ঢাকা ০৬:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মৃত্যুর পর পরিবার পাবে পেনশন সুবিধা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৪:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৯
  • ২৭৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শতভাগ পেনশন (এককালীন পেনশন সমর্পণ) তুলে নেওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বা স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তানও পেনশন সুবিধা পাবেন।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। পাশাপাশি চিকিৎসা ভাতা, উৎসব বোনাসও দেয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীর মৃত্যুর আগে পেনশন পুনঃস্থাপিত সুবিধা থাকতে হবে।

সম্প্রতি অর্থ বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর পেনশন ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পুনঃস্থাপিত হয়ে থাকলে মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বা স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান (যদি থাকে) পেনশন সুবিধা পাবেন।

একই সঙ্গে তারা ২০১৭ সালের ৩ আগস্টের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা পাবেন। অবসরপ্রাপ্তদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেনশন পুনঃস্থাপনের সিন্ধান্ত নেয়া হয়। এই সুবিধা পেতে একজন পেনশনকারীকে অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ ১৫ বছর বেঁচে থাকার পর নতুন করে সরকার তাকে ফের পেনশন দেবে।

ঐ নির্দেশনায় বলা হয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে যাওয়ার আগে এলপিআর বা পিআরএল যে তারিখ শেষ হয়েছে তার পরের দিন থেকে ১৫ বছর সময় গণনা করা হবে। আর সংশিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী এলপিআর বা পিআরএল ভোগ না করলে সে ক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে ১৫ বছর সময় গণনা করা হবে। এই ১৫ বছর পার হলে সরকার নতুন করে তাকে পেনশন সুবিধা দেয়ার বিধান চালু করেছে। এই সুবিধা যারা পাবেন সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা-কর্মচারী মৃত্যু হলে তার পেনশন সুবিধা পাবেন জীবিত স্ত্রী, স্বামী বা প্রতিবন্ধী সন্তান।

উল্লেখ্য, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ পেনশন একবারে তুলে নেওয়ার সুযোগ চালু হয় ১৯৯৪ সালে। তবে ২০১৭ সালের ৩০ জুন এতে পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৭ সালের ১ জুলাই জারি করা এক আদেশে পেনশনের ৫০ শতাংশ সরকারের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষণের কথা বলা হয়।

এরপর ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর অর্থ বিভাগের অপর আদেশে বলা হয়, শতভাগ পেনশন তুলে নেওয়া সরকারি কর্মচারীরা অবসর নেওয়ার দিন থেকে ১৫ বছর সময় পার হওয়ার পর থেকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা করে পেনশন পাবেন।

ওই আদেশে আরও বলা হয়, শতভাগ পেনশন তুলে নেওয়া কর্মচারীর ২০১৭ সালের ১ জুলাই বা এর পরবর্তী সময়ে যে পেনশন নির্ধারিত হবে তার ওপর প্রতি বছরের ১ জুলাই ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টও দেওয়া হবে।

তবে অবসর নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর মৃত্যুর পর স্ত্রী বা স্বামী কিংবা প্রতিবন্ধী সন্তানের পেনশন পাওয়ার বিষয়টি ওই প্রজ্ঞাপনে ছিল না।

জানা গেছে, শতভাগ পেনশন উত্তোলনের পর পনেরো বছর অতিক্রান্ত হয়েছে- এমন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বর্তমানে ২০ হাজার। এ খাতে সরকারের ব্যয় হচ্ছে বছরে ১৩৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদ্যমান পেনশন পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রতিবছর তারা ৫ শতাংশ হারে পেনশন সুবিধাভোগীরা ইনিক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। ফলে ওই হিসাবে সুবিধা দিতে সরকারকে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে ৬ কোটি টাকা।

জানা গেছে, শতভাগ পেনশন উত্তোলনকারীদের অনেকে পেনশনের অর্থ বিভিন্নভাবে নষ্ট করে ফেলছেন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কেউ কেউ। আবার জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে।

পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে প্রতারিত ও প্রলোভনে পড়ে প্রাপ্য অর্থ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পেনশনের অর্থ অনেকেই ধরে রাখতে পারেননি। ফলে তাদের অনেকে চরম আর্থিক দৈন্যতায় পড়ে আশ্রয় নিয়েছেন নিজের সন্তান এবং বৃদ্ধাশ্রমে। সরকারি চাকরিজীবী হওয়া, বয়স ও স্বাস্থ্যগত কারণে অনেকে অন্য কোনো কাজে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ বন্ধুদের মাসিক সাহায্যের ওপর বেঁচে আছেন। এমন সংখ্যা আছেন বর্তমানে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা পেনশনের একশ’ ভাগ টাকা তুলে নিয়ে অবসরে গেছেন। বর্তমান এ সব চাকরিজীবী বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী দু’টি উৎসব বোনাস, বাংলা নববর্ষ ভাতা ও মাসিক চিকিৎসা ভাতা পাচ্ছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মৃত্যুর পর পরিবার পাবে পেনশন সুবিধা

আপডেট টাইম : ১০:৫৪:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শতভাগ পেনশন (এককালীন পেনশন সমর্পণ) তুলে নেওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বা স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তানও পেনশন সুবিধা পাবেন।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। পাশাপাশি চিকিৎসা ভাতা, উৎসব বোনাসও দেয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীর মৃত্যুর আগে পেনশন পুনঃস্থাপিত সুবিধা থাকতে হবে।

সম্প্রতি অর্থ বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর পেনশন ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পুনঃস্থাপিত হয়ে থাকলে মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বা স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান (যদি থাকে) পেনশন সুবিধা পাবেন।

একই সঙ্গে তারা ২০১৭ সালের ৩ আগস্টের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা পাবেন। অবসরপ্রাপ্তদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেনশন পুনঃস্থাপনের সিন্ধান্ত নেয়া হয়। এই সুবিধা পেতে একজন পেনশনকারীকে অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ ১৫ বছর বেঁচে থাকার পর নতুন করে সরকার তাকে ফের পেনশন দেবে।

ঐ নির্দেশনায় বলা হয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে যাওয়ার আগে এলপিআর বা পিআরএল যে তারিখ শেষ হয়েছে তার পরের দিন থেকে ১৫ বছর সময় গণনা করা হবে। আর সংশিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী এলপিআর বা পিআরএল ভোগ না করলে সে ক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে ১৫ বছর সময় গণনা করা হবে। এই ১৫ বছর পার হলে সরকার নতুন করে তাকে পেনশন সুবিধা দেয়ার বিধান চালু করেছে। এই সুবিধা যারা পাবেন সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা-কর্মচারী মৃত্যু হলে তার পেনশন সুবিধা পাবেন জীবিত স্ত্রী, স্বামী বা প্রতিবন্ধী সন্তান।

উল্লেখ্য, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ পেনশন একবারে তুলে নেওয়ার সুযোগ চালু হয় ১৯৯৪ সালে। তবে ২০১৭ সালের ৩০ জুন এতে পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৭ সালের ১ জুলাই জারি করা এক আদেশে পেনশনের ৫০ শতাংশ সরকারের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষণের কথা বলা হয়।

এরপর ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর অর্থ বিভাগের অপর আদেশে বলা হয়, শতভাগ পেনশন তুলে নেওয়া সরকারি কর্মচারীরা অবসর নেওয়ার দিন থেকে ১৫ বছর সময় পার হওয়ার পর থেকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা করে পেনশন পাবেন।

ওই আদেশে আরও বলা হয়, শতভাগ পেনশন তুলে নেওয়া কর্মচারীর ২০১৭ সালের ১ জুলাই বা এর পরবর্তী সময়ে যে পেনশন নির্ধারিত হবে তার ওপর প্রতি বছরের ১ জুলাই ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টও দেওয়া হবে।

তবে অবসর নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর মৃত্যুর পর স্ত্রী বা স্বামী কিংবা প্রতিবন্ধী সন্তানের পেনশন পাওয়ার বিষয়টি ওই প্রজ্ঞাপনে ছিল না।

জানা গেছে, শতভাগ পেনশন উত্তোলনের পর পনেরো বছর অতিক্রান্ত হয়েছে- এমন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বর্তমানে ২০ হাজার। এ খাতে সরকারের ব্যয় হচ্ছে বছরে ১৩৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদ্যমান পেনশন পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রতিবছর তারা ৫ শতাংশ হারে পেনশন সুবিধাভোগীরা ইনিক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। ফলে ওই হিসাবে সুবিধা দিতে সরকারকে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে ৬ কোটি টাকা।

জানা গেছে, শতভাগ পেনশন উত্তোলনকারীদের অনেকে পেনশনের অর্থ বিভিন্নভাবে নষ্ট করে ফেলছেন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কেউ কেউ। আবার জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে।

পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে প্রতারিত ও প্রলোভনে পড়ে প্রাপ্য অর্থ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পেনশনের অর্থ অনেকেই ধরে রাখতে পারেননি। ফলে তাদের অনেকে চরম আর্থিক দৈন্যতায় পড়ে আশ্রয় নিয়েছেন নিজের সন্তান এবং বৃদ্ধাশ্রমে। সরকারি চাকরিজীবী হওয়া, বয়স ও স্বাস্থ্যগত কারণে অনেকে অন্য কোনো কাজে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ বন্ধুদের মাসিক সাহায্যের ওপর বেঁচে আছেন। এমন সংখ্যা আছেন বর্তমানে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা পেনশনের একশ’ ভাগ টাকা তুলে নিয়ে অবসরে গেছেন। বর্তমান এ সব চাকরিজীবী বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী দু’টি উৎসব বোনাস, বাংলা নববর্ষ ভাতা ও মাসিক চিকিৎসা ভাতা পাচ্ছেন।