ঢাকা ১০:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঔষধি বৃক্ষ প্রেমিক শওকত মাস্টারের গল্প

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৮:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২০৬ বার

গাইবান্ধার গোবিন্ধগঞ্জের নাকাইহাট এলাকায় ডা. শওকত আলী নামের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিলুপ্ত ও দুর্লভ প্রজাতির প্রায় ১ হাজার ওষধি ও ফলদ গাছের বাগান। বাগান থেকে উৎপাদিত ওষুধ ও ফল বিতরণ করছেন সাধারণ মানুষের মাঝে। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত প্রায় ও দুর্লভ গাছের প্রজাতি ধরে রাখতে এসব গাছের চারা দিচ্ছেন বিনামূল্য। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও গাছ দ্বারা প্রাকৃতিক ওষুধ দিয়ে রোগ নিরাময় বাড়াতে তার এ প্রচেষ্টা বলে জানান তিনি। তার এ ধরনের কার্যক্রমে খুশি জেলা কৃষিবিভাগ ও সাধারণ মানুষ।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের নাকাইহাট ইউনিয়নের শীতলগ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ডা. শওকত আলী। পেশায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। বয়স ৯০ এর কাছাকাছি কিন্তু মানবসেবার কাছে বয়স পরাজিত করতে পারেনি তাকে। মানুষ ও গাছের প্রতি ভালোবাসা তার শৈশব থেকেই। তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীর সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক। তার কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন পরিবারের সবাই। ছেলে সোহাগ গর্ব করে বলেন, আমার বাবার মতো অনেক বাবা জন্ম হওয়া দরকার। তাহলে আমরা ওষুধি গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পারতাম। সারাদিন চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বসতবাড়ির আশপাশে ও পুকুরপাড়ে গড়ে তুলেছেন প্রায় ১ হাজার বিলুপ্ত প্রায় ও দুর্লভ প্রজাতির ওষুধি ও ফলদ গাছ। গ্রামের অন্যান্য এলাকায় এসব বিলুপ্ত প্রায় ও দুর্লভ গাছের চারা বিনামূল্য বিতরণ করে যাচ্ছেন তিনি। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে পরিচিত করে দেন এসব গাছের সঙ্গে জানিয়ে দেন বিভিন্ন গাছের গুণাগুণ। গাছের প্রতি এমন মমতার কারণে এলাকার মানুষ তার নাম দিয়েছে বৃক্ষ প্রেমিক শওকত আলী। তার এ গাছ প্রেমে খুশি এলাকার মানুষ।
এলাকাবাসী রুবেল চৌধুরী বলেন, আমরা তো শুধু ধান ও অন্যান্য ফসল চাষ করে নিজের স্বার্থ বড় করে দেখি। নিজের স্বার্থের জন্য জমিতে নানান ফসলের চাষ করে ভর বছরের খাবার যোগার করি। কিন্তু শওকত মাস্টার তা করেন না। শওকত মাস্টার ব্যতিক্রম। তিনি তার জমিতে শুধু ধান গমের আবাদ করেন না। মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজের অনেক জমিতে লাগিয়েছেন বিরল প্রজাতির ওষুধি গাছ। মানুষ দেখতে আসেন তার গাছের বাগান। মানুষ গাছ দেখতে এলে তিনিও খুশি হন। নিজের গাছ দেখিয়ে বলেন আমরা বেঁচে আছি এই গাছের গুণেই। গাছ দিয়েই কত রকমের ওষুধ  তৈরি হয়। সাহেব উদ্দিন মাস্টার বলেন, আমরা আমাদের স্বার্থটাই বড় করে দেখি। আর শওকত মাস্টার মানুষের কল্যাণে গাছের চারা বিতরণ করেন। পয়সা নেন না। গাছের যত্নের কথা বলে তার গুণাগুণ নিয়ে কথা বলেন। সবাই খুশি শওকত মাস্টারের এ কার্যক্রমে। তারা বলেন, মানুষ বিনামূল্যে গাছ পেয়ে থাকে তার কাছে। গাছের গুণাগুণ সর্ম্পকে তার কাছে জানতে পারে।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ডা. শওকত আলী। গাছ নিয়ে গবেষণায় অন্যন্য অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়াও জেলা ও উপজেলায় একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক ওষুধ দিয়ে রোগ নিরাময় বাড়াতে তার এ প্রচেষ্টা বলে জানান তিনি।
ডা. শওকত আলীর এমন কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে সবাইকে তার মতো গাছ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক। সেই সঙ্গে শওকত আলীর গাছের সংগ্রহশালা বাড়াতে বিরল গাছের চারা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহযোগিতার কথাও জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ঔষধি বৃক্ষ প্রেমিক শওকত মাস্টারের গল্প

আপডেট টাইম : ১১:২৮:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

গাইবান্ধার গোবিন্ধগঞ্জের নাকাইহাট এলাকায় ডা. শওকত আলী নামের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিলুপ্ত ও দুর্লভ প্রজাতির প্রায় ১ হাজার ওষধি ও ফলদ গাছের বাগান। বাগান থেকে উৎপাদিত ওষুধ ও ফল বিতরণ করছেন সাধারণ মানুষের মাঝে। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত প্রায় ও দুর্লভ গাছের প্রজাতি ধরে রাখতে এসব গাছের চারা দিচ্ছেন বিনামূল্য। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও গাছ দ্বারা প্রাকৃতিক ওষুধ দিয়ে রোগ নিরাময় বাড়াতে তার এ প্রচেষ্টা বলে জানান তিনি। তার এ ধরনের কার্যক্রমে খুশি জেলা কৃষিবিভাগ ও সাধারণ মানুষ।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের নাকাইহাট ইউনিয়নের শীতলগ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ডা. শওকত আলী। পেশায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। বয়স ৯০ এর কাছাকাছি কিন্তু মানবসেবার কাছে বয়স পরাজিত করতে পারেনি তাকে। মানুষ ও গাছের প্রতি ভালোবাসা তার শৈশব থেকেই। তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীর সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক। তার কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন পরিবারের সবাই। ছেলে সোহাগ গর্ব করে বলেন, আমার বাবার মতো অনেক বাবা জন্ম হওয়া দরকার। তাহলে আমরা ওষুধি গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পারতাম। সারাদিন চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বসতবাড়ির আশপাশে ও পুকুরপাড়ে গড়ে তুলেছেন প্রায় ১ হাজার বিলুপ্ত প্রায় ও দুর্লভ প্রজাতির ওষুধি ও ফলদ গাছ। গ্রামের অন্যান্য এলাকায় এসব বিলুপ্ত প্রায় ও দুর্লভ গাছের চারা বিনামূল্য বিতরণ করে যাচ্ছেন তিনি। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে পরিচিত করে দেন এসব গাছের সঙ্গে জানিয়ে দেন বিভিন্ন গাছের গুণাগুণ। গাছের প্রতি এমন মমতার কারণে এলাকার মানুষ তার নাম দিয়েছে বৃক্ষ প্রেমিক শওকত আলী। তার এ গাছ প্রেমে খুশি এলাকার মানুষ।
এলাকাবাসী রুবেল চৌধুরী বলেন, আমরা তো শুধু ধান ও অন্যান্য ফসল চাষ করে নিজের স্বার্থ বড় করে দেখি। নিজের স্বার্থের জন্য জমিতে নানান ফসলের চাষ করে ভর বছরের খাবার যোগার করি। কিন্তু শওকত মাস্টার তা করেন না। শওকত মাস্টার ব্যতিক্রম। তিনি তার জমিতে শুধু ধান গমের আবাদ করেন না। মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজের অনেক জমিতে লাগিয়েছেন বিরল প্রজাতির ওষুধি গাছ। মানুষ দেখতে আসেন তার গাছের বাগান। মানুষ গাছ দেখতে এলে তিনিও খুশি হন। নিজের গাছ দেখিয়ে বলেন আমরা বেঁচে আছি এই গাছের গুণেই। গাছ দিয়েই কত রকমের ওষুধ  তৈরি হয়। সাহেব উদ্দিন মাস্টার বলেন, আমরা আমাদের স্বার্থটাই বড় করে দেখি। আর শওকত মাস্টার মানুষের কল্যাণে গাছের চারা বিতরণ করেন। পয়সা নেন না। গাছের যত্নের কথা বলে তার গুণাগুণ নিয়ে কথা বলেন। সবাই খুশি শওকত মাস্টারের এ কার্যক্রমে। তারা বলেন, মানুষ বিনামূল্যে গাছ পেয়ে থাকে তার কাছে। গাছের গুণাগুণ সর্ম্পকে তার কাছে জানতে পারে।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ডা. শওকত আলী। গাছ নিয়ে গবেষণায় অন্যন্য অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়াও জেলা ও উপজেলায় একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক ওষুধ দিয়ে রোগ নিরাময় বাড়াতে তার এ প্রচেষ্টা বলে জানান তিনি।
ডা. শওকত আলীর এমন কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে সবাইকে তার মতো গাছ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক। সেই সঙ্গে শওকত আলীর গাছের সংগ্রহশালা বাড়াতে বিরল গাছের চারা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহযোগিতার কথাও জানান তিনি।