ঢাকা ১০:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এরশাদকেও রাষ্ট্রপতি বলা যায় না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৩:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২৬৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে মার্শাল ল জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। তেমনিভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল এরশাদও। হাইকোর্টের রায়ে তাদের সেই ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তাদের আর রাষ্ট্রপতি বলা যায় না।‘

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে রোববার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

এরশাদকে ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক’ উল্লেখ করে জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় এবং তা জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশন শুরু হয়। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি।

শোক প্রস্তাবে বলা হয়, এ সংসদ প্রস্তাব করছে যে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে দেশ একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবককে হারাল। এ সংসদ তার মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ, আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।

শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের মৃত্যুতে শোক জানান। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও ন্যাপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম, সাবেক এমএলএ অধ্যক্ষ খালেদা হাবিব, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারা বেগম, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি সাত্তার। তাকে প্রার্থী করার কথা এরশাদ নিজেই বিদেশি পত্রিকায় বলেছিলেন। আমরা ওই সময় প্রতিবাদ করেছি। এরশাদ ৮২ সালে যে ক্ষমতা দখল করেছিলেন সেটির সুযোগ দেন কিন্তু খালেদা জিয়া। তিনি শুধু দুটি বাড়িই নয়, ১০ লাখ টাকাও পেয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার কোনো ডায়েরিই হয়নি, তদন্তই হয়নি এখন পর্যন্ত। জিয়া হত্যার জন্য এরশাদকে দায়ী পর্যন্ত করেননি খালেদা জিয়া। আমরাই প্রতিবাদ করি। কারণ এক স্বৈরাচারের পরে আরেক স্বৈরাচার আমরা চাইনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মার্শাল ল জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে জিয়া, তেমনিভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছেন এরশাদও। হাইকোর্টের রায়ে তাদের সেই ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তাকে আর রাষ্ট্রপতি বলা যায় না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরশাদ কিছু ভালো কাজ করেছেন এটা সত্য। তবে তার সময়ে বার বার আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি লালদীঘির ময়দানে সভা করতে গিয়ে বাধা দেয়া হয়। ওই সভায় গুলিতে নিহত হন দু’জন। ওইবছর নির্বাচনের নামে প্রহসন করে তিনি আরও বেশি বিতর্কিত হন। তার বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি হয়। এসব কারণে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলি এবং তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।’

এর আগে রওশন এরশাদ বলেন, ‘তিনি অনেক জনদরদি নেতা ছিলেন। উনি দেশ ও জনগণের জন্য অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যে কাজ অসমাপ্ত রেখে গেছিলেন, তার অকাল ও মর্মান্তিক মৃত্যুতে তিনি যা শেষ করে যেতে পারেননি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন। তিনি অনেক জনপ্রিয় ছিল তা তার মৃত্যুর পরও বোঝা গেছে। তার চার চারটি জানাজা করতে হয়েছে।’ এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এরশাদপত্নী।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু মাত্র ১৭ সেকেন্ডের বক্তব্যে বলেন, ‘আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। দোষে-গুণে মানুষ, সেগুলো আজ আলোচনা না করাই ভালো।’ এ কথা বলে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে মেজর থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল করে সেনাপ্রধান করেন। তবে যখন উনি প্রেসিডেন্ট হন, তার সঙ্গে আমাদের মতানৈক্য তৈরি হয়। তবে উনি বিনয়ী ছিলেন। তিনি অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গণতন্ত্র রক্ষা ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেছেন। তিনি একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তিনি পল্লী উন্নয়নসহ দেশের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তিনি প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করেন, উপজেলা পদ্ধতির প্রবর্তন করেন।’

শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর তার কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। শোক প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের এমপি শাজাহান খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রমুখ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

এরশাদকেও রাষ্ট্রপতি বলা যায় না

আপডেট টাইম : ১২:৩৩:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে মার্শাল ল জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। তেমনিভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল এরশাদও। হাইকোর্টের রায়ে তাদের সেই ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তাদের আর রাষ্ট্রপতি বলা যায় না।‘

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে রোববার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

এরশাদকে ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক’ উল্লেখ করে জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় এবং তা জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশন শুরু হয়। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি।

শোক প্রস্তাবে বলা হয়, এ সংসদ প্রস্তাব করছে যে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে দেশ একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবককে হারাল। এ সংসদ তার মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ, আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।

শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের মৃত্যুতে শোক জানান। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও ন্যাপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম, সাবেক এমএলএ অধ্যক্ষ খালেদা হাবিব, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারা বেগম, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি সাত্তার। তাকে প্রার্থী করার কথা এরশাদ নিজেই বিদেশি পত্রিকায় বলেছিলেন। আমরা ওই সময় প্রতিবাদ করেছি। এরশাদ ৮২ সালে যে ক্ষমতা দখল করেছিলেন সেটির সুযোগ দেন কিন্তু খালেদা জিয়া। তিনি শুধু দুটি বাড়িই নয়, ১০ লাখ টাকাও পেয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার কোনো ডায়েরিই হয়নি, তদন্তই হয়নি এখন পর্যন্ত। জিয়া হত্যার জন্য এরশাদকে দায়ী পর্যন্ত করেননি খালেদা জিয়া। আমরাই প্রতিবাদ করি। কারণ এক স্বৈরাচারের পরে আরেক স্বৈরাচার আমরা চাইনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে মার্শাল ল জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে জিয়া, তেমনিভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছেন এরশাদও। হাইকোর্টের রায়ে তাদের সেই ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তাকে আর রাষ্ট্রপতি বলা যায় না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরশাদ কিছু ভালো কাজ করেছেন এটা সত্য। তবে তার সময়ে বার বার আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি লালদীঘির ময়দানে সভা করতে গিয়ে বাধা দেয়া হয়। ওই সভায় গুলিতে নিহত হন দু’জন। ওইবছর নির্বাচনের নামে প্রহসন করে তিনি আরও বেশি বিতর্কিত হন। তার বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি হয়। এসব কারণে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলি এবং তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।’

এর আগে রওশন এরশাদ বলেন, ‘তিনি অনেক জনদরদি নেতা ছিলেন। উনি দেশ ও জনগণের জন্য অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যে কাজ অসমাপ্ত রেখে গেছিলেন, তার অকাল ও মর্মান্তিক মৃত্যুতে তিনি যা শেষ করে যেতে পারেননি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন। তিনি অনেক জনপ্রিয় ছিল তা তার মৃত্যুর পরও বোঝা গেছে। তার চার চারটি জানাজা করতে হয়েছে।’ এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এরশাদপত্নী।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু মাত্র ১৭ সেকেন্ডের বক্তব্যে বলেন, ‘আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। দোষে-গুণে মানুষ, সেগুলো আজ আলোচনা না করাই ভালো।’ এ কথা বলে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে মেজর থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল করে সেনাপ্রধান করেন। তবে যখন উনি প্রেসিডেন্ট হন, তার সঙ্গে আমাদের মতানৈক্য তৈরি হয়। তবে উনি বিনয়ী ছিলেন। তিনি অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গণতন্ত্র রক্ষা ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেছেন। তিনি একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তিনি পল্লী উন্নয়নসহ দেশের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তিনি প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করেন, উপজেলা পদ্ধতির প্রবর্তন করেন।’

শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর তার কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। শোক প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের এমপি শাজাহান খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রমুখ।