হাওর বার্তা ডেস্কঃ সারা বিশ্বেই চলছে পানির সঙ্কট। প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ২০ ভাগ বিশুদ্ধ পানি কমে যাচ্ছে। বছর জুড়ে বিশ্বের অন্তত ৫০ কোটি মানুষ প্রচণ্ড পানি সঙ্কটে ভোগে বলে জানান বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটির ওপরে মানুষ পানি সঙ্কটে রয়েছে।
মানবসৃষ্ট বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণেই শুধু বিশ্বে এই পানি সঙ্কট তৈরি হয়নি। বরং তার অনেক আগে থেকেই এই সঙ্কট শুরু হয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। তারা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সামনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ বিপদ।
সম্প্রতি বিশ্বের পানি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফ্রান্সের বার্তা সংস্থা এএফপি, যেখান উঠে এসেছে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের চিত্র। গবষেণায় বলা হয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে ৩০ ভাগ পানি সঙ্কট দেখা দেবে। তার ওপর এ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে পানির চাহিদা বাড়বে ৫৫ ভাগ। তাই একটি সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুসারে, নদী ভাঙ্গনের ফলে দেশের সীমান্ত এলাকার প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর ভ‚মি হারিয়ে গেছে। দেশের অভ্যন্তরে প্রতি বছর ভাঙ্গনের কবলে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের সীমান্তবর্তী নদীগুলোর ভাঙ্গনের ফলে বাংলাদেশের ভ‚খণ্ড থেকে ১৩ হাজার ৪৯২ হেক্টর ভ‚মি হারিয়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ১৩টি নদী। আরো সাতটি নদী এখন মৃতপ্রায় যে কোনো দিন এগুলোয় আর পানি থাকবে না। শুকিয়ে তা হয়ে যাবে পায়ে চলা পথ। বড় নদীগুলোর থেকে ছোট নদীগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া, প্রতিক‚ল পরিবেশ, ভারত থেকে পানির প্রবাহ কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো প্রচণ্ড হুমকির মুখোমুখি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এ প্রসেঙ্গ বাংলাদেশের নদী রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি সুমন শামস বলেন, বাংলাদেশে ছোট-বড় নদী রয়েছে ২৩০টি। এর মধ্যে ৫৭টি নদী আন্তর্জাতিক। এই নদীগুলোর মধ্যে ৫৪টির উৎসস্থল ভারত এবং বাকি ৩টি মিয়ানমার। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে নদীর পানির হিস্যা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার কারণে এখন এই দেশের বিভিন্ন নদীতে সঠিক প্রবাহে পানি আসছে না। বড় বড় নদী থেকে সৃষ্ট ছোট নদীগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পনাহীনভাবে রাস্তাঘাট নির্মাণের ফলে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ওয়াটার পলিসির নির্বাহী পরিচালক কামরুল আহসান জানান, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলে বরফ ও হিমবাহনির্ভর পানির এ দুই উৎস চাহিদা অনুযায়ী পানির জোগান দিতে পারছে না এবং এ কারণে ভ‚গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে।
পানি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন তানভীর হাসান। তিনি বলেন, কেবল জলবায়ু পরিবর্তন হিমালয় অঞ্চলের পানি সঙ্কটের কারণ নয়, অনিয়ন্ত্রিত এবং অপরিকল্পিত নগরায়নও এর জন্য দায়ী। এর কারণে পার্বত্য অঞ্চলে পানির সঙ্কটের পাশাপাশি দূষণ ও মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।’ তিনি সঙ্কট সমাধানে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কৌশল প্রণয়নেও তাগিদ দিয়েছেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘তা না হলে পুরো অঞ্চলটি এবং এখানে বসবাস করা কোটি কোটি মানুষ চরম সঙ্কটে পড়বে।’
তিনি আরো বলেন, ভঙ্গুর ভূপ্রকৃতির কারণে পার্বত্য অঞ্চলে এলোমেলোভাবে গড়ে ওঠায় নগর কেন্দ্রগুলো পানির সঙ্কট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।’
হিমালয় পর্বত অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পার্বত্য নগর কেন্দ্রগুলো তাদের পৌর এলাকায় অবস্থিত পানির উৎসগুলো থেকে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে’ পর্বতে অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ভূগর্ভে থাকা পানির ওপর নির্ভরতা ক্রমাগত বাড়ছে। এরই মধ্যে সেখানে দূরবর্তী উৎসগুলো থেকে পানি সংগ্রহের বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ নিকটবর্তী পানির উৎসগুলো বাড়তে থাকা চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পানি সরবরাহ করতে পারছে না।