ঢাকা ০৬:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম টেস্টে চালকের আসনে আফগানিস্তান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:১৪:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২৪৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আসগর আফগানের পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাচ্ছে আফগানিস্তান। তবুও স্বস্তি নেই বাংলাদেশ শিবিরে। আফগানরা রান পাচ্ছেনই। যিনি আসছেন, তিনিই তোপ দাগাচ্ছেন। ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলছেন একের পর এক ব্যাটার। স্বাভাবিকভাবেই খড়কুটোর মতো উড়ে যাচ্ছেন টাইগার বোলাররা।

আলোক স্বল্পতার কারণে দুই বল আগে শেষ হয়েছে তৃতীয় দিনের খেলা। দিন শেষে ৮ উইকেটে ২৩৭ রান সংগ্রহ করেছে আফগানিস্তান। ইতিমধ্যে ৩৭৪ রানের লিড পেয়েছে তারা। নিঃসন্দেহে চালকের আসনে সফরকারীরা। লিড বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগও থাকছে তাদের। আফসার জাজাই ৩৪ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে রয়েছেন ইয়ামিন আহমেদজাই। তারা শুরু করবেন চতুর্থ দিনের খেলা। নতুন দিনে যে রান তুলতে পারবেন সেটাই হবে টাইগারদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা।

চট্টগ্রাম টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে স্বপ্নের মতো ব্যাটিং করে আফগানিস্তান। তোলে দলীয় সর্বোচ্চ ৩৪২ রান। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা শুভ হয়নি সফরকারীদের। সূচনালগ্নেই ২ উইকেট খোয়ায় তারা। ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে ফেরেন ইহসানউল্লাহ জানাত। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাকে ফেরান সাকিব আল হাসান। এতেই থেমে থাকেননি তিনি। পরের বলেই তুলে নেন প্রথম ইনিংসে ইতিহাস গড়া সেঞ্চুরিয়ান রহমত শাহকে। তবে সম্ভাবনা জাগিয়েও হ্যাটট্রিক করতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক।

ওয়ানডাউনে নামা হাশমতউল্লাহ শাহীদিকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন ইব্রাহিম জাদরান। ভালোই খেলছিলেন তারা। তবে তাতে বাদ সাধেন নাঈম হাসান। দলীয় ২৮ রানে হাশমতউল্লাহকে বিদায় করেন তিনি। তবে তাতে দমে যাননি আফগানরা। এরপর আসগর আফগানকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন ইব্রাহিম । ৩ উইকেটে ৫৬ রান নিয়ে লাঞ্চে যান তারা।

মধ্যাহ্নভোজ থেকে ফিরে রীতিমতো রূদ্রমূর্তি ধারণ করেন ইব্রাহিম-আসগর। ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে যায় তাদের জুটি। ফলে স্বাগতিক শিবিরে চোখ রাঙাতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে শাসাতে থাকেন বাংলাদেশ বোলারদের। ছোটান স্ট্রোকের ফুলঝুরি। ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে একের পর এক বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারিতে তাদের কচুকাটা করেন দুজনে। পথিমধ্যে অভিষেক টেস্টে ফিফটি তুলে নেন ইব্রাহিম। ফলে দ্রুত ঘোরে আফগানদের রানের চাকা, বাড়তে থাকে লিড, চাপে পড়েন স্বাগতিকরা।

কোনো কিছুতেই বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছিল ইব্রাহিম-আসগরকে। অবশেষে ভয়ংকর এ জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। সাকিব আল হাসানের তালুবন্দি করে আসগরকে ফেরান তিনি। তাতে ভাঙে চতুর্থ উইকেটে তীব্র প্রতিরোধ গড়া ১০৮ রানের জুটি। ফেরার আগে ৪ চার ও ২ ছক্কায় কাঁটায় ৫০ রান করেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি।

আসগর ফিরলেও স্বস্তি ফেরেনি বাংলাদেশ শিবিরে। পরে আফসার জাজাইকে নিয়ে শক্ত জুটি গড়ে তোলেন ইব্রাহিম। তাতে খেলা থেকে আরো ব্যাকফুটে চলে যান টাইগাররা। ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির পথে এগোতে থাকেন ইব্রাহিম। তার তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করা মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। তবে হঠাৎই বিপথগামী হন তিনি। নাঈম হাসানের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে মুমিনুল হককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অভিষিক্ত ওপেনার। ফেরার আগে খেলেন ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস। এতে দ্বিতীয় আফগান হিসেবে ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফরম্যাটে সেঞ্চুরি করার স্বপ্নভঙ্গ হয়। পরক্ষণেই সাজঘরে ফেরেন মোহাম্মদ নবী।

সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমেই ঝড় তোলেন রশিদ খান। নাঈমের এক ওভারে ৫ চার মেরে অভিনব কিছুর আভাস দেন তিনি। তবে তার টর্নেডো বেশিক্ষণ চলেনি। মুহূর্তেই তাকে সোজা বোল্ড করে দেন তাইজুল। ফেরার আগে ২২ বলে ৬ চারে ২৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন আফগান অধিনায়ক।

রশিদের পর ক্রিজে আসেন কায়েস আহমেদ। অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। সাকিবের এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন এ লোয়ারঅর্ডার।

শনিবার বন্দরনগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৮ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে তৃতীয় দিন খেলতে নামে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক হোসেন ৪৪ এবং তাইজুল ইসলাম ১৪ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করেন। তবে শুরুতেই ধাক্কা খান স্বাগতিকরা। ব্যক্তিগত স্কোরে কোনো রান যোগ করার আগেই ফেরেন তাইজুল। তাকে পরিষ্কার বোল্ড করেন মোহাম্মদ নবী।

সেই জের না কাটতেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন নাঈম হাসান। তাকে তুলে নেন রশিদ খান। এ নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট শিকার করেন আফগান অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত ২০৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক। আফগানদের হয়ে ৫ উইকেট নেন রশিদ। ৩ উইকেট দখলে নেন নবী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

চট্টগ্রাম টেস্টে চালকের আসনে আফগানিস্তান

আপডেট টাইম : ০৫:১৪:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আসগর আফগানের পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাচ্ছে আফগানিস্তান। তবুও স্বস্তি নেই বাংলাদেশ শিবিরে। আফগানরা রান পাচ্ছেনই। যিনি আসছেন, তিনিই তোপ দাগাচ্ছেন। ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলছেন একের পর এক ব্যাটার। স্বাভাবিকভাবেই খড়কুটোর মতো উড়ে যাচ্ছেন টাইগার বোলাররা।

আলোক স্বল্পতার কারণে দুই বল আগে শেষ হয়েছে তৃতীয় দিনের খেলা। দিন শেষে ৮ উইকেটে ২৩৭ রান সংগ্রহ করেছে আফগানিস্তান। ইতিমধ্যে ৩৭৪ রানের লিড পেয়েছে তারা। নিঃসন্দেহে চালকের আসনে সফরকারীরা। লিড বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগও থাকছে তাদের। আফসার জাজাই ৩৪ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে রয়েছেন ইয়ামিন আহমেদজাই। তারা শুরু করবেন চতুর্থ দিনের খেলা। নতুন দিনে যে রান তুলতে পারবেন সেটাই হবে টাইগারদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা।

চট্টগ্রাম টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে স্বপ্নের মতো ব্যাটিং করে আফগানিস্তান। তোলে দলীয় সর্বোচ্চ ৩৪২ রান। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা শুভ হয়নি সফরকারীদের। সূচনালগ্নেই ২ উইকেট খোয়ায় তারা। ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে ফেরেন ইহসানউল্লাহ জানাত। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাকে ফেরান সাকিব আল হাসান। এতেই থেমে থাকেননি তিনি। পরের বলেই তুলে নেন প্রথম ইনিংসে ইতিহাস গড়া সেঞ্চুরিয়ান রহমত শাহকে। তবে সম্ভাবনা জাগিয়েও হ্যাটট্রিক করতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক।

ওয়ানডাউনে নামা হাশমতউল্লাহ শাহীদিকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন ইব্রাহিম জাদরান। ভালোই খেলছিলেন তারা। তবে তাতে বাদ সাধেন নাঈম হাসান। দলীয় ২৮ রানে হাশমতউল্লাহকে বিদায় করেন তিনি। তবে তাতে দমে যাননি আফগানরা। এরপর আসগর আফগানকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন ইব্রাহিম । ৩ উইকেটে ৫৬ রান নিয়ে লাঞ্চে যান তারা।

মধ্যাহ্নভোজ থেকে ফিরে রীতিমতো রূদ্রমূর্তি ধারণ করেন ইব্রাহিম-আসগর। ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে যায় তাদের জুটি। ফলে স্বাগতিক শিবিরে চোখ রাঙাতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে শাসাতে থাকেন বাংলাদেশ বোলারদের। ছোটান স্ট্রোকের ফুলঝুরি। ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে একের পর এক বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারিতে তাদের কচুকাটা করেন দুজনে। পথিমধ্যে অভিষেক টেস্টে ফিফটি তুলে নেন ইব্রাহিম। ফলে দ্রুত ঘোরে আফগানদের রানের চাকা, বাড়তে থাকে লিড, চাপে পড়েন স্বাগতিকরা।

কোনো কিছুতেই বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছিল ইব্রাহিম-আসগরকে। অবশেষে ভয়ংকর এ জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। সাকিব আল হাসানের তালুবন্দি করে আসগরকে ফেরান তিনি। তাতে ভাঙে চতুর্থ উইকেটে তীব্র প্রতিরোধ গড়া ১০৮ রানের জুটি। ফেরার আগে ৪ চার ও ২ ছক্কায় কাঁটায় ৫০ রান করেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি।

আসগর ফিরলেও স্বস্তি ফেরেনি বাংলাদেশ শিবিরে। পরে আফসার জাজাইকে নিয়ে শক্ত জুটি গড়ে তোলেন ইব্রাহিম। তাতে খেলা থেকে আরো ব্যাকফুটে চলে যান টাইগাররা। ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির পথে এগোতে থাকেন ইব্রাহিম। তার তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করা মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। তবে হঠাৎই বিপথগামী হন তিনি। নাঈম হাসানের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে মুমিনুল হককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অভিষিক্ত ওপেনার। ফেরার আগে খেলেন ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস। এতে দ্বিতীয় আফগান হিসেবে ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফরম্যাটে সেঞ্চুরি করার স্বপ্নভঙ্গ হয়। পরক্ষণেই সাজঘরে ফেরেন মোহাম্মদ নবী।

সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমেই ঝড় তোলেন রশিদ খান। নাঈমের এক ওভারে ৫ চার মেরে অভিনব কিছুর আভাস দেন তিনি। তবে তার টর্নেডো বেশিক্ষণ চলেনি। মুহূর্তেই তাকে সোজা বোল্ড করে দেন তাইজুল। ফেরার আগে ২২ বলে ৬ চারে ২৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন আফগান অধিনায়ক।

রশিদের পর ক্রিজে আসেন কায়েস আহমেদ। অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। সাকিবের এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন এ লোয়ারঅর্ডার।

শনিবার বন্দরনগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৮ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে তৃতীয় দিন খেলতে নামে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক হোসেন ৪৪ এবং তাইজুল ইসলাম ১৪ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করেন। তবে শুরুতেই ধাক্কা খান স্বাগতিকরা। ব্যক্তিগত স্কোরে কোনো রান যোগ করার আগেই ফেরেন তাইজুল। তাকে পরিষ্কার বোল্ড করেন মোহাম্মদ নবী।

সেই জের না কাটতেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন নাঈম হাসান। তাকে তুলে নেন রশিদ খান। এ নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট শিকার করেন আফগান অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত ২০৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক। আফগানদের হয়ে ৫ উইকেট নেন রশিদ। ৩ উইকেট দখলে নেন নবী।