হাওর বার্তাঃ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সংসদ স্থগিতের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। ‘ঐতিহাসিক’ এক রায়ে মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্ট বলেছেন, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই রানীকে সংসদ স্থগিতের পরামর্শ দেয়া ছিল অবৈধ।
রায়ের পর দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষের স্পিকার যত দ্রুত সম্ভব অধিবেশন চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর অফিস বলছে, তারা রায় পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
বিবিসি বলছে, চলতি মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পাঁচ সপ্তাহের জন্য সংসদ অধিবেশন স্থগিত করেন। তিনি বলেছিলেন, তার সরকারের নতুন নীতি সংসদে রানীর ভাষণের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য এই সময় দরকার। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিটের (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়া) সময়সীমার আগে সংসদকে তার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা ছিল ভুল পদক্ষেপ।
সুপ্রিমকোর্টের প্রেসিডেন্ট লেডি হেল রায় ঘোষণা করে বলেন, ‘ব্রিটেনের গণতন্ত্রের মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপের প্রভাব ছিল চরম।’ তিনি বলেন, ‘ব্রিটেনের রানীকে সংসদ স্থগিত রাখার পরামর্শ দেয়া ছিল অবৈধ। কারণ, কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই এর মাধ্যমে সংসদকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের ক্ষমতায় বাধা দেয়া হয়েছে।’
আদালতের যুক্তি, সংসদ স্থগিতের সিদ্ধান্তের আগে সংসদ সদস্যদের মতামত নেয়া হয়নি। লেডি হেল বলেন, ‘বিচারপতিদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল- সংসদ স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত বাতিল এবং এর কোনো কার্যকারিতা নেই। পরবর্তীতে কী হবে সে সিদ্ধান্তের ভার হাউস অব কমন্স এবং হাউস অব লর্ডসের স্পিকারদের।’
আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকাউ বলেছেন, আর কোনো দেরি না করে পার্লামেন্ট বসবে। জরুরি ভিত্তিতে দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সংসদ স্থগিতের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ইংল্যান্ডের হাইকোর্টে এক পিটিশন করেন ব্যবসায়ী জিনা মিলার। হাইকোর্ট সংসদ স্থগিতকে পুরোপুরি রাজনৈতিক বিষয় এবং এ বিষয়ে আদালতের কিছু করার নেই বলে রায়ে জানিয়ে দেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেন মিলার। অন্যদিকে আরেক পিটিশনে স্কটল্যান্ডের কোর্ট অব সেশন সংসদ স্থগিতকে বেআইনি বলে রায় দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে ব্রিটিশ সরকার। দুই আপিলের বিষয়ে তিন দিন শুনানির পর রায় দিলেন সুপ্রিমকোর্ট।
ব্রিটিশ মন্ত্রীরা বলেছেন, সংসদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রায় দেয়া আদালতের বিষয় নয়। সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে জমা দেয়া নথিতে বলা হয়, আদালত যদি সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেন তাহলে তারা আবারও সংসদ স্থগিত করতে পারেন।
এ ক্ষেত্রে আইনগতভাবে ভিন্ন একটি উপায় অবলম্বন করা হবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বর্তমানে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রয়েছেন। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, বিচার বিভাগ ও আইনের প্রতি তার পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে রায়ের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত নন। কিছু কিছু সংসদ সদস্য বরিসের পদত্যাগ চেয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের ১১ বিচারপতির সর্বসম্মত এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। ২০০৯ সালে ব্রিটিশ সংসদের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের এক বিশেষ আইনে সুপ্রিমকোর্ট বিভাগকে আলাদা করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের আদালতের মতো এই আদালত সংসদে পাস হওয়া কোনো আইন বাতিল করতে পারেন না। এই প্রথম সুপ্রিমকোর্ট সংসদীয় কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে রায় দিলেন।