বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট শ্রমজীবি মানুষদের জন্য শুধুমাত্র মৌলিক চাহিদাগুলোই যোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে প্রতিভার বিকাশ আকাশকুসুম কল্পনাই বটে। ডার্ড গ্রুপ, সাভার এবং রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত তৈরি পোশাক রফতানিকারক একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি, তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের মেধা ও প্রতিভার বিকাশে হাতে নিয়েছে এক মহতি উদ্যোগ। ব্যতিক্রমি পাঠদান কেন্দ্র ‘কিরণ’ কলা ভবন এই উদ্যোগের নাম। এবছরের এপ্রিল মাসে যাত্রা শুরু করা ‘কিরণ’ ইতিমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে দেশ-বিদেশের নানা মাধ্যমে।
‘কিরণ’ কলা ভবনে ডার্ড গ্রুপের সুবিধা-বঞ্চিত শ্রমিক-কর্মচারীদের ৮ থেকে ১২ বছর বয়সের ছেলে-মেয়েরা সঙ্গীত এবং চিত্রাঙ্কন এর উপর প্রশিক্ষণ নিতে পারছে। ভবিষ্যতে বাংলাভাষার শুদ্ধ চর্চা, ইংরেজী ভাষা শিক্ষা এবং কম্পিউটার নলেজ প্রোগ্রাম চালু করা হবে ধীরে ধীরে। সম্পূর্ণ অবৈতনিক এবং সামাজিক সেবার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত ‘কিরণ’, তার ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার যাবতীয় সরঞ্জাম, এদের পোশাক, রং, তুলি, কাগজ, পেন্সিলসহ সবকিছু সরবরাহ করে। আলোর স্কুলে আগামী দিনের ফুল-কলিরা যেন সঠিক নিয়মের মধ্যে সব কিছু শিখতে পারে সে জন্য রয়েছেন দক্ষ শিক্ষক। সঙ্গীত বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে আছেন রবীন্দ্রভারতী থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করা ড. অনুপম কুমার পাল এবং ছায়ানট এর শিক্ষিকা অনিন্দিতা চৌধুরী। চিত্রাঙ্কন বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে আছেন চারুকলার ছাত্ররা।
ডার্ড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ইতেমাদ উদ দৌলাহ ‘কিরণ’ প্রতিষ্ঠার চিন্তা এর উদ্দেশ্য নিয়ে বলেন, ‘প্রতিভা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবখানেই ছড়িয়ে থাকে। সব প্রতিভা যেন আলোর দেখা পেয়ে নিজেদের প্রমাণ করতে পারে, আলোকিত মানুষ হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে পারে সে জন্যে ডার্ড গ্রুপ কাজ করছে ‘কিরণ’-এর মাধ্যমে। আমরা চাই আমাদের এই উদ্যোগ দেখে দেশের আরো যারা শিল্প মালিক রয়েছেন তারাও এগিয়ে আসবেন নিজেদের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের সন্তানদের আলোর পথ দেখাতে।’
সপ্তাহে একদিন, শুক্রবার ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিবস। গানে গানে আর তুলির ছোঁয়ায় এসব শিশুরা আগামী দিনের বাংলাদেশের উজ্জ্বলতম নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি এমন উদ্যোগ আরো বেশি মানুষের মাঝে সম্প্রসারিত হলে দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধনের একটি সফল প্রায়স হবে ‘কিরণ’। ডার্ড গ্রুপের মতো আরো অনেকে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করুক, এটাই কামনা।