের এখন একটাই চাওয়া- প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডটা।

সাকিম সম্পর্কে সান্তাহার টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সাকিম আমার কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। সে কয়েকদিন আগে আমার কাছে এসেছিল উপবৃত্তির জন্য। কলেজে তার উপস্থিতি কম থাকায় উপবৃত্তি দেয়া যাবে না বলে জানাই। এ কথা শুনে সে কেঁদে ফেলে এবং বলে স্যার আর কোনদিন কলেজে অনুপস্থিত থাকব না, আমাকে উপবৃত্তি না দিলে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। এখন থেকে আমাকে রাতে কাজ করতে হবে। আমি তো সপ্তাহে ৪-৫ দিন দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই।

অধ্যক্ষ আরো বলেন, তখন আমি তাকে ফ্রি বেতনে কলেজে পড়ার সুযোগ করে দেই। শিক্ষক-কর্মচারীরা সবাই মিলে তাকে কিছু আর্থিক সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নিই এবং তা দিয়েছি।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, কোনো বিত্তবান এগিয়ে আসলে তার ছোট ভাইয়ের পক্ষে একটা ব্যবসা করে নিজেদের সংসার চালিয়ে সাবলম্বী হওয়া এবং সাকিমের উচ্চ শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

প্রতিবন্ধী ভাইকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে অসহায় সাকিম

আপডেট টাইম : ১০:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হামাকে বাড়িত কেউ আসে না! আব্বা-মা ও বোনুক হারা হামরা দিশেহারা। খ্যায়া না খ্যায়া জীবন পার করোছি। যে বাড়িত থাকি এটার কত টুকু হামাদের তাও জানা নাই। বন্ধক না কি জানি বলে থুছিলো আব্বা। চাচারাও কবা পারে না। অনেক কষ্টে খ্যায়া, না খ্যায়া ব্যাঁচে আছি হামরা।’

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে চাপাকষ্টের কথা বলে কিছুটা হালকা হওয়ার চেষ্টা করেন বাবা-মা ও বোনকে হারিয়ে অল্প বয়সে সংসারের ভার মাথায় নেয়া এতিম সাকিম। বলছি, নওগাঁ সদর থানার শেখপুরা গ্রামে হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া মো. সাকিম হোসেনের (১৭) কথা। দরিদ্র হলেও খেয়ে না খেয়ে বেশ ভালোই কাটছিলো বাবা-মার ছত্রছায়ায়। পরিবারে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের মতো নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া।

চলতি বছর বাবা মো. আইন মন্ডলকে হারায় সাকিম। এর আগে ২০১৭ সালে মা নুর জাহান ও তারও আগে বড় বোন শিল্পিকে হারিয়ে এখন প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন যেন সবাই হয়েছে পর।

তিন ভাইয়ের সংসারে সাকিম সবার ছোট। বড় ভাই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, মেঝ ভাই হাবিব একটি টেলিভিশন মেকানিকের দোকানে কাজ করেন।

সাকিমের ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল উচ্চ শিক্ষার। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়ায় সুযোগ হয়নি ভালো কোনো স্কুলের শিক্ষা গ্রহণের। গ্রামের ব্র্যাক স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হন নওগাঁ নামাজগর গাউছুল আজম কামিল মাদরাসায়। সেখান থেকে এ গ্রেড নিয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি। বর্তমানে সান্তাহার টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।

পরিবারের সব দায়িত্ব এখন সাকিমের কাঁধে। পড়ালেখার পাশাপাশি সপ্তাহে তিন-থেকে চার দিন দিনমজুর কাজের পেছনে ছুটতে হয় তাকে। দিনমজুর কাজ করে কোনো মতো জীবন যুদ্ধে বেঁচে আছে তিন ভাই। কাজ না করলে ভাত জোটে না রাতে। যেখানে তার ব্যস্ত থাকার কথা ছিল খেলার মাঠে। সেখানে পরিবারের সব দায়িত্ব এখন তার কাঁধে।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বড় ভাই মো. হানিফ হোসেন কোনো কাজ করতে পারেন না। এমনকি বাড়ির বাইরে গেলে ফিরতে পারেন না ঘরে। সারাদিন কাটে তালা-চাবি দেয়া একটি বদ্ধ কক্ষে। অথচ পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার কথা ছিল হানিফের। সেখানে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় সেই ছোট ভাইদের দ্বারস্থই হতে হচ্ছে তার। অনেক সময় গোসল ও খাবার খেতে সহযোগিতা করতে হয় ছোট ভাই সাকিমকে। এ অসহায় এতিমদের এখন একটাই চাওয়া- প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডটা।

সাকিম সম্পর্কে সান্তাহার টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সাকিম আমার কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। সে কয়েকদিন আগে আমার কাছে এসেছিল উপবৃত্তির জন্য। কলেজে তার উপস্থিতি কম থাকায় উপবৃত্তি দেয়া যাবে না বলে জানাই। এ কথা শুনে সে কেঁদে ফেলে এবং বলে স্যার আর কোনদিন কলেজে অনুপস্থিত থাকব না, আমাকে উপবৃত্তি না দিলে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। এখন থেকে আমাকে রাতে কাজ করতে হবে। আমি তো সপ্তাহে ৪-৫ দিন দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই।

অধ্যক্ষ আরো বলেন, তখন আমি তাকে ফ্রি বেতনে কলেজে পড়ার সুযোগ করে দেই। শিক্ষক-কর্মচারীরা সবাই মিলে তাকে কিছু আর্থিক সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নিই এবং তা দিয়েছি।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, কোনো বিত্তবান এগিয়ে আসলে তার ছোট ভাইয়ের পক্ষে একটা ব্যবসা করে নিজেদের সংসার চালিয়ে সাবলম্বী হওয়া এবং সাকিমের উচ্চ শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব।