আবার জ্বলে উঠেছে সেই তাহরির স্কয়ার। এখান থেকেই জ্বলে উঠা ক্ষোভের আগুন উৎখাত করেছিল প্রায় ৩০ বছরের স্বৈরাচার হোসনি মুবারককে। আবার আরেক স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির পদত্যাগ দাবিতে জ্বলে উঠেছে পুরো মিশর। তার ছবিকে দু’পায়ে পিষ্ট করতে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীদের। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির পদত্যাগ দাবিতে হাজার হাজার মিশরীয় রাজপথে নেমে আসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন। তাতে তারা বলছেন- ‘জেগে উঠুন। কোনো ভয় করবেন না। সিসিকে যেতেই হবে’। আবার কেউ কেউ স্লোগান দিচ্ছেন ‘জনগণ সরকারের পতন চায়’।
শুক্রবার বড় বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানী কায়রোতে। বিক্ষোভ হয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেকজান্দ্রিয়া ও সুয়েজে। এসব বিক্ষোভে মুখোমুখি অবস্থানে দেখা যায় বিক্ষোভকারী ও সরকারি বাহিনীকে। আল জাজিরা বলছে, বেসামরিক পোশাকে থাকা নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছে। রাজধানী কায়রোর তাহরির স্কোয়ারমুখী সব সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ২০১১ সালে এখানকার বিক্ষোভেই পতন ঘটে হোসনি মুবারকের।
ওদিকে মিশরের ভিতর থেকে রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আল জাজিরাকে। তা সত্ত্বেও কায়রোতে বেশ কিছু মানুষকে গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছে এই মাধ্যমটি। তারা বলছে, বিক্ষোভকারীদের প্রতি কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। মিশরীয় ব্যবসায়ী ও অভিনেতা মোহামেদ আলী বর্তমানে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন এবং জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাজপথে নেমে আসতে। তিনি মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, যদি বৃহস্পতিবারের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা না দেন আল সিসি, তাহলে মিশরের জনগণ শুক্রবার তাহরির স্কয়ারের বিক্ষোভে নামবে। একই সঙ্গে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে উত্থাপিত অভিযোগকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সিসি।
গত ২রা সেপ্টেম্বর থেকে ভিডিও বার্তা পোস্ট করা শুরু করেন মোহামেদ আলী। তার সর্বশেষ ভিডিও ভিউ হয়েছে লাখ লাখ বার। এর মধ্য দিয়ে নিজদেশে তিনি একটি ‘পাবলিক ফিগারে’ পরিণত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা যখন শুক্রবার প্রতিবাদের জন্য জমায়েত হচ্ছিলেন তখন তিনি একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এতে তিনি জনগণকে তাদের অধিকারের দাবিতে শক্তিশালী অবস্থান নিতে ও দাবি অব্যাহতভাবে চালিয়ে নিতে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ মহান। আমি মিশরে ফিরতে চাই। মিশর ও আমার দেশবাসীকে খুব মিস করছি। আল্লাহ আপনাদের সমস্যা সমাধানে শক্তিশালী করুন।
আল জাজিরার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক ইয়াহিয়া ঘানেম বলেছেন, শুক্রবারের বিক্ষোভ মিশরীয়দের মধ্যে অবশ্যই একটি ভিন্ন গতি এনে দেবে। মিশরে এখন যা ঘটছে তা অনেক দিনের জমে থাকা আন্দোলনের অংশ। এটা হলো স্বৈরশাসকের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করা। শুক্রবারের এই বিক্ষোভ ছিল দেশের ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরল এক জনপ্রতিবাদ। প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি ২০১৩ সালে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকার সময় মিশরে সব রকম বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেন। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে ওই বছরই তার নেতৃত্বে সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় মিশরে।
ওদিকে সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে মন্তব্যের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি আল জাজিরা। অন্যদিকে এ বিষয়টি নিয়ে কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করেনি মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। তবে সরকারপন্থি একটি টিভির উপস্থাপক বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের ছোট্ট একটি গ্রুপ কায়রোর কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সমবেত হয়েছিল ভিডিও ধারণ করতে এবং সেলফি তুলতে। সরকারপন্থি আরেকটি টেলিভিশন চ্যানেল বলেছে, তাহরির স্কয়ার শান্ত রয়েছে।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসেন আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এরপরই সেখানে খরচ কমানোর অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করা হয়। এর উদ্দেশ্য, ২০১১ সালে আবর বসন্তের ফলে অর্থনৈতিক যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়া। কিন্তু দেশটিতে দরিদ্রের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাইয়ে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মিশরে বসবাসকারীদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন বসবাস করেন দারিদ্র্যে। মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ২০১৮ সালে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট সিসি ক্ষমতায় আসার পর তার নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী ভীতিপ্রদর্শন, সহিংসতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও নেতাকর্মীদের খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তার চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে মিশরে মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।