হাওর বার্তাঃ ইসরায়েলের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর আরও একটি ধাক্কা খেলেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইসরায়েলি-আরবদের জোট সমর্থন দিয়েছে নেতানিয়াহুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গানৎজকে।
বিবিসি জানায়, সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান গানৎজকেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় ইসরায়েলের সংখ্যালঘু মুসলিম দলগুলোর জোট জয়েন্ট লিস্ট।
আরব জোটের নেতারা জানান, নেতানিয়াহুকে আর ক্ষমতায় দেখতে চান না তারা। ফলে রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে আরেকটি বাধার সম্মুখীন হলেন নেতানিয়াহু।
মঙ্গলবারের দ্বিতীয়বারের নির্বাচনে গানৎজের মধ্যপন্থী ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টি, নেতানিয়াহুর ডানপন্থী লিকুদ পার্টির পরেই জয়েন্ট লিস্টের অবস্থান। ভোটের হিসেবে ইহুদি ধর্মীয় দলগুলোকেও তারা পিছে ফেলে দিয়েছে।
ফলে ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম দেশটিতে ক্ষমতা পরিবর্তনে বড় ধরনের ভূমিকায় চলে আসল ইসরায়েলি-আরবদের এই জোট।
ইসরায়েলি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানায়, পরবর্তী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেনি গানৎজকে সমর্থন দেওয়ার জয়েন্ট লিস্টের এই সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন না হলেও ঐতিহাসিকই বলা চলে।
দেশটিতে আরব সংখ্যালঘু মুসলিমদের এই জোট ১৯৯২ সালে সর্বশেষ আইজেক রবিনকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিল। এরপর গত তিন দশকে তারা ক্ষমতার রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ে। বিশেষ করে, অসলো শান্তি চুক্তির ব্যর্থতা, ২০০০ সালের অক্টোবরে ধর্মীয় সহিংসতার শিকার হওয়া এবং ফিলিস্তিনি আত্মঘাতী হামলাসহ নানা ঘটনায় এই জোটের কর্মকাণ্ড অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিল।
জয়েন্ট লিস্টের ১৩টি আসন যোগ হয়ে গানৎজের জোটের আসন এখন ৫৭। অন্যদিকে নেতানিয়াহুর জোটের আসনসংখ্যা ৫৫। এককভাবে লিকুদ পার্টিকে হারিয়ে জোটগতভাবেও এগিয়ে থাকল ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টি।
কিন্তু ক্ষমতায় আসতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য কোনো একটি দলকে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের ১২০টি আসনের মধ্যে অন্তত ৬১টি আসন পেতে হবে।
তবে ইসরায়েলের ইতিহাসে কখনো কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। দেশটিতে সব সময় জোট সরকারই ক্ষমতাসীন হয়েছে।
এদিকে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাভিগডো লিবারম্যানের দল ইসরায়েল বেইতেনু পেয়েছেন ৮টি আসন। দেশটির সরকার গঠনে দীর্ঘদিন ধরেই তুরুপের তাস লিবারম্যান।
এপ্রিল নির্বাচনের পর নেতানিয়াহুর সরকারে থাকতে অস্বীকৃতি জানান ক্ষমতাসীন জোটের এ শরিক। সেই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে নেতানিয়াহু একটি কার্যকরী জোট সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ায় দ্বিতীয়বার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
লিবারম্যানও এককভাবে কাউকে সমর্থন দিতে ইচ্ছুক নন। লিকুদ পার্টি এবং ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টির সমন্বিত সরকারকেই কেবল তিনি সমর্থন দেবেন। কিন্তু নেতানিয়াহু এবং গানৎজ কেউই একত্রে সরকার গঠনে ইচ্ছুক নন। তবে জয়েন্ট লিস্টের সমর্থন পাওয়ায় নেতানিয়াহু থেকেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে এগিয়ে আছেন গানৎজ, এমনটাই মত বিশ্লেষকদের।
সরকারিভাবে ভোটের ফলাফল জানতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। তার আগেই বিভিন্ন সমীক্ষাও বলছে, এবার নেতানিয়াহুর পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।