হাওর বার্তা ডেস্কঃ জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী কথিত যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীমের প্রায় ২৫০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তথ্য-প্রমাণ মিলেছে নামে-বেনামে বিভিন্ন একাউন্ট থেকে অন্তত ১০ হাজার মার্কিন ডলার বিদেশে পাচারেরও। অনুসন্ধানে জি কে শামীমের অন্তত ৩৫ ব্যাংক হিসাব যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।
অবৈধ সম্পদের প্রমান মিলেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধেও। টাকার অংকে প্রায় দুই কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ তথ্য-প্রমাণ দুদকের হাতে।
এছাড়াও বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার নামে তিন কোটি টাকার, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ভাই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রামে একাধিক ফ্ল্যাট, বিভিন্ন ব্যাংকের লেনদেন, উদ্ধারকৃত টাকা ও স্বর্নালংকার ইত্যাদি। আর বিদেশে ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয়ের বিষয়টি আপাতত মামলায় আসবে না। কারণ এ বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া বেশ সময় সাপেক্ষ ও সংশ্লিষ্ট দেশের ওপর নির্ভর করছে বলে জানা গেছে।
অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ মিলেছে গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, কৃষক লীগের নেতা সভাপতি শফিকুল ইসলাম, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া ও অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধানসহ অন্তত ১৩ জনের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধান পর্যায়ে তাদের আয়কর নথি, ব্যাংক হিসাব, রাজউক, ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন গোয়েন্দাসংস্থা থেকে প্রাপ্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদকের অনুসন্ধান টিম। শিগগিরই পৃথক পৃথক মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হবে বলে দুদকের উর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য অনুসন্ধানে যোগ হচ্ছে। পুলিশের সিআইডি, র্যাব কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে অভিযুক্তদের নাম, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সম্পদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যতটুকু তথ্য আমাদের হাতে রয়েছে তা মামলার জন্য যথেষ্ট। তদন্তে তাদের সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি বেড়িয়ে আসবে। খুব শিগগিরই মামলা হবে।
দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত রাইজিংবিডিকে এ বিষয়ে বলেন, দুদক ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এমন ৪৩ জনের নামের তালিকা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তবে প্রতিদিনই নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে। নামের তালিকা আরো বাড়বে। অনুসন্ধান শেষ হলে বাকিটা জানতে পারবেন।
অন্যদিকে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য এ বিষয়ে রাইজিংবিডিকে বলেন, চলমান অনুসন্ধানে মামলা করার মতো যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ মিলছে। মামলা কবে হবে তা বলা মুশকিল। এটুকু বলতে পারি অবৈধ সম্পদের পাহাড় যারা গড়েছেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ক্যাসিনো ব্যবসার সাথে জড়িতরা অবৈধ অর্থ লুকিয়ে রাখতে নামে-বেনামে ব্যাংক হিসাব খোলেন।বাড়ির কেয়ারটেকার, নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে দূর সম্পর্কের একাধিক আত্মীয়র নামেও একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলছে। যত দিন যাচ্ছে সম্পদের তথ্য-প্রমাণ আসছে বিভিন্ন সংস্থার হাতে।
অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা ও সরকারি প্রকল্পে ঘুষ লেনেদেনের সঙ্গে জড়িত অন্তত ৫১ জনের তালিকা ধরে অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুদক। যেখানে বর্তমান দুই সংসদ সদস্য, যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলী এবং তাদের স্বজনদের নাম রয়েছে। যাদের মধ্যে আরো আছেন- ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী, জি কে শামীম পরিবার, সম্রাটের পরিবার, গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামসহ চার প্রকৌশলী, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শোভন-রাব্বানী, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমান, কাজী আনিসুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মোল্লা আবু কাওসার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ও হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি মুরসালিক আহমেদসহ বিভিন্ন নেতার আত্মীয় স্বজনরা। অন্যদিকে যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে দুদক।
এর আগে গত ৯ ও ১০ অক্টোবর যথাক্রমে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যা ব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইউ) সঙ্গে এ বিষয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে দুদক।
১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অভিযানে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কয়েকজন নেতার ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এর পরপরই গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করে সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গির আলম, সালাউদ্দিন আহমেদ, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরি ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।