হাওর বার্তা ডেস্কঃ গত কয়েক বছরে ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ করায় দেশে গরুর খামারি বেড়েছে। বেড়েছে গরু উৎপাদনও। এ বছর উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বন্যার পরও কোরবানি পশুর বাজারে কোনো প্রভাব পড়ছে না। কারণ দেশেই উৎপাদিত হয়েছে রেকর্ড সংখ্যক গরু ও অন্যান্য গবাদিপশু। ফলে কোরবানি ঈদে গরুর জোগানে যে সংকটের আশঙ্কা করা হয়েছিল সে আশঙ্কা আর থাকছে না বলেই জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও খামারিরা বলছেন, এক বছরের ব্যবধানেই দেশের খামারগুলোতে কোরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা বেড়েছে ৭০ হাজার ৮৯৪টি। ২০১৮ সালের এ সময় ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯৯১টি খামারে কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গরুর সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ১৪ হাজার ২৪৮টি। এ বছর এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ১৪২-এ। গত বছরের চেয়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৫টি খামার বেড়ে এ বছর ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৬টিতে দাঁড়িয়েছে। এসব খামারের সিংহভাগই গড়ে উঠেছে ব্যক্তি উদ্যোগে। জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি পশু খামার রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে গবাদিপশুর খামার বাড়ছে। চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এসব খামার গড়ে উঠেছে। গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া মিলিয়ে গবাদিপশু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে ১২তম।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, ২০১৯ সালে এখন পর্যন্ত বৈধ পথে ভারত থেকে মাত্র ৯২ হাজার গরু এসেছে। দেশের কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ। কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মজুদ রয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ। তার মধ্যে সারা দেশে কোরবানিযোগ্য ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু ও মহিষ, ৭২ লাখ ছাগল ও ভেড়া এবং ৬ হাজার ৫৬৩টি অন্যান্য পশুর প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারি হিসাবে গত কোরবানি ঈদে দেশে পশু জবাই হয়েছিল এক কোটি ১৫ লাখ। এর মধ্যে ছাগল-ভেড়া ছিল ৭১ লাখ এবং গরু-মহিষ ৪৪ লাখ। এবার সেই হিসেবে গত বছরের চেয়ে তিন লাখেরও বেশি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফলে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানি গরুর জন্য আর ভারতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না।
সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে আসন্ন ঈদুল আজহা নিয়ে কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট সুস্থ-সবল গবাদি পশুর হাটের ব্যবস্থাপনা, ভেটেরিনারি সার্ভিসসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অধিদফতরের কর্মকর্তা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, পুলিশ, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিজিবি থেকে জানানো হয়, ২০১৩ সাল নাগাদ ভারত থেকে বৈধ পথে গরু আমদানির সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ। বর্তমানে সে সংখ্যা নেমে এসেছে ৯২ হাজারে।
নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে ক্রমাগত ভারতীয় গরু আমদানি কমে যেতে থাকে। বৈধ পথ ছাড়াও যেন সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে গরু ঢুকতে না পারে সেজন্য বিজিবিও কঠোর অবস্থান নেয়। এতে দেশে গরু উৎপাদনের ক্ষেত্র বিস্তৃত হতে থাকে। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে গত ৬-৭ বছরে দেশে গড়ে উঠেছে বিপুল গরুর খামার। যেখানে বিভিন্ন উন্নত জাতের গরু উৎপাদন হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন খামারিরা। প্রতিবছরের মতো এ বছরও সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যেন একটাও গরু ঢুকতে না পারে সেজন্য সতর্ক রয়েছে বিজিবি।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. হিরেশ রঞ্জন বলেন, ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ হওয়ায় চাষি ও খামারিরা পশুর দাম বেশি পাচ্ছেন। ফলে পশু পালনে তাদের আগ্রহও বাড়ছে। সরকার এ বিষয়ে নানা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। কোরবানির ঈদে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বেশি পশু মজুদ আছে। ভারত থেকে কোরবানির পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। দেশের খামারিদের বাঁচাতে বাইরে থেকে একটা গরুও দেশে প্রবেশ করতে পারবে না।
এবার বন্যার কারণে অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, গরুর সবচেয়ে বৃহৎ সরবরাহকারী অঞ্চল উত্তরবঙ্গ থেকে গরু আসবে না হাটবাজারগুলোতে। ফলে গরুর জোগানে টান পড়বে। এতে বাজারে গরুর দাম বেড়ে যাবে। কিন্তু এ আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছেন গরু ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে হাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক বছরে যে হারে সারা দেশে খামার বেড়েছে এবং যে পরিমাণ গরু উৎপাদিত হয়েছে তাতে উত্তরবঙ্গ থেকে গরু না আসলেও চলবে।
ঢাকার গাবতলি পশুহাটের পরিচালক ছানোয়ার হোসেন গরু বা অন্যান্য কোরবানি পশুর জোগানে সংকটের কোনো আশঙ্কাই করছেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ‘গত বছরও ভারত থেকে গরু আসেনি। কিন্তু আমাদের হাট থেকে লাখের ওপর গরু অবিক্রীত অবস্থায় ফেরত গেছে। গত বছরের চেয়ে এবার আরো বেশি গরু সংগ্রহে রয়েছে আমাদের। তাহলে সংকট কোথা থেকে হবে। দেশে এখন হাজার হাজার খামার। শুধু বছিলা থেকে গাতবলী পর্যন্ত আধা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে ১৫-১৬টি খামার।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (খামার) ড. এবিএম খালেদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে খামারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে ভারত থেকে গরু আমদানি কমে আসছে। আমরা আশা করছি, অচিরেই ভারত থেকে গরু আমদানির সংখ্যা শূন্যের কোঠায় পৌঁছাবে।