হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানুষের শরীরে কি-না জীবের বসবাস। ভাবতে নিশ্চয়ই অবাক লাগছে? নারীরা অবশ্য উঁকুনের জ্বালায় অতীষ্ট হয়ে যান! তবে শুধু উঁকুন নয় এমনই আরো নয়টি জীবন শরীরে বসবাস করে।
ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, আর্কিয়া (archaea), ছত্রাক ও প্রটিস্টা ছাড়াও বেশ কিছু ছোট প্রাণী বাস করে আপনার শরীরে। সাধারণত মানুষের চামড়া, স্তন গ্রন্থি, প্লাসেন্টা, জরায়ু, ওভারির ফলিকল, বীর্য, ফুসফুস, লালা, মুখের মিউকাস স্তর, কনজাংটিভা, পিত্তনালী, পৌস্টিকনালী প্রভৃতি অংশে অণুজীবেরা তাদের বসতি গড়ে তোলে। ছোট প্রাণীরা বাস করে মূলত চামড়ায়। আসুন চিনে নেয়া যাক ১০ ধরনের অণুজীব ও ছোট প্রাণীকে, যারা আমাদের দেহকে তাদের বসতবাড়ি বানিয়ে ফেলেছে-
হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস
কয়েকশো ধরনের হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) মানুষের শরীরে বাস করলেও টাইপ ১৬ এবং টাইপ ১৮ বেশি ক্ষতিকারক। এরা কয়েক প্রকার ক্যান্সারের মূল কারণ।
ডেন্টাল স্ট্রেপ্টোকক্কাস
নিয়মিত ব্রাশ না করলে আমাদের দাঁতের ওপরে একটা ব্যাক্টেরিয়ার স্তর পড়ে যায়। এরা বেশিরভাগই হল Streptococcus sanguis এবং S. mutans। নিয়মিত ব্রাশ করলেও এরা কিছু পরিমাণে দাঁতে থেকেই যায়। দাঁত গজানোর সঙ্গে সঙ্গে এরা আবির্ভূত হয়, আর থাকে দাঁত খসে না যাওয়া পর্যন্ত।
ভ্যাজাইনাল ফ্লোরা
ল্যাক্টোব্যাসিলাস গ্রুপের এই ব্যাকটেরিয়ারা বাস করে নারীদের জননাঙ্গে। নিয়মিত ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপাদন করে বলে কিছু ক্ষতিকর জীবাণু যেমন Candida albicans নারীর যৌনাঙ্গে জন্মাতে পারে না। L. crispatus এই রকমই একটি উপকারি ব্যাকটেরিয়া।
‘অ্যাথলিট’স ফুট’ ছত্রাক
এই ছত্রাক নখে ও আঙুলের ভাঁজে বাস করে। অনেক সময়ে মাথার তালুতেও এরা জন্মায়। ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় একজনের শরীর থেকে অন্যের শরীরে এই ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে। Trichophyton এবং Epidermophyton এই ধরনের ছত্রাক।
শিংগলস ভাইরাস
আপনার একবার যদি চিকেন পক্স হয়ে থাকে তবে আপনার শরীরের মেরুদণ্ডের কাছের স্নায়ুতে varicella-zoster নামের ভাইরাসটি বাস করছে। এমনিতে নিস্ক্রিয় অবস্থায় থাকলেও, বয়স বাড়লে অথবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এই ভাইরাস আবার সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। তখন শরীরে জ্বালা-যন্ত্রণা এবং ত্বকে র্যাশ দেখা যায়। একে বলে শিংগলস।
ডেমোডেক্স মাইট
আপনার চোখের পাতার গোড়ায় এরা বাস করে। এখানেই তারা তাদের জীবন কাটায় ও বংশবৃদ্ধি করে। দিনের বেলা এরা চুপচাপ থাকে। রাতে আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন আমাদের মুখের উপরে এরা চলাফেরা করে। আমাদের বয়স যত বাড়তে থাকে, এদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়তে থাকে।
এঁটুলি পোকা
এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পোকাটি মানুষের মাংস খেতে খুব ভালোবাসে। পোকাটির শরীর আবার নানান ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াতে পূর্ণ থাকে। এরা আমাদের শরীরে Lyme disease ও babeiosis রোগ ছড়ায়।
চিগো ফ্লি
আপনার চামড়ায় বাস করে। সেখানেই শ্বাসকার্য চালায়, বর্জ্যপদার্থ ত্যাগ করে এবং ডিম পাড়ে। এরা আমাদের চামড়ার ভেতর তাদের মাথাটা ঢুকিয়ে রাখে। আমাদের শরীরে এরা পচন (gangrene/necrosis) যক্ষ্মা (tuberculosis) রোগ ঘটায়।
চিগার
এই পোকার লার্ভা রাসায়নিক পদার্থ ত্যাগ করে আমাদের চামড়ায় ফুটো করে। এরপর দেহের ভেতরে ঢোকে এবং চামড়ার ঠিক নীচে থাকা রক্তনালীর ভেতরে বাস করে। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার খেয়ে পূর্ণবয়স্ক হয় এবং বাইরে বেরিয়ে আসে আমাদের কোনো ক্ষতি না করেই।
যৌনকেশের কাঁকড়া উকুন
সাধারণত যৌনাঙ্গের কেশে বাস করে। কাঁকড়ার মতো দাঁড়া থাকায় এই নাম। ত্বকে গর্ত করে রক্ত পান করে। ফলে ভীষণ চুলকানি ও অস্বস্তি দেখা দেয়। যৌনমিলনের সময় একজনের শরীর থেকে অন্যের শরীরে সহজে এদের সংক্রমণ ঘটে।
পাঁচড়া পোকা
আপনার চামড়ায় বাস করে। হাসপাতালের রোগী ও জেলের কয়েদিদের মধ্যে এর ভয়ঙ্কর সংক্রমণ ঘটে। র্যা শ ও প্রচণ্ড চুলকানি শুরু হয়। পাঁচড়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সামান্য ছোঁয়া আপনার শরীরে এই কীটের অনুপ্রবেশ ঘটাতে পারে।
আমাদের শরীরে উপরের জীবগুলোর উপস্থিতি বেশিরভাগ সময়ে টেরও পাই না। তবে বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরের ভেতর এদের উৎপাত বেড়ে গেলে শুরু হয় শারীরিক অস্বস্তি। দেখা দেয় বিভিন্ন উপসর্গ। ছুটতে হয় চিকিৎসকের কাছে।