হাওর বার্তা ডেস্কঃ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলাকে বলা হয় পর্যটনের স্বর্গ। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্যান আর চা বাগানের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের জন্য এখানে সব সময় পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। এবার পর্যটকদের জন্য নতুন আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে পরীবিলের সাদা পদ্ম। চারিদিকে চা বাগান ঘেরা থাকায় এখানে এসে পর্যটকরা একই সাথে চা বাগানও দর্শন করতে পারছেন। এর বাইরে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন সাদা পদ্মের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ন্যাশনাল টি কম্পানির মালিকানাধীন চন্ডিছড়া চা বাগানে অবস্থিত পরীবিল। এখানে এখন সাদা পদ্ম ফুল ফুটে অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। কিছুদিন পর এখানে লাল পদ্ম ও শাপলা ফুলও ফুটবে। সাদা পদ্মময় এ বিল পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। চারদিকে চা বাগানঘেরা এ বিলকে ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিকেলেবেলা প্রতিদিন এখানে পর্যটকদের ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে।
চুনারুঘাটের সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ জানান, যে কেউ বিকেলে ঘুরে আসতে পারেন এ বিল। সাথে পাবেন ছায়াঘেরা চা বাগান। এটি চন্ডিছড়া চা বাগানে পড়েছে। আমু চা বাগানে যেতে বাঁয়ের রাস্তা ধরেই এ পরীবিল।
চুনারুঘাটের সামজিক সংগঠক মোহাম্মদ ফুল মিয়া খন্দকার বলেন, আমরা জানি প্রকৃতির প্রধান উপাদান ৬টি। যার একটিকে ছাড়া অন্যটি টিকে থাকতে পারে না। প্রকৃতির এ উপাদানসমূহকে এক সঙ্গে আমরা পরিবেশ বলতে পারি। আর এই পরিবেশকে আর মনোমুগ্ধকর করে তোলে বিভিন্ন মৌসুমে ফোঁটা বিভিন্ন ধরনের ফুল। তেমনি মনোমুগ্ধকর একটি জায়গা এরই মধ্যে সকলের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে সাদা পদ্মবেষ্টিত পরীবিল। পরিবেশের এই মনোমুগ্ধকর সাদা পদ্ম পরীবিলের বিপর্যয় রক্ষঅ করা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।
চন্ডিচড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, এই বিল বাগানের ভেতরে সংরক্ষিত এলাকায় অবস্থিত। আমরা এই বিলের পরিচর্যা করি বলে এখানে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবেদ হাসনাত চৌধুরী সঞ্জু বলেন, এই পরীবিল শুধু আমার ইউনিয়নেরই নয়, সমগ্র উপজেলার একটি সুন্দর স্থান। আমাদের সবাইকে মিলে এই বিল রক্ষা করতে হবে।
সরকারি বৃন্দাবন কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দেব জানান, পদ্মফুল দেখতে যেমন যেমন সুন্দর তেমনি এর অনেক গুণাগুণ রয়েছে। পদ্মফুলের মধু চোখের অসুখের মহৌষধ। এর স্কন্ধ শ্বেতী ও হৃদরোগের ওষুধ হিসাব ব্যবহার করা হয়। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে অনেক মিথলজি আছে এই পদ্মফুল নিয়ে। এই ফুল নিয়ে অনেক সাহিত্যও আছে। ভালো যায়গা ছাড়া এই ফুল হয় না বলে গোবরে পদ্মফুল প্রবাদ প্রচলিত।
তিনি আরো জানান, এই ফুল আমাদেরকে সংরক্ষণ করতে হবে। সিলেট এমসি কলেজ ও মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের পুকুরে এই ফুল সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। হবিগঞ্জে এক সময় এই ফুলের আধিক্য ছিল। হবিগঞ্জে আবিষ্কৃত পদ্ম বিল থেকে অবাধে ফুল ছেঁড়ায় এটি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন চুনারুঘাটে আবিষ্কৃত পদ্মবিলটিকে আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন ইকবাল বলেন, পরীবিলের সৌন্দর্যেরে বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছে। এটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।