ঢাকা ০৯:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লোক-দেখানো দান সদকা নয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০১৯
  • ২৭৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইসলামি পরিভাষায় দান করাকেই সদকা বলা হয়। সদকা শব্দটি এসেছে আরবি ‘সিদকুন’ থেকে। অর্থ সত্যতা, যথার্থতা। পরিভাষায় সদকা বলা হয় একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে স্বীয় সম্পদ ব্যয় করাকে। কারণ মানুষের সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু এবং জীবনযাপনের প্রধান উপকরণ কষ্টার্জিত মাল ব্যয় করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁর নির্দেশাবলির প্রতি আনুগত্যের বাস্তব প্রমাণ দিয়ে থাকেন
বলে এ ব্যয়কে সদকা নামে অভিহিত করা হয়েছে।

দান-সদকা বা সাহায্য-সহযোগিতা করা প্রকৃত মোমিনের লক্ষণ। গোপনে-প্রকাশ্যে যে কোনোভাবে দান করা যায়। সব দানেই সওয়াব রয়েছে। দানের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর মানুষের মাঝে রিজিকের ভারসাম্যতা রক্ষা করেন। বিনিময়ে প্রতিদানও দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা কর; তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির-মিসকিনকে দান করে দাও; তবে আরও বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন।’ (সূরা বাকারা : ২৭১)।

সদকা কাকে বলে : ইসলামি পরিভাষায় দান করাকেই সদকা বলা হয়। সদকা শব্দটি এসেছে আরবি ‘সিদকুন’ থেকে। অর্থ সত্যতা, যথার্থতা। পরিভাষায় সদকা বলা হয় একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে স্বীয় সম্পদ ব্যয় করাকে।

কারণ মানুষের সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু এবং জীবনযাপনের প্রধান উপকরণ কষ্টার্জিত মাল ব্যয় করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁর নির্দেশাবলির প্রতি আনুগত্যের বাস্তব প্রমাণ দিয়ে থাকেন বলে এ ব্যয়কে সদকা নামে অভিহিত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অত্যাবশ্যক এবং ঐচ্ছিক এ উভয় প্রকার দানকেই সদকা বলা হয়েছে। তবে প্রচলিত অর্থে শুধু ঐচ্ছিক নফল দানকেই সদকা বলা হয়ে থাকে। সদকার প্রকার : সদকা দুই প্রকার। ১. সাধারণ সদকা। ২. সদকায়ে জারিয়া। গরিব-দুঃখীকে টাকা-পয়সা দান করা, ভালো ব্যবহার করা সাধারণ সদকার অন্তর্ভুক্ত।

আর সদকায়ে জারিয়া বলা হয় ওইসব সৎকর্মকে, যেগুলোর কল্যাণকামিতা স্থায়ী হয়। এর মধ্যে সর্বাগ্রে হচ্ছে দ্বীনি ইলেম শিক্ষা দান, দ্বীনি বইপুস্তক রচনা ও প্রকাশ করে সর্বসাধারণের মধ্যে ইলেম পৌঁছানো। কারণ দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে মানবসন্তানের জন্য সর্বাধিক কল্যাণকর বিষয় হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে, তাঁর বিধিবিধানের সঙ্গে এবং রাসুলের সঙ্গে পরিচিতি লাভ। এক ব্যক্তি অন্যকে যদি দ্বীনি ইলেম শিক্ষা দেন; তবে সে ব্যক্তি নিজে আমল করবে এবং প্রত্যক্ষভাবেই হোক বা পরোক্ষভাবেই হোক পরবর্তী কাউকে না কাউকে শিক্ষা দেবে। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত এ সৎ কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) ওই ব্যক্তিকে সর্বাপেক্ষা বড় দাতারূপে আখ্যায়িত করেছেন, যিনি পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর ইলেম অন্যদের শিক্ষা দেন। তার পরের স্থান মসজিদ, এতিমখানা, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট, সেতু-পুকুর প্রভৃতি গণকল্যাণমূলক খাতে দান করা। এসবের দ্বারা অনেক বেশি লোক উপকৃত হন এবং উপকারটুকু দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ব্যতীত সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান অথবা সৎকর্মশীল সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম : ১৬৩১)। ইমাম নববি (রহ.) এ হাদিসের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘সদকায়ে জারিয়া হলো ওয়াক্ফ।’ (শরহে মুসলিম : ১১/৮৫)।

পবিত্র কোরআনে দান-সদকার কথা : অসংখ্য আয়াতে দান-সদকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তারা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় করবে? জানিয়ে দিন, যা তোমাদের প্রয়োজনাতিরিক্ত।’ (সূরা বাকারা : ২১৯)।

আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দানখয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মতো, যে নিজের ধনসম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মতো, যার ওপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর ওপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ওই বস্তুর কোনো সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।’ (সূরা বাকারা : ২৬৪)।

অপর আয়াতে বলেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধনসম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্য তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মতো, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত না-ও হয়; তবে হালকা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন।’ (সূরা বাকারা : ২৬৫)। অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এবং তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে, ভিক্ষুক এবং বঞ্চিতদের জন্য।’ (সূরা মাআরিজ : ২৪-২৫)।

অভাবী অথচ লজ্জায় কারও কাছে হাত পাতে না তারা সবাই বঞ্চিতদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ আরও এরাশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মতো, যা থেকে সাতটি শিষ জন্মায়। আর প্রতিটি শিষে ১০০ করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারা : ২৬১)।

হাদিসে দান-সদকার কথা : অসংখ্য হাদিসেও দান-সদকার ফজিলত তুলে ধরা হয়েছে। গোপনে দান করার ব্যাপারে হাদিসে অধিক ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। গোপনে দানকারী কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে। নবী (সা.) বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে সাত শ্রেণির মানুষ আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে। তাদের মধ্যে একশ্রেণি হচ্ছে এমন যে তাদের ‘এক ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কী দান করে বাম হাত জানতেই পারে না।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

দান-সদকা গোনাহ মাফ করে ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়। নবী (সা.) বলেন, ‘হে কাব বিন উজরা! নামাজ (আল্লাহর) নৈকট্য দানকারী, রোজা ঢালস্বরূপ এবং দান-সদকা গোনাহ মিটিয়ে ফেলে, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।’ (আবু ইয়ালা, সনদ সহিহ)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

বর্তমান যুগে অনেক মানুষ এমন আছে, যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দান করে এবং তা মানুষকে দেখানোর জন্য। মানুষের ভালোবাসা নেওয়ার জন্য। মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য। মানুষের মাঝে গর্ব-অহংকার প্রকাশ করার জন্য। অনেকে দুনিয়াবি স্বার্থ সিদ্ধির জন্যও দান করে থাকে। যেমন চেয়ারম্যান বা এমপি নির্বাচনে জেতার উদ্দেশ্যে দান করে।

কিন্তু দান যদি একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয়, তা দ্বারা হয়তো দুনিয়াবি কিছু স্বার্থ হাসিল হতে পারে; কিন্তু আখেরাতে এর কোনো প্রতিদান পাওয়া যাবে না। হাদিসে কুদসিতে নবী (সা.) বলেন, ‘আমি শিরককারীদের শিরক থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি কোনো আমল করে তাতে আমার সঙ্গে অন্যকে শরিক করবে, তাকে এবং তার শিরকির আমলকে আমি পরিত্যাগ করব।’ (মুসলিম)।

লোক দেখানো দান-সদকার শাস্তি: যারা মানুষের প্রশংসা নেওয়ার উদ্দেশ্যে দান করবে, তাদের দ্বারাই জাহান্নামের আগুনকে সর্বপ্রথম প্রজ্বলিত করা হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সর্বপ্রথম তিন ব্যক্তিকে দিয়ে জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্বলিত করা হবে। তাদের মধ্যে (সর্ব প্রথম বিচার করা হবে) সেই ব্যক্তির, আল্লাহ যাকে প্রশস্ততা দান করেছিলেন, দান করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের অর্থসম্পদ। তাকে সম্মুখে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর (আল্লাহ) তাকে প্রদত্ত নেয়ামত পরিচয় করাবেন। সে তা চিনতে পারবে।

তখন তিনি প্রশ্ন করবেন, কী কাজ করেছ এ নেয়ামত দ্বারা? সে জবাব দেবে, যে পথে অর্থ ব্যয় করলে আপনি খুশি হবেন, এ ধরনের সব পথে আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অর্থসম্পদ ব্যয় করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এরূপ করেছ এ উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে বলা হবে দানবীর। আর তা তো বলাই হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হবে। তখন তাকে মুখের ওপর উপুড় করে টেনেহিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম)।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

লোক-দেখানো দান সদকা নয়

আপডেট টাইম : ১০:৫৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইসলামি পরিভাষায় দান করাকেই সদকা বলা হয়। সদকা শব্দটি এসেছে আরবি ‘সিদকুন’ থেকে। অর্থ সত্যতা, যথার্থতা। পরিভাষায় সদকা বলা হয় একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে স্বীয় সম্পদ ব্যয় করাকে। কারণ মানুষের সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু এবং জীবনযাপনের প্রধান উপকরণ কষ্টার্জিত মাল ব্যয় করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁর নির্দেশাবলির প্রতি আনুগত্যের বাস্তব প্রমাণ দিয়ে থাকেন
বলে এ ব্যয়কে সদকা নামে অভিহিত করা হয়েছে।

দান-সদকা বা সাহায্য-সহযোগিতা করা প্রকৃত মোমিনের লক্ষণ। গোপনে-প্রকাশ্যে যে কোনোভাবে দান করা যায়। সব দানেই সওয়াব রয়েছে। দানের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর মানুষের মাঝে রিজিকের ভারসাম্যতা রক্ষা করেন। বিনিময়ে প্রতিদানও দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা কর; তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির-মিসকিনকে দান করে দাও; তবে আরও বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন।’ (সূরা বাকারা : ২৭১)।

সদকা কাকে বলে : ইসলামি পরিভাষায় দান করাকেই সদকা বলা হয়। সদকা শব্দটি এসেছে আরবি ‘সিদকুন’ থেকে। অর্থ সত্যতা, যথার্থতা। পরিভাষায় সদকা বলা হয় একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে স্বীয় সম্পদ ব্যয় করাকে।

কারণ মানুষের সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু এবং জীবনযাপনের প্রধান উপকরণ কষ্টার্জিত মাল ব্যয় করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁর নির্দেশাবলির প্রতি আনুগত্যের বাস্তব প্রমাণ দিয়ে থাকেন বলে এ ব্যয়কে সদকা নামে অভিহিত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অত্যাবশ্যক এবং ঐচ্ছিক এ উভয় প্রকার দানকেই সদকা বলা হয়েছে। তবে প্রচলিত অর্থে শুধু ঐচ্ছিক নফল দানকেই সদকা বলা হয়ে থাকে। সদকার প্রকার : সদকা দুই প্রকার। ১. সাধারণ সদকা। ২. সদকায়ে জারিয়া। গরিব-দুঃখীকে টাকা-পয়সা দান করা, ভালো ব্যবহার করা সাধারণ সদকার অন্তর্ভুক্ত।

আর সদকায়ে জারিয়া বলা হয় ওইসব সৎকর্মকে, যেগুলোর কল্যাণকামিতা স্থায়ী হয়। এর মধ্যে সর্বাগ্রে হচ্ছে দ্বীনি ইলেম শিক্ষা দান, দ্বীনি বইপুস্তক রচনা ও প্রকাশ করে সর্বসাধারণের মধ্যে ইলেম পৌঁছানো। কারণ দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে মানবসন্তানের জন্য সর্বাধিক কল্যাণকর বিষয় হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে, তাঁর বিধিবিধানের সঙ্গে এবং রাসুলের সঙ্গে পরিচিতি লাভ। এক ব্যক্তি অন্যকে যদি দ্বীনি ইলেম শিক্ষা দেন; তবে সে ব্যক্তি নিজে আমল করবে এবং প্রত্যক্ষভাবেই হোক বা পরোক্ষভাবেই হোক পরবর্তী কাউকে না কাউকে শিক্ষা দেবে। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত এ সৎ কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) ওই ব্যক্তিকে সর্বাপেক্ষা বড় দাতারূপে আখ্যায়িত করেছেন, যিনি পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর ইলেম অন্যদের শিক্ষা দেন। তার পরের স্থান মসজিদ, এতিমখানা, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট, সেতু-পুকুর প্রভৃতি গণকল্যাণমূলক খাতে দান করা। এসবের দ্বারা অনেক বেশি লোক উপকৃত হন এবং উপকারটুকু দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ব্যতীত সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান অথবা সৎকর্মশীল সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম : ১৬৩১)। ইমাম নববি (রহ.) এ হাদিসের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘সদকায়ে জারিয়া হলো ওয়াক্ফ।’ (শরহে মুসলিম : ১১/৮৫)।

পবিত্র কোরআনে দান-সদকার কথা : অসংখ্য আয়াতে দান-সদকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তারা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, তারা কী ব্যয় করবে? জানিয়ে দিন, যা তোমাদের প্রয়োজনাতিরিক্ত।’ (সূরা বাকারা : ২১৯)।

আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দানখয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মতো, যে নিজের ধনসম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মতো, যার ওপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর ওপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ওই বস্তুর কোনো সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।’ (সূরা বাকারা : ২৬৪)।

অপর আয়াতে বলেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধনসম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্য তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মতো, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত না-ও হয়; তবে হালকা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন।’ (সূরা বাকারা : ২৬৫)। অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এবং তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে, ভিক্ষুক এবং বঞ্চিতদের জন্য।’ (সূরা মাআরিজ : ২৪-২৫)।

অভাবী অথচ লজ্জায় কারও কাছে হাত পাতে না তারা সবাই বঞ্চিতদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ আরও এরাশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মতো, যা থেকে সাতটি শিষ জন্মায়। আর প্রতিটি শিষে ১০০ করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারা : ২৬১)।

হাদিসে দান-সদকার কথা : অসংখ্য হাদিসেও দান-সদকার ফজিলত তুলে ধরা হয়েছে। গোপনে দান করার ব্যাপারে হাদিসে অধিক ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। গোপনে দানকারী কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে। নবী (সা.) বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে সাত শ্রেণির মানুষ আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে। তাদের মধ্যে একশ্রেণি হচ্ছে এমন যে তাদের ‘এক ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কী দান করে বাম হাত জানতেই পারে না।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

দান-সদকা গোনাহ মাফ করে ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়। নবী (সা.) বলেন, ‘হে কাব বিন উজরা! নামাজ (আল্লাহর) নৈকট্য দানকারী, রোজা ঢালস্বরূপ এবং দান-সদকা গোনাহ মিটিয়ে ফেলে, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।’ (আবু ইয়ালা, সনদ সহিহ)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

বর্তমান যুগে অনেক মানুষ এমন আছে, যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দান করে এবং তা মানুষকে দেখানোর জন্য। মানুষের ভালোবাসা নেওয়ার জন্য। মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য। মানুষের মাঝে গর্ব-অহংকার প্রকাশ করার জন্য। অনেকে দুনিয়াবি স্বার্থ সিদ্ধির জন্যও দান করে থাকে। যেমন চেয়ারম্যান বা এমপি নির্বাচনে জেতার উদ্দেশ্যে দান করে।

কিন্তু দান যদি একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয়, তা দ্বারা হয়তো দুনিয়াবি কিছু স্বার্থ হাসিল হতে পারে; কিন্তু আখেরাতে এর কোনো প্রতিদান পাওয়া যাবে না। হাদিসে কুদসিতে নবী (সা.) বলেন, ‘আমি শিরককারীদের শিরক থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি কোনো আমল করে তাতে আমার সঙ্গে অন্যকে শরিক করবে, তাকে এবং তার শিরকির আমলকে আমি পরিত্যাগ করব।’ (মুসলিম)।

লোক দেখানো দান-সদকার শাস্তি: যারা মানুষের প্রশংসা নেওয়ার উদ্দেশ্যে দান করবে, তাদের দ্বারাই জাহান্নামের আগুনকে সর্বপ্রথম প্রজ্বলিত করা হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সর্বপ্রথম তিন ব্যক্তিকে দিয়ে জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্বলিত করা হবে। তাদের মধ্যে (সর্ব প্রথম বিচার করা হবে) সেই ব্যক্তির, আল্লাহ যাকে প্রশস্ততা দান করেছিলেন, দান করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের অর্থসম্পদ। তাকে সম্মুখে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর (আল্লাহ) তাকে প্রদত্ত নেয়ামত পরিচয় করাবেন। সে তা চিনতে পারবে।

তখন তিনি প্রশ্ন করবেন, কী কাজ করেছ এ নেয়ামত দ্বারা? সে জবাব দেবে, যে পথে অর্থ ব্যয় করলে আপনি খুশি হবেন, এ ধরনের সব পথে আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অর্থসম্পদ ব্যয় করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এরূপ করেছ এ উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে বলা হবে দানবীর। আর তা তো বলাই হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হবে। তখন তাকে মুখের ওপর উপুড় করে টেনেহিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম)।