বিদ্যুৎ অনেকভাবেই উৎপাদন করা যায়। বিদ্যুৎকেন্দ্র অনেক স্থানেই স্থাপন করা যাবে কিন্তু সুন্দরবন ধ্বংস হলে তা আর সৃষ্টি করা যাবে না’ উল্লেখ করে সুন্দরবন ধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাসহ বিভিন্ন সংগঠন।
সংগঠনগুলো বলছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প পথ আছে, কিন্তু সুন্দরবনের কোন বিকল্প নেই। আমরা বিদ্যুৎ চাই কিন্তু তা কোন ভাবেই সুন্দরবন ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রকৃতি-পরিবেশকে বিনষ্ট করে নয়।
সংগঠনগুলোর মতে, বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের সুন্দরবনের অদূরে রামপাল কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবনসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জন্য অচিরে এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প পথগুলো বিবেচনা না করে সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে ভারতের এনটিপিসি’র সাথে যৌথ উদ্যোগে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। একটি কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প হাজার হাজার টন সালফার, নাইট্রোজেন,ছাঁই,কয়লা ধোয়া পানি নি:সরন করে। এসবের ফলে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে পরিবেশের। শুধু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, ইতিমধ্যে ওরিয়নকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হলে, বাস্তবে সুন্দরবন নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে পড়বে। ইতিমধ্যে শ্যালো নদীতে তেলের ট্যাংকার, ভোলা নদে সারবাহী জাহাজ ডুবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে , ভবিষ্যতে কয়লা পরিবহণের ক্ষেত্রে বিপদ কত ভয়াবহ হতে পারে।
সম্প্রতি সিপিবি ও বাসদের যৌথ প্রকাশনায় ‘সুন্দর আমাদের বাঁচায়, আসুন সুন্দরবনকে রক্ষা করি-সুন্দরবন রক্ষা অভিযাত্রা’ শিরোনামে বইতে উল্লেখ করা হয়েছে, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানিকৃত কয়লা সুন্দরবনের ভেতর দিয়েই পরিবহন করা হবে। এ জন্য সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে প্রায় সারা বছর ধরে হাজার হাজার টন কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ চলাচল করে গোটা সুন্দরবনের পরিবেশ ধ্বংস করে ফেলবে।
এখানে টেকনোলজী ব্যবহার করা হবে তাতেও কি সুন্দরবনের ক্ষতি হবে এমন প্রশ্ন করলে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি জাগো নিউজকে বলেন, সুপার ক্রিটিকাল টেকনোলজী পরিবেশ দূষণ কমায় এটা ঠিক কিন্তু কত পরিমানে? সুপার ক্রিটিকাল টেকনোলজী ব্যবহার করলে কোন কোন ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ক্ষতি কমে। তাতে কি সুন্দরবন ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধ হবে?
তিনি আরো বলেন, একজন মানুষকে প্রথমে ১০ ফিট পানির নিচে ডুবিয়ে রেখে, এক ফিট পানি কমিয়ে দিয়ে যদি তাকে বলা হয়, যাও তোমাকে এক ফিট পানি কমিয়ে দিলাম, তাহলে কি সেই মানুষের কোন উপকার আসবে? তাহলে সুপার ক্রিটিকাল টেকনোলজী ব্যবহার করে কি লাভ হবে’?
সম্প্রতি গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার ‘সুন্দরবন রক্ষা সংহতি’ সমাবেশে তেল-গ্যাস বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মাদ বলেছেন, আমরা সুন্দরনের বিভিন্ন ক্ষতির দিক বিবেচনা করে দীর্ঘ দিন ধরে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছি কিন্তু সরকার তাতে কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করলে বর্তমান সরকার ইতিহাসে পরিবেশ ধ্বংসকারী হিসেবে পরিচিত হবে।
সিপিবি-বাসদ তাদের লিফলেটে উল্লেখ করেছে, সুন্দরবন হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। ১৯৯২ সালে রামসার সাইট হিসাবে এবং ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে স্বীকৃতি পায়। লাখ লাখ মানুষের জীবিকা ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে কোটি কোটি মানুষকে রক্ষা করছে সুন্দরবন। মাছ, গাছ, মধু, গোলপাতা ও শত শত প্রজাতির বন্যপ্রানীসহ প্রাকৃতিক সম্পদের আধার আমাদের সুন্দরবন। ৪০০ টি খাল, ছোট বড় ২০০টি দ্বীপ সমন্বয়ে গঠিত সুন্দরবন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে ধ্বংস হবে এই সুন্দরবন।