ঢাকা ০৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

ইমরান খান উস্কানি দিচ্ছেন- ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:০৪:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২৪১ বার

 ্‌ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তার ভাষণে ইমরান খান কাশ্মীর প্রসঙ্গে ভারত এবং নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে চরম ক্ষুব্ধ ভারত।

ইমরান খান বলেন, জাতিসংঘের মনে রাখা উচিৎ ১৯৩৯ সালে ইউরোপ হিটলারের অপরাধকে গুরুত্ব দেয়নি বলেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল।

এ শুধু এ কথাতেই থামেননি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

নরেন্দ্র মোদীর নাম করে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরএসএস নামে যে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের আজীবন সদস্য, সেই সংগঠনের ‘আদর্শ হচ্ছে হিটলার এবং মুসোলিনি’ এবং ঐ আরএসএস-ই মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল।

ইমরানের খানের এ ধরণের মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারত।

উত্তর দেওয়ার অধিকারের সুযোগ নিয়ে মি. খানের ভাষণের পরপরই জাতিসংঘে ভারতের এক কূটনীতিক বিদিশা মৈত্র বলেন, “ইমরান খানের বক্তব্য উস্কানিমূলক এবং পুরোপুরি মিথ্যা।”

পারমানবিক যুদ্ধের হুমকি

প্রায় ৫০ মিনিটের দীর্ঘ ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য ছিল কাশ্মীরের ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ।

তিনি বার বারই বলতে চেয়েছেন, ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করে গত প্রায় দু মাস ধরে ৮০ লাখ কাশ্মীরিকে যেভাবে ‘পশুর মত’ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তা যে কোনো সময় বিপজ্জনক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

ইমরান খান সাবধান করেন, আশঙ্কা রয়েছে কাশ্মীরী তরুণ যুবকরা যে কোনো সময় সহিংস বিক্ষোভ শুরু করতে পারে যার জন্য ভারত হয়তো পাকিস্তানকে দায়ী করবে।

তিনি বলেন, তেমন কিছু হলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা নাকচ করা যায়না যে যুদ্ধ পারমানবিক সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

বিদিশা মৈত্র, জাতিসংঘে ভারতের কূটনীতিকইমরান খানের বক্তব্য মিখ্যা এবং উস্কানিমুলক – বিদিশা মৈত্র, জাতিসংঘে ভারতের কূটনীতিক

‘যদি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো যুদ্ধ হয়, তাহলে ছোটো দেশে হিসাবে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার ছাড়া পাকিস্তানের কোনো বিকল্প থাকবে না।”

এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কাশ্মীর নিয়ে চুপ করে রয়েছে কারণ ‘ভারত একটি বড় বাজার’।

ইমরান খান অভিযোগ করেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি ভারতের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোনো ইতিবাচক সাড়া তিনি পাননি, বরঞ্চ মি. মোদী পাকিস্তানকে তার নির্বাচনী প্রচারণার মুখ্য ইস্যু তৈরি করেন।

ভদ্রতা বিবর্জিত ভাষণঃ ভারতের প্রতিক্রিয়া

উত্তর দেওয়ার অধিকারের সুযোগ নিয়ে মি. খানের ভাষণের পরপরই জাতিসংঘে ভারতের এক কূটনীতিক বিদিশা মৈত্র বলেন, ইমরান খান জাতিসংঘের মত আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মের ‘অপব্যবহার’ করেছেন।

“একবিংশ শতাব্দীতে এসে ‘গণহত্যা’ ‘জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব’ ‘আমৃত্যু লড়াই’ এ ধরনের শব্দ ব্যবহার মধ্যযুগীয় মানসকিতার বহি:প্রকাশ।”

বিদিশা মৈত্র বলেন, পাকিস্তানকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

-পাকিস্তান কি এটা নিশ্চিত করবে যে তাদের মাটিতে ২৫টি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন এবং ১৩০ জন ‘সন্ত্রাসী’ রয়েছে যারা জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত।

-পাকিস্তান যে বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা আল কায়েদার সাথে সম্পর্কিত লোকজনকে অবসরভাতা দেয় – তা কি তারা অস্বীকার করবে?

– পাকিস্তান কি ব্যাখ্যা দেবে কেন তাদের হাবিব ব্যাংকের অপারেশন নিউইয়র্কে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল? সন্ত্রাসী তৎপরতায় লাখ লাখ ডলার পাচারের জন্যই কি তা করা হয়েছিল?

