হাওর বার্তাঃ যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। টেক্সাসে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের একটি সমাবেশে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রোববার বক্তব্য দেয়ার পর হিন্দুত্ববাদী মোদির বিরুদ্ধে এ বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।
মোদির সপ্তাহজুড়ে মার্কিন সফরের প্রথম সকালটিতে তিনি এ বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। আগামী শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তার ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে।
‘হাউডি মোদি’ নামের ওই অনুষ্ঠানকে গভীর ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময়ে মঞ্চে নিজেদের ব্যক্তিগত বন্ধুত্বকে নতুন করে তুলে ধরেন মোদি। পরস্পরকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তারা।
কিন্তু হিন্দি ভাষার একটি মৌলিক পরিভাষা নিয়ে ভারতে মোদির বিরুদ্ধে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
মোদি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বের বোধ, আমেরিকার প্রতি অনুরাগ, প্রতিটি নাগরিককে নিয়ে তার উদ্বেগ এবং আমেরিকাকে ফের মহান করাকে ভালোভাবেই তিনি সামলেছেন।
মোদি বলেন, তিনি (ট্রাম্প) মার্কিন অর্থনীতিকে আবারও শক্তিশালী করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বকে তিনি অনেক অর্জন দিয়েছেন। বন্ধুরা, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের ভারতীয়দের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
মুখে হাসি ফুটিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রার্থী ট্রাম্পের ভাষায়- আবকি বার ট্রাম্প সরকার। অর্থাৎ এখন ট্রাম্প সরকারের সময়।
মোদির নির্বাচনী প্রচারে এটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্লোগান ছিল- আবকি বার মোদি সরকার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই স্লোগানই তাকে ক্ষমতায় আসতে সহায়তা করেছিল।
এ ছাড়া ভারতীয় নির্বাচনী ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া একটি স্লোগান ছিল এটি। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রচারে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে এটি শোনা গিয়েছিল।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের মধ্যে এই স্লোগান আলাদা একটি আবেদন তৈরি করেছিল। তখন ট্রাম্প নিজেই মোদির ভাষ্য গ্রহণ করেছিলেন।
রোববারে মোদির অভিব্যক্তিকে তার বিরুদ্ধে অন্য দেশের ভোটের রাজনীতিতে দলীয় অবস্থান নেয়ার অভিযোগ করেছেন ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের এক মুখপাত্র।
নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আনন্দ শর্মা নামের ওই মুখপাত্র বলেন, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের স্লোগানের পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে গেলে মোদি ভালো করতেন। অন্য দেশের নির্বাচনে ভারত কোনো অবস্থান কিংবা পক্ষাবলম্বন করছে, এটি হওয়া উচিত হবে না।
মোদিকে মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, মার্কিন নির্বাচনে ভারতীয় নীতি ছিল দ্বিদলীয়। অর্থাৎ রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ভারত কখনই একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখায়নি।
তিনি আরও দাবি করেন, ট্রাম্পের হয়ে স্লোগান দিয়ে মোদি আসলে দুই দেশেরই সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক মর্যাদাকেই খর্ব করেছেন।
কংগ্রেস মুখপাত্র ব্রিজেশ কালাপ্পা বলেন, এটি তো পরিষ্কার মার্কিন ঘরোয়া রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ। তা ছাড়া আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়রা বরাবরই ডেমোক্র্যাটদের সমর্থক, বারাক ওবামাকে তারা খুবই পছন্দ করতেন।
তিনি বলেন, সেখানে একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট যদি ইন্দো-আমেরিকানদের ভোট জিততেও চান, মোদি কেন তার ফাঁদে পা দেবেন? কই, চীনের নেতারা তো তাদের ডায়স্পোরার কাছে গিয়ে কখনও এ রকমটি করেন না!
প্রবীণ রাজনীতিবিদ ওমপ্রকাশ মিশ্রও মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদি হাউসটনে যা করেছেন; ভারতের ইতিহাসে তা সম্পূর্ণ নজিরবিহীন।
তিনি মনে করেন, কূটনীতিতে এটি খুবই বিরল একটি ঘটনা। আরও যেটি অভূতপূর্ব তা হলো- একে অপরের পিঠ চাপড়ানি চললেও দেয়া-নেয়াটা কিন্তু হচ্ছে সম্পূর্ণ এক পক্ষে।
ওমপ্রকাশ বলেন, মানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিন্তু এমন কিছু এবারে বলেননি যা মোদি সরকারকে নিজের দেশের ভেতরে সাহায্য করবে। অথচ উনি দুম করে ঘোষণা দিলেন- আবকি বার ট্রাম্প সরকার!
তার মতে, মাস কয়েকের ভেতরই যেখানে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাইমারি শুরু হচ্ছে, সেখানে একজন বিদেশি নেতা আমেরিকায় গিয়ে এভাবে প্রচার করার কোনো নজির নেই।
‘আমার ধারণা, এতে ভারতের বিদেশনীতির ওপর মানুষের যে আস্থা ছিল তা কিছুটা হলেও দুর্বল হবে। তা ছাড়া আমেরিকার নাগরিকদের কাছেও ভারত সম্পর্কে একটা ভুল বার্তা বহন করবে’, বলেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।