ঢাকা ১২:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অল্প সময়ের ব্যবধানে ৩ রাষ্ট্রপতির ইন্তিকাল: যে বার্তা দিয়ে গেল রাষ্ট্রপ্রধানদের

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৩:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০১৯
  • ২৫০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনেক আগে ইমাম আহমদ রহ. বলেছেন, ‘আমার এবং তাদের মাঝে পার্থক্য  জানাযা’। মাস খানেকের ব্যবধানে তিন জন রাষ্ট্রপতি ইন্তিকাল করেছেন। তিন জনই মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপতি। তাদের মৃত্যুতে নেট দুনিয়ার মানুষ যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাতে ইমাম আহমদ রহ. এর কথাটা সত্য হয়ে ওঠেছে।

গত ২৫ জুলাই ২০১৯ তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেজি সাইদ এসেবসি মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তিউনিসিয়াসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে তার মৃত্যুর খবর বেশ ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ‘ঢোল পিটিয়ে’ ‘বিউগল’ বাজিয়ে তার ‘শেষ কৃত্যানুষ্ঠানের’ লাইভ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছে। ট্রাম্প তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টসহ আরও আন্তর্জাতিক নেতৃবর্গ তার শেষ কৃত্যানুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেছেন।

কিন্তু বিবিসির ফেইসবুক পাতায় দেখা গেল তাকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে অনেক কষ্ট। বিশেষত ইসলামের প্রতি তার যে বিরূপ আচরণ তাতে তার মৃত্যুতে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

প্রেসিডেন্ট বেজি সাইদ এসেবসি তিউনিসিয়ার প্রধান সেকুলার রাজনীতিক দল নেদায়ে তুনস-এর প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেজি সাইদ এসেবসি জয়লাভ করেন। শুধু ইসলামের প্রতি বিরুপ মনোভাবের অভিযোগই নয়, তার রাজনৈতিক জীবনের আরও অনেক অন্ধকার দিক রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ক্ষতিসাধন করে তিনি যে সকল আইন প্রণয়ন করেছেন, তার অন্যতম হল, তিউনিসিয়ায় কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে সম্পত্তিতে নারীপুরুষের সমান বন্টন আইন পাশ করা হয়েছে। কাফেরদের সাথে মুসলিম নারীদের বিবাহকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। সবই করা হয়েছে সংবিধানের নামে। এই প্রেসিডেন্ট সংবিধানকে কুরআনের উপর মর্যাদা দিতেন বলে জানা গেছে।

তাই মৃত্যুর পর অনেককেই বলতে দেখা গেছে, তার কবরে যেন সংবিধান পাঠ করা হয়। তার কাফনের সাথে যেন সংবিধানের একটি কপি দিয়ে দেওয়া হয়।

গত ১৪ জুলাই ইন্তিকাল করেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল এইচ এম এরশাদ। তাকেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। কয়েকদিন ব্যপী বিভিন্ন জায়গায় তার ‘জানাযা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু তার মৃত্যুতেও সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া।

জেনারেল এরশাদের মৃত্যুর খবর জানিয়ে অনেক মানুষ তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেছেন। আবার অনেক মানুষ তাঁর শাসনামলের নানা দিক তুলে ধরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যতিক্রম দেখা গেছে ড. মুহাম্মদ মুরসির মৃত্যুতে। ১৭ জুন ২০১৯ জেলখানায় অত্যন্ত করুণভাবে মৃত্যু বরণ করেন মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইখওয়ানের নেতা মুহাম্মাদ মুরসি। বিশ্বনেতারা তার মৃত্যুতে  এক প্রকার চুপ মেরে ছিলেন। শোক বার্তাও প্রকাশ করেননি।

মিসরের গণমাধ্যমগুলোতে খুব সাধারণ ভাষায় ‘অভিযুক্ত মুরসির ইন্তিকাল’ শিরোনাম দিয়ে খবর ছাপা হয়েছে। কারাগারের ভেতর গোসল দেওয়া হয়েছে মুরসিকে। তারপর পরিবারের কয়েকজন সদস্যের উপস্থিতিতে জানাযা সম্পন্ন করে কায়রোর একটি কবরস্তানে দাফন করা হয়েছে। সবই করা হয়েছে কঠোর গোপনীয়তার ভেতর দিয়ে।

কিন্তু শাসকবর্গের এত অবহেলার পরও মুরসির মৃত্যুতে দেখা গেল গোটা মুসলিম বিশ্ব মুরসির শোকে ভেঙ্গে পড়েছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে তিন জন রাষ্ট্রপতির ইন্তিকাল করেছেন কিন্তু তিন জনের প্রতি সাধারণ মানুষের যে প্রতিক্রিয়া, তা কি মুসলিম বিশ্বের বর্তমান শাসকদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে!

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

অল্প সময়ের ব্যবধানে ৩ রাষ্ট্রপতির ইন্তিকাল: যে বার্তা দিয়ে গেল রাষ্ট্রপ্রধানদের

আপডেট টাইম : ১১:১৩:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনেক আগে ইমাম আহমদ রহ. বলেছেন, ‘আমার এবং তাদের মাঝে পার্থক্য  জানাযা’। মাস খানেকের ব্যবধানে তিন জন রাষ্ট্রপতি ইন্তিকাল করেছেন। তিন জনই মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপতি। তাদের মৃত্যুতে নেট দুনিয়ার মানুষ যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাতে ইমাম আহমদ রহ. এর কথাটা সত্য হয়ে ওঠেছে।

গত ২৫ জুলাই ২০১৯ তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেজি সাইদ এসেবসি মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তিউনিসিয়াসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে তার মৃত্যুর খবর বেশ ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ‘ঢোল পিটিয়ে’ ‘বিউগল’ বাজিয়ে তার ‘শেষ কৃত্যানুষ্ঠানের’ লাইভ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছে। ট্রাম্প তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টসহ আরও আন্তর্জাতিক নেতৃবর্গ তার শেষ কৃত্যানুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেছেন।

কিন্তু বিবিসির ফেইসবুক পাতায় দেখা গেল তাকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে অনেক কষ্ট। বিশেষত ইসলামের প্রতি তার যে বিরূপ আচরণ তাতে তার মৃত্যুতে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

প্রেসিডেন্ট বেজি সাইদ এসেবসি তিউনিসিয়ার প্রধান সেকুলার রাজনীতিক দল নেদায়ে তুনস-এর প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেজি সাইদ এসেবসি জয়লাভ করেন। শুধু ইসলামের প্রতি বিরুপ মনোভাবের অভিযোগই নয়, তার রাজনৈতিক জীবনের আরও অনেক অন্ধকার দিক রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ক্ষতিসাধন করে তিনি যে সকল আইন প্রণয়ন করেছেন, তার অন্যতম হল, তিউনিসিয়ায় কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে সম্পত্তিতে নারীপুরুষের সমান বন্টন আইন পাশ করা হয়েছে। কাফেরদের সাথে মুসলিম নারীদের বিবাহকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। সবই করা হয়েছে সংবিধানের নামে। এই প্রেসিডেন্ট সংবিধানকে কুরআনের উপর মর্যাদা দিতেন বলে জানা গেছে।

তাই মৃত্যুর পর অনেককেই বলতে দেখা গেছে, তার কবরে যেন সংবিধান পাঠ করা হয়। তার কাফনের সাথে যেন সংবিধানের একটি কপি দিয়ে দেওয়া হয়।

গত ১৪ জুলাই ইন্তিকাল করেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল এইচ এম এরশাদ। তাকেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। কয়েকদিন ব্যপী বিভিন্ন জায়গায় তার ‘জানাযা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু তার মৃত্যুতেও সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া।

জেনারেল এরশাদের মৃত্যুর খবর জানিয়ে অনেক মানুষ তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেছেন। আবার অনেক মানুষ তাঁর শাসনামলের নানা দিক তুলে ধরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যতিক্রম দেখা গেছে ড. মুহাম্মদ মুরসির মৃত্যুতে। ১৭ জুন ২০১৯ জেলখানায় অত্যন্ত করুণভাবে মৃত্যু বরণ করেন মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইখওয়ানের নেতা মুহাম্মাদ মুরসি। বিশ্বনেতারা তার মৃত্যুতে  এক প্রকার চুপ মেরে ছিলেন। শোক বার্তাও প্রকাশ করেননি।

মিসরের গণমাধ্যমগুলোতে খুব সাধারণ ভাষায় ‘অভিযুক্ত মুরসির ইন্তিকাল’ শিরোনাম দিয়ে খবর ছাপা হয়েছে। কারাগারের ভেতর গোসল দেওয়া হয়েছে মুরসিকে। তারপর পরিবারের কয়েকজন সদস্যের উপস্থিতিতে জানাযা সম্পন্ন করে কায়রোর একটি কবরস্তানে দাফন করা হয়েছে। সবই করা হয়েছে কঠোর গোপনীয়তার ভেতর দিয়ে।

কিন্তু শাসকবর্গের এত অবহেলার পরও মুরসির মৃত্যুতে দেখা গেল গোটা মুসলিম বিশ্ব মুরসির শোকে ভেঙ্গে পড়েছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে তিন জন রাষ্ট্রপতির ইন্তিকাল করেছেন কিন্তু তিন জনের প্রতি সাধারণ মানুষের যে প্রতিক্রিয়া, তা কি মুসলিম বিশ্বের বর্তমান শাসকদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে!