হাওর বার্তা ডেস্কঃ সৌদি আরবের একাংশে প্রথমবারের মতো গভীর প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ শুরু করেছে এক দল গবেষক। এর ফলে উঠে আসতে পারে সৌদিতে থাকা প্রাচীন রহস্যময় সভ্যতার সন্ধান। এই জরিপে গবেষকদের উদ্দেশ্য, একসময় সেই অঞ্চলে বসবাসকারী ‘রহস্যময়’ সভ্যতার বিষয়ে আলোকপাত করা। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত বিবিসি বাংলা অনলাইনের এক প্রতিবেদন এমনটিই বলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একটি সভ্যতার বাস ছিল এ অঞ্চলে (বর্তমান সৌদি আরব), যা ‘নবতায়িয়ান’ সভ্যতা নামে পরিচিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১০০ বর্ষ থেকে শুরু করে পরবর্তী ২০০ বছর টিকেছিল এই সভ্যতা। নবতায়িয়ান সংস্কৃতি নামে পরিচিত সেই সভ্যতার অত্যন্ত জটিল ও উন্নত কিছু পাথরের স্মৃতিস্তম্ভ সেই সময়ে সাক্ষ্য দিলেও এখনো অনেক ক্ষেত্র অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।
সৌদি আরবের আল উলার শিলাকীর্ণ মরুভূমির কুচকুচে কালো আকাশের জন্য পরিচিত। নবতায়িয়ান শাসকরা তাদের সাম্রাজ্য শাসন করতেন মনোমুগ্ধকর শহর পেত্রা থেকে, যা জর্ডানে অবস্থিত। আল উলায় তারা তাদের দ্বিতীয় রাজধানী হেগ্রা (আধুনিক নাম মাদা ইন সালেহ) স্থাপন করেছিল। বর্তমানে, প্রত্নতত্ত্ববিদরা ওই এলাকায় একটি বিস্তীর্ণ ভূমি, যা প্রায় ইউরোপের বেলজিয়ামের সমান, সেখানে বিশদভাবে জরিপ চালানোর পরিকল্পনা করছেন।
সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৩৩শ’ বর্গকিলোমিটার এলাকায় দুই বছরব্যাপী একটি জরিপ প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ৬০ জন বিশেষজ্ঞের একটি আন্তর্জাতিক দল কাজ শুরু করেছে। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো এত বড় এলাকায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রক্রিয়াগতভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আল উলার রয়্যাল কমিশনের জরিপ বিষয়ক দলের প্রধান এবং মার্কিন প্রত্নতাত্ত্বিক রেবেকা ফুটি বলেন, ‘আগের প্রকল্পগুলোতে মূলত খনন কাজের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ এ ধরনের সুশৃঙ্খল জরিপ পরিচালনার জন্য অনেক সময় এবং অর্থের দরকার। সৌদি আরবের এই উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেশটিকে প্রাচীন ইতিহাসের মানচিত্রে জায়গা করে দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খ্রিস্টপূর্ব প্রথম থেকে তৃতীয় সহস্রাব্দ সম্পর্কে বিস্তারিত অনেক তথ্য জানা গেছে এবং আমরা সবাই প্রাচীন মিসর এবং মেসোপটেমিয়া সম্পর্কে জানি। কিন্তু, এখন পর্যন্ত প্রাচীন সময়ের আরব উপত্যকা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। আমাদের পাওয়া তথ্য প্রাচীন ইতিহাস বুঝতে কীভাবে সহায়তা করবে সে সম্পর্কেও এখনো আমরা কিছু জানি না। কিন্তু মনে হচ্ছে যে, প্রাথমিক যুগ সম্পর্কে বৈশি^ক মত পাল্টে দিতে পারে এটি।’
জর্ডানে অবস্থিত প্রাচীন শহর পেত্রায় নবতায়িয়ান সভ্যতার সবচেয়ে আলোচিত স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। রেবেকা ফুটি বলেন, ‘আকাশ পথে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো হবে মূল চাবিকাঠি যার সাহায্যে ওই সভ্যতার সমাধিস্তম্ভের স্থাপত্য, দাঁড়িয়ে থাকা পাথর এবং আরও অন্যান্য অপ্রচলিত সাইট নিয়ে অনুসন্ধান চালানো সহজ হবে।’
জানা যায়, দুই কিংবা তিন হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়ে অক্সফোর্ডের প্রত্নতাত্ত্বিক জেমি কুয়ারটারমাইনের নেতৃত্বে থাকা জরিপ দলটি এরইমধ্যে সৌদি আরবে থাকা প্রত্যাশিত সাড়ে এগারো হাজার সাইটের মধ্যে অর্ধেকেরই অবস্থান খুঁজে পেয়েছে। ‘প্রতিরোধমূলক জরিপ’ নামে পরিচিত এই জরিপের মানে হচ্ছে, এসব প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায় ভবিষ্যতে কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণকাজ পরিচালনা করা হবে না।
বাদশাহ সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক আবদুল রাহমান আলসুহাইবানি কয়েক বছর ধরে সৌদির দেদান এলাকায় খনন চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে এমন একটি সাইট পাওয়া গেছে যেখানে নবতায়িয়ানদের আগেরও সভ্যতার তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এমনটাও হতে পারে যে, এসব বিষয়ে জানতে কয়েক প্রজন্ম দরকার হতে পারে। বিশে^র দরবারে এই কাজগুলো অনেক বেশি মূল্যবান। কেননা পুরনো সভ্যতা যা আমাদের কাছে এখনো অজানা, তারও ইঙ্গিত রয়েছে এখানে।’