-প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কি নিউ ইয়র্কে দাঁড়িয়ে অস্বীকার করতে পারবেন যে তিনি ওসামা বিন লাদেনকে খোলাখুলি সমর্থন করে আসছেন?

বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেভাবে হুমকি হতে পারে ভারত

আমার চোখে বিশ্ব: ‘ভূস্বর্গ’ কাশ্মীরে নারীরা আবার হুমকির মুখে?

বিদিশা মৈত্রের বিবৃতিতে স্পষ্ট যে ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে চাইছে যে, পাকিস্তানে এখনও সন্ত্রাসে মদত দিয়ে চলেছে।

শ্রীনগরে ভারত বিরোধী বিক্ষোভ, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

পারমানবিক যুদ্ধের কথা তোলা কেন?

ইমরান খান স্পষ্টতই যেটা চাইছেন তা হলো পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পারমানবিক যুদ্ধের ঝুঁকির কথা তুলে কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক শক্তিধর দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ।

শুধু জাতিসংঘের ভাষণে নয়, আলাদাভাবে সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মহাসচিবকে একটি দীর্ঘ চিঠি দিয়ে পাকিস্তান বলেছে কাশ্মীরে ভারতের আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

কিন্তু তাতে কতটা কাজ হচ্ছে?

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে প্রধান শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে চীন ছাড়া ভারতের ওপর অন্য কোনো দেশ চাপ তৈরি করবে সে সম্ভাবনা এখন খুবই কম।

তিনি বলেন, চীনের উত্তরোত্তর সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির মোকাবিলা করার এখন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পশ্চিমা মিত্রদের প্রধান লক্ষ্য।

“ভারত এখন চীন বিরোধী স্কোয়াডের প্রধান একটি সদস্য । সুতরাং ভারতকে এখন তারা বিরক্ত করবে না।”

ড. আলী বলছেন, সুতরাং ইমরান খান জাতিসংঘে গিয়ে যাই বলুন না কেন, ভারতের এখন তাতে খুব ক্ষতি হবেনা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

তিতুমীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে এক সপ্তাহে কমিটি গঠন

ইমরান খান উস্কানি দিচ্ছেন- ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়া

আপডেট টাইম : ০৯:০৪:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 ্‌ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তার ভাষণে ইমরান খান কাশ্মীর প্রসঙ্গে ভারত এবং নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে চরম ক্ষুব্ধ ভারত।

ইমরান খান বলেন, জাতিসংঘের মনে রাখা উচিৎ ১৯৩৯ সালে ইউরোপ হিটলারের অপরাধকে গুরুত্ব দেয়নি বলেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল।

এ শুধু এ কথাতেই থামেননি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

নরেন্দ্র মোদীর নাম করে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরএসএস নামে যে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের আজীবন সদস্য, সেই সংগঠনের ‘আদর্শ হচ্ছে হিটলার এবং মুসোলিনি’ এবং ঐ আরএসএস-ই মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল।

ইমরানের খানের এ ধরণের মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারত।

উত্তর দেওয়ার অধিকারের সুযোগ নিয়ে মি. খানের ভাষণের পরপরই জাতিসংঘে ভারতের এক কূটনীতিক বিদিশা মৈত্র বলেন, “ইমরান খানের বক্তব্য উস্কানিমূলক এবং পুরোপুরি মিথ্যা।”

পারমানবিক যুদ্ধের হুমকি

প্রায় ৫০ মিনিটের দীর্ঘ ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য ছিল কাশ্মীরের ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ।

তিনি বার বারই বলতে চেয়েছেন, ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করে গত প্রায় দু মাস ধরে ৮০ লাখ কাশ্মীরিকে যেভাবে ‘পশুর মত’ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তা যে কোনো সময় বিপজ্জনক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

ইমরান খান সাবধান করেন, আশঙ্কা রয়েছে কাশ্মীরী তরুণ যুবকরা যে কোনো সময় সহিংস বিক্ষোভ শুরু করতে পারে যার জন্য ভারত হয়তো পাকিস্তানকে দায়ী করবে।

তিনি বলেন, তেমন কিছু হলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা নাকচ করা যায়না যে যুদ্ধ পারমানবিক সংঘর্ষের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

বিদিশা মৈত্র, জাতিসংঘে ভারতের কূটনীতিকইমরান খানের বক্তব্য মিখ্যা এবং উস্কানিমুলক – বিদিশা মৈত্র, জাতিসংঘে ভারতের কূটনীতিক

‘যদি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো যুদ্ধ হয়, তাহলে ছোটো দেশে হিসাবে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার ছাড়া পাকিস্তানের কোনো বিকল্প থাকবে না।”

এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কাশ্মীর নিয়ে চুপ করে রয়েছে কারণ ‘ভারত একটি বড় বাজার’।

ইমরান খান অভিযোগ করেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি ভারতের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোনো ইতিবাচক সাড়া তিনি পাননি, বরঞ্চ মি. মোদী পাকিস্তানকে তার নির্বাচনী প্রচারণার মুখ্য ইস্যু তৈরি করেন।

ভদ্রতা বিবর্জিত ভাষণঃ ভারতের প্রতিক্রিয়া

উত্তর দেওয়ার অধিকারের সুযোগ নিয়ে মি. খানের ভাষণের পরপরই জাতিসংঘে ভারতের এক কূটনীতিক বিদিশা মৈত্র বলেন, ইমরান খান জাতিসংঘের মত আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মের ‘অপব্যবহার’ করেছেন।

“একবিংশ শতাব্দীতে এসে ‘গণহত্যা’ ‘জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব’ ‘আমৃত্যু লড়াই’ এ ধরনের শব্দ ব্যবহার মধ্যযুগীয় মানসকিতার বহি:প্রকাশ।”

বিদিশা মৈত্র বলেন, পাকিস্তানকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

-পাকিস্তান কি এটা নিশ্চিত করবে যে তাদের মাটিতে ২৫টি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন এবং ১৩০ জন ‘সন্ত্রাসী’ রয়েছে যারা জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত।

-পাকিস্তান যে বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা আল কায়েদার সাথে সম্পর্কিত লোকজনকে অবসরভাতা দেয় – তা কি তারা অস্বীকার করবে?

– পাকিস্তান কি ব্যাখ্যা দেবে কেন তাদের হাবিব ব্যাংকের অপারেশন নিউইয়র্কে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল? সন্ত্রাসী তৎপরতায় লাখ লাখ ডলার পাচারের জন্যই কি তা করা হয়েছিল?

-প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কি নিউ ইয়র্কে দাঁড়িয়ে অস্বীকার করতে পারবেন যে তিনি ওসামা বিন লাদেনকে খোলাখুলি সমর্থন করে আসছেন?

বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেভাবে হুমকি হতে পারে ভারত

আমার চোখে বিশ্ব: ‘ভূস্বর্গ’ কাশ্মীরে নারীরা আবার হুমকির মুখে?

বিদিশা মৈত্রের বিবৃতিতে স্পষ্ট যে ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে চাইছে যে, পাকিস্তানে এখনও সন্ত্রাসে মদত দিয়ে চলেছে।

শ্রীনগরে ভারত বিরোধী বিক্ষোভ, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

পারমানবিক যুদ্ধের কথা তোলা কেন?

ইমরান খান স্পষ্টতই যেটা চাইছেন তা হলো পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পারমানবিক যুদ্ধের ঝুঁকির কথা তুলে কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক শক্তিধর দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ।

শুধু জাতিসংঘের ভাষণে নয়, আলাদাভাবে সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মহাসচিবকে একটি দীর্ঘ চিঠি দিয়ে পাকিস্তান বলেছে কাশ্মীরে ভারতের আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

কিন্তু তাতে কতটা কাজ হচ্ছে?

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে প্রধান শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে চীন ছাড়া ভারতের ওপর অন্য কোনো দেশ চাপ তৈরি করবে সে সম্ভাবনা এখন খুবই কম।

তিনি বলেন, চীনের উত্তরোত্তর সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির মোকাবিলা করার এখন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পশ্চিমা মিত্রদের প্রধান লক্ষ্য।

“ভারত এখন চীন বিরোধী স্কোয়াডের প্রধান একটি সদস্য । সুতরাং ভারতকে এখন তারা বিরক্ত করবে না।”

ড. আলী বলছেন, সুতরাং ইমরান খান জাতিসংঘে গিয়ে যাই বলুন না কেন, ভারতের এখন তাতে খুব ক্ষতি হবেনা।