ঢাকা ১০:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জে এ পর্যন্ত মোট ৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত, ভর্তি ৪১ জন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৭:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০১৯
  • ২২১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ঠিক কতজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে তা জানা নেই হাসপাতালের উপ-পরিচালকের। তাকে একাধিকবার ফোন করেও মেলেনি কোনো তথ্য।

সন্ধ্যার পর হাসপাতালে গিয়ে ফোন করলে জানান, ‌‘অফিস ছাড়া কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন না!’ এটি কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু স্বাস্থ্য সেবার নমুনা। এ অবস্থায় জেলায় ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে শনিবারের (২৭ জুলাই) আগে জেলার সিভিল সার্জন জানতেনই না যে কিশোরগঞ্জে কোনো ডেঙ্গু রোগী আছে! ওইদিন পর্যন্ত “জেলায় কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী নেই” বলে প্রতিদিন নিয়মিত ঢাকায় রিপোর্ট পাঠিয়েছেন।

অথচ জুলাই মাসের প্রথম থেকে শনিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত শুধুমাত্র জেলা হাসপাতালেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ৬৫ জন। এখনও ভর্তি আছেন ২৭ জন। জানা গেছে শনিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত এ হাসপাতাল থেকে সিভিল সার্জনের কাছে ডেঙ্গু বিষয়ে কোনো তথ্যই জানানো হয়নি।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে এ পর্যন্ত মোট ৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। জেলা সদরসহ দুটি হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছেন কমপক্ষে ৮০ জন। হাসপাতালে এখনও ভর্তি আছেন ৪১ জন। প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। একজন রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রোববার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। এর আগে আরও ৫ জনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে বলেও জানা যায়।

এদিকে কিশোরগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মশারি ছাড়াই একই বিছানায় অন্য রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার সিভিল সার্জন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

জেলা সদরের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, এখানে অন্য রোগীর সঙ্গে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্তদের। ফলে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

বেশিরভাগ রোগী জানিয়েছেন তারা ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ব্যাপারে সতর্কতাম‚ লক ব্যবস্থা না নেয়ায় এ জ্বর জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

হাসপাতালের এমন পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্তরা। অনেকে সেখানে ভর্তি হয়েও প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে চলে যাচ্ছেন বাড়িতে।

হাসপাতলের উপ-পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়ার কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি জানান, তার কাছে সঠিক কোন তথ্য নেই। একজন ব্রাদারের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

সন্ধ্যার পর একটি ওয়ার্ডে গিয়ে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। যাদের প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গেই একজন করে অন্য রোগী। কারোরই মশারি নেই। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উপ-পরিচালক ডা. রাজিয়া সুলতানাকে ফোন দেয়া হলে তিনি জানান ‘অফিস ছাড়া আমি কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলি না” ডেঙ্গু রোগীর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ- বলার পর তিনি তার অফিসে আসতে বলেন।

পরে রাতেই হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. রমজান মাহমুদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘জুলাইয়ের প্রথম থেকে শনিবার পর্যন্ত হাসপাতলে ভর্তি আছেন ২৭ জন ডেঙ্গু রোগী। চিকিৎসা নিয়েছেন আরও অনেকেই। তাদের মধ্যে ৫ জনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, “স্থান সংকুলান না হওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের সাধারণ ওয়ার্ডে অন্য রোগীর সঙ্গে রাখা হচ্ছে। অচিরেই ডেঙ্গু আক্রান্তদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে।”

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জে আধুনিক সদর হাসপাতালে ২৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ৩৭ জন।

এছাড়া জেলার বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে ভর্তি আছেন আরও ১৩ জন। মশারি ছাড়া অন্য রোগীর সঙ্গে একই বিছানায় ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, “হাসপাতাল থেকে আমাকে কোনো ডেঙ্গু রোগীর তথ্য জানানো হয়নি। তাই এ পর্যন্ত প্রতিদিন ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা শ‚ন্য বলে ঢাকায় রিপোর্ট পাঠাচ্ছিলাম।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কিশোরগঞ্জে এ পর্যন্ত মোট ৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত, ভর্তি ৪১ জন

আপডেট টাইম : ০৪:৪৭:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ঠিক কতজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে তা জানা নেই হাসপাতালের উপ-পরিচালকের। তাকে একাধিকবার ফোন করেও মেলেনি কোনো তথ্য।

সন্ধ্যার পর হাসপাতালে গিয়ে ফোন করলে জানান, ‌‘অফিস ছাড়া কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন না!’ এটি কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু স্বাস্থ্য সেবার নমুনা। এ অবস্থায় জেলায় ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে শনিবারের (২৭ জুলাই) আগে জেলার সিভিল সার্জন জানতেনই না যে কিশোরগঞ্জে কোনো ডেঙ্গু রোগী আছে! ওইদিন পর্যন্ত “জেলায় কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী নেই” বলে প্রতিদিন নিয়মিত ঢাকায় রিপোর্ট পাঠিয়েছেন।

অথচ জুলাই মাসের প্রথম থেকে শনিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত শুধুমাত্র জেলা হাসপাতালেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ৬৫ জন। এখনও ভর্তি আছেন ২৭ জন। জানা গেছে শনিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত এ হাসপাতাল থেকে সিভিল সার্জনের কাছে ডেঙ্গু বিষয়ে কোনো তথ্যই জানানো হয়নি।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে এ পর্যন্ত মোট ৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। জেলা সদরসহ দুটি হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছেন কমপক্ষে ৮০ জন। হাসপাতালে এখনও ভর্তি আছেন ৪১ জন। প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। একজন রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রোববার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। এর আগে আরও ৫ জনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে বলেও জানা যায়।

এদিকে কিশোরগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মশারি ছাড়াই একই বিছানায় অন্য রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার সিভিল সার্জন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

জেলা সদরের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, এখানে অন্য রোগীর সঙ্গে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্তদের। ফলে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

বেশিরভাগ রোগী জানিয়েছেন তারা ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ব্যাপারে সতর্কতাম‚ লক ব্যবস্থা না নেয়ায় এ জ্বর জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

হাসপাতালের এমন পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্তরা। অনেকে সেখানে ভর্তি হয়েও প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে চলে যাচ্ছেন বাড়িতে।

হাসপাতলের উপ-পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়ার কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি জানান, তার কাছে সঠিক কোন তথ্য নেই। একজন ব্রাদারের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

সন্ধ্যার পর একটি ওয়ার্ডে গিয়ে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। যাদের প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গেই একজন করে অন্য রোগী। কারোরই মশারি নেই। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উপ-পরিচালক ডা. রাজিয়া সুলতানাকে ফোন দেয়া হলে তিনি জানান ‘অফিস ছাড়া আমি কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলি না” ডেঙ্গু রোগীর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ- বলার পর তিনি তার অফিসে আসতে বলেন।

পরে রাতেই হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. রমজান মাহমুদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘জুলাইয়ের প্রথম থেকে শনিবার পর্যন্ত হাসপাতলে ভর্তি আছেন ২৭ জন ডেঙ্গু রোগী। চিকিৎসা নিয়েছেন আরও অনেকেই। তাদের মধ্যে ৫ জনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, “স্থান সংকুলান না হওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের সাধারণ ওয়ার্ডে অন্য রোগীর সঙ্গে রাখা হচ্ছে। অচিরেই ডেঙ্গু আক্রান্তদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে।”

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জে আধুনিক সদর হাসপাতালে ২৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ৩৭ জন।

এছাড়া জেলার বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে ভর্তি আছেন আরও ১৩ জন। মশারি ছাড়া অন্য রোগীর সঙ্গে একই বিছানায় ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, “হাসপাতাল থেকে আমাকে কোনো ডেঙ্গু রোগীর তথ্য জানানো হয়নি। তাই এ পর্যন্ত প্রতিদিন ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা শ‚ন্য বলে ঢাকায় রিপোর্ট পাঠাচ্ছিলাম।”