হাওর বার্তা ডেস্কঃ ময়মনসিংহের ভালুকায় বাণিজ্যিকভাবে সৌদি খেজুরের বাগান করে সাড়া ফেলেছেন আব্দুল মোতালেব।
মরুভূমির উত্তপ্ত আবহাওয়ায় উৎপাদিত ফলকে লাল মাটিতে চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন তিনি। মোতালেবের সাফল্য দেখে এ অঞ্চলের অনেক বেকার যুবক এখন সৌদি আরবের খেজুর চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
খেজুরের এ চাষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দিতে বিদেশ থেকে টিস্যু কালচার পদ্ধতির চারা আনার কথা বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
১৯৯৮ সালে সৌদি আরব গিয়ে তিন বছর পর ৩৫ কেজি বিভিন্ন জাতের খেজুর নিয়ে দেশে ফিরে আসেন ময়মনসিংহের ভালুকার পাড়াগাঁও গ্রামের যুবক আব্দুল মোতালেব। দেশের মাটিতে সৌদি খেজুর ফলানোর ইচ্ছে থেকেই এত খেজুর নিয়ে তিনি দেশে ফেরেন। ২০০১ সালে নিজের বাড়ির পাশে খেজুরের বাগান তৈরির কাজ শুরু করেন।
আব্দুল মোতালেব বলেন, বিদেশে গিয়েছিলাম জীবিকার তাগিদে। আমি তেমন একটা লেখাপড়া করিনি। সৌদি আরব যাবার পর আমি কাজ পাই একটি খেজুর বাগান দেখাশুনার। সেখান থেকে আমি অনেক খুটি নাটি বিষয় শিখেছি এবং জানতে পেরেছি। তখন থেকেই মাথায় চিন্তা আসে নিজের দেশে সৌদি আরবের খেজুর চাষ করার।
‘দেশে ফিরে আমার বাড়ির পাশে একটি জমিতে খেজুরের চারা রোপন করি। কিন্তু প্রায় সব গাছই পুরুষ হয়ে যাওয়ায় খেজুর হয়নি। আবার গাছ লাগালে আবারও একই অবস্থা। তৃতীয় দফায় আমি সফল হই। এবার দুটি গাছে খেজুর হয়। সেই দুই গাছ থেকে আজ প্রায় ১২’শ চারা উৎপাদন করেছি। বর্তমানে প্রায় ১শ টি গাছে খেজুর ধরেছে। চলতি বছর ৫ লাখ টাকার খেজুর বিক্রি করেছি’-বলেন মোতালেব।
স্থানীয় আমিনুল ইসলাম জানান মোতালেব যখন এলাকায় সৌদি খেজুর গাছের চারা রোপন করে তখন মানুষ তাকে নিয়ে হাসি মসকরা করতো। সফলতা পাবার পর তার পরামর্শে অনেকে এখন খেজুর বাগান শুরু করেছে।
পাশ্ববর্তী খেজুর বাগানের মালিক আজিজুল হক বলেন, মোতালেবের বাগান দেখে আমিও দুই একর জায়গায় বাগান শুরু করেছি। আমার বাগানে ৩ টা গাছে খেজুর ধরেছে। আশাকরি আগামীতে আরো ফলন বাড়বে।
হবিরবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন বাচ্চু বলেন, মোতালেব খেজুর চাষী হিসেবে এখন আলোচিত ব্যক্তি। তার বাগানের খেজুর ও চারা নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোক আসছে। আশা করছি আগামী কয়েক বছরে মোতালেবের খেজুর দেশের চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নারগিস আক্তার বলেন, ভালুকার লাল মাটি খেজুর চাষের উপযোগী। আমরা খেজুর চাষের জন্য সারা বাংলাদেশকে ত্রিশটি অঞ্চলে ভাগ করেছি। তিনি আরো বলেন, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ‘উদ্যান উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে যে এলাকায় খেজুর চাষ হয় তা সম্প্রসারণের জন্য সৌদি আরব থেকে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চারা আনা হচ্ছে। খেজুর চাষের ক্ষেত্রে পুরুষ ও স্ত্রী গাছের চারা নির্বাচনে চাষীদের সমস্যায় পড়তে হয়। কারন অধিকাংশ চারা পুরুষ হয়ে যায়।
আজওয়া, ছুক্কারী, আমবাগ, বারহী এবং বকরী জাতের সৌদি খেজুরের মতোই মোতালেবের বাগানের খেজুরের আকার ও স্বাদ। বাজারে এর চাহিদাও বেশ। মোতালেবের বাগানের প্রতি কেজি খেজুর বিক্রি হয় ১ থেকে ২ হাজার টাকা। আর বীজ থেকে পাওয়া চারার দাম কম থাকলেও কলমের চারা বিক্রি হয় সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাও গ্রামে আব্দুল মোতালেবের বাড়িতে প্রতিদিনই দর্শণার্থীদের ভিড় থাকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক। সাধারণ একটি গ্রামে সৌদি খেজুরের বাগান দেখতে সব বয়সীদের আনাগোনা বেশ উপভোগও করছেন মোতালেব আর তার পরিবার।