ঢাকা ০৮:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিষাক্ত সিসা মেশানো হচ্ছে গুঁড়া হলুদে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৯:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০১৯
  • ২১২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাজার থেকে কেনা গুঁড়া হলুদে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত সিসা! এই গুঁড়া হলুদ মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

দীর্ঘদিন ধরে সিসা মিশ্রিত হলুদ খেলে হৃদরোগ, স্মৃতিভ্রম, মাথাব্যথা, বিষণ্ণতা, হরমোনজনিত রোগ ও ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। এমন কি বাধাগ্রস্ত করে শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশও।

এ কারণে কাঁচা হলুদ বা হলুদের গুঁড়ায় সিসার ব্যবহার না করতে সতর্কতামূলক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে আমাদের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খাবার জন্য ব্যবহৃত শুকনো বা গুঁড়া হলুদে প্রাপ্ত সিসার উৎস হচ্ছে অবৈধভাবে ব্যবহৃত রঙ বা উজ্জ্বলকারক লেড ক্রোমেট (PbCro4)। যা স্থানভেদে ‘পিউরি’, ‘পিপড়ি’, ‘বাসন্তি রং’, ‘কাঁঠালি’ বা ‘সরষে ফুল রঙ’ নামে পরিচিত।

সম্প্রতি আইসিডিডিআর’বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত এক যৌথ গবেষণায় খাদ্যে ব্যবহৃত হলুদে মারাত্মক বিষাক্ত সিসার উপস্থিতি পেয়েছে।

এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বিক্রিত হলুদের গুঁড়ার রঙ উজ্জ্বল করতে মারাত্মক বিষাক্ত সিসা (লেড ক্রোমেট) ব্যবহার করা হচ্ছে। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ধরনের ক্ষতিকর সিসা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের ফলে অস্থিমজ্জায় ক্রিয়া করে রক্তের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে।

গর্ভে থাকালীন সময়ে এই গুঁড়ার সংস্পর্শে এলে শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই বাজারে বিক্রিত গুঁড়া হলুদের পরিবর্তে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে হলুদ গুঁড়া করে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

উজ্জ্বল রঙ নয়- এমন হলুদ আকর্ষণীয় করতে বিক্রেতারা হলুদে লেড ক্রোমেট ব্যবহার করে। মূলত যেসব ব্যবসায়ী হলুদ গুঁড়া করে বাজারজাত করে তারাই এটি ব্যবহার করে থাকেন। এর ফলে হলুদের রঙ উজ্জ্বল হয় এবং ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়- প্রতিবেদনে এরকম কথাও তুলে ধরেছেন গবেষকরা।

গবেষকরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫০০টিরও বেশি নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল হলুদ, হলুদের অবশিষ্ট অংশ এবং যে স্থানে হলুদ গুড়া করা হয় সেই স্থানের মাটি। এই নমুনাগুলোতে সিসার উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। এর পরিমাণ প্রতি গ্রামে ১,১৫২ মাইক্রোগ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৪,২৫৭ মাইক্রোগ্রাম। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় দেড় শতাধিক ব্যবসায়ী হলুদে রঞ্জক হিসেবে সিসা মেশানোর কথা স্বীকারও করেছেন গবেষকদের কাছে।

গবেষণার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের মানুষ রান্না করা তরকারির রঙ উজ্জ্বল করতে প্রধানত হলুদ ব্যবহার করে। তাই এ দেশের মানুষের কাছে হলুদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। হলুদে ক্ষতিকর রঙ মেশানোর প্রধান কারণও এটি।

স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করে গবেষক দল বলেছে, ক্রেতারা হলুদে বিষাক্ত রঙ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারলে তা আর ব্যবহার করবে না। বাজার থেকে গোটা হলুদ কিনে নিজেরাই গুঁড়া করে বা পিষে সেগুলো ব্যবহার করবেন।

সিসা মিশ্রিত খাদ্য খেলে যেসব রোগ হয় তার মধ্যে আছে-

* পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা (কোষ্ঠকাঠিন্য, বমিভাব, ক্ষুধামন্দা, অরুচি), হৃদ-রক্তনালীর রোগ (রক্তশূন্যতা, উচ্চ রক্তচাপ) ইত্যাদি বৃদ্ধি করে।

* দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে।

* শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে ও প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিভ্রম, মাথাব্যথা, বিষন্নতা ও মনো-স্নায়ুবিক বৈকল্য সৃষ্টি করে।

* হরমোনজনিত রোগ বাড়ায়।

এ প্রসেঙ্গ আইসিডিডিআর’বির গবেষকরা জানান, এ ধরনের হলুদ ব্যবহারে শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবকি বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এছাড়া হৃদরোগসহ নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করে। বাজারের এসব হলুদগুঁড়া পরিহার করে হলুদ কিনে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ভাঙিয়ে নিলে এই সমস্যা এড়ানো যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বিষাক্ত সিসা মেশানো হচ্ছে গুঁড়া হলুদে

আপডেট টাইম : ১২:২৯:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাজার থেকে কেনা গুঁড়া হলুদে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত সিসা! এই গুঁড়া হলুদ মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

দীর্ঘদিন ধরে সিসা মিশ্রিত হলুদ খেলে হৃদরোগ, স্মৃতিভ্রম, মাথাব্যথা, বিষণ্ণতা, হরমোনজনিত রোগ ও ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। এমন কি বাধাগ্রস্ত করে শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশও।

এ কারণে কাঁচা হলুদ বা হলুদের গুঁড়ায় সিসার ব্যবহার না করতে সতর্কতামূলক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে আমাদের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খাবার জন্য ব্যবহৃত শুকনো বা গুঁড়া হলুদে প্রাপ্ত সিসার উৎস হচ্ছে অবৈধভাবে ব্যবহৃত রঙ বা উজ্জ্বলকারক লেড ক্রোমেট (PbCro4)। যা স্থানভেদে ‘পিউরি’, ‘পিপড়ি’, ‘বাসন্তি রং’, ‘কাঁঠালি’ বা ‘সরষে ফুল রঙ’ নামে পরিচিত।

সম্প্রতি আইসিডিডিআর’বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত এক যৌথ গবেষণায় খাদ্যে ব্যবহৃত হলুদে মারাত্মক বিষাক্ত সিসার উপস্থিতি পেয়েছে।

এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বিক্রিত হলুদের গুঁড়ার রঙ উজ্জ্বল করতে মারাত্মক বিষাক্ত সিসা (লেড ক্রোমেট) ব্যবহার করা হচ্ছে। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ধরনের ক্ষতিকর সিসা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের ফলে অস্থিমজ্জায় ক্রিয়া করে রক্তের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে।

গর্ভে থাকালীন সময়ে এই গুঁড়ার সংস্পর্শে এলে শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই বাজারে বিক্রিত গুঁড়া হলুদের পরিবর্তে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে হলুদ গুঁড়া করে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

উজ্জ্বল রঙ নয়- এমন হলুদ আকর্ষণীয় করতে বিক্রেতারা হলুদে লেড ক্রোমেট ব্যবহার করে। মূলত যেসব ব্যবসায়ী হলুদ গুঁড়া করে বাজারজাত করে তারাই এটি ব্যবহার করে থাকেন। এর ফলে হলুদের রঙ উজ্জ্বল হয় এবং ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়- প্রতিবেদনে এরকম কথাও তুলে ধরেছেন গবেষকরা।

গবেষকরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫০০টিরও বেশি নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল হলুদ, হলুদের অবশিষ্ট অংশ এবং যে স্থানে হলুদ গুড়া করা হয় সেই স্থানের মাটি। এই নমুনাগুলোতে সিসার উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। এর পরিমাণ প্রতি গ্রামে ১,১৫২ মাইক্রোগ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৪,২৫৭ মাইক্রোগ্রাম। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় দেড় শতাধিক ব্যবসায়ী হলুদে রঞ্জক হিসেবে সিসা মেশানোর কথা স্বীকারও করেছেন গবেষকদের কাছে।

গবেষণার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের মানুষ রান্না করা তরকারির রঙ উজ্জ্বল করতে প্রধানত হলুদ ব্যবহার করে। তাই এ দেশের মানুষের কাছে হলুদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। হলুদে ক্ষতিকর রঙ মেশানোর প্রধান কারণও এটি।

স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করে গবেষক দল বলেছে, ক্রেতারা হলুদে বিষাক্ত রঙ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পারলে তা আর ব্যবহার করবে না। বাজার থেকে গোটা হলুদ কিনে নিজেরাই গুঁড়া করে বা পিষে সেগুলো ব্যবহার করবেন।

সিসা মিশ্রিত খাদ্য খেলে যেসব রোগ হয় তার মধ্যে আছে-

* পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা (কোষ্ঠকাঠিন্য, বমিভাব, ক্ষুধামন্দা, অরুচি), হৃদ-রক্তনালীর রোগ (রক্তশূন্যতা, উচ্চ রক্তচাপ) ইত্যাদি বৃদ্ধি করে।

* দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে।

* শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে ও প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিভ্রম, মাথাব্যথা, বিষন্নতা ও মনো-স্নায়ুবিক বৈকল্য সৃষ্টি করে।

* হরমোনজনিত রোগ বাড়ায়।

এ প্রসেঙ্গ আইসিডিডিআর’বির গবেষকরা জানান, এ ধরনের হলুদ ব্যবহারে শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবকি বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এছাড়া হৃদরোগসহ নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করে। বাজারের এসব হলুদগুঁড়া পরিহার করে হলুদ কিনে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ভাঙিয়ে নিলে এই সমস্যা এড়ানো যাবে